Year End Special

খাবারের প্রতি গভীর ভালবাসা আবার মানুষকে আনবে পান-ভোজনশালায়

নিয়মিত ব্যবধানে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় ডিনার করতে যাওয়া ছিল সামাজিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ।  লকডাউনে যা পুরো উধাও হয়ে গিয়েছিল। এর বদল ঘটা জরুরি।

Advertisement

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০০
Share:

যাত্রা জারি থাকুক। কিপ ওয়াকিং…।

Advertisement

শুরুতেই আন্তরিক ভাবে আশা করি, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই অতিমারি শেষ হোক। আমাদের যাত্রা আবার শুরু হোক। আর সে যাত্রা চলতে থাকুক। চলতেই থাকুক।

করোনার বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে সঙ্গেই নজিরবিহীন ভাবে আমাদের অনেককে চাকরি খোয়াতে হয়েছে। তার ফলে একটা মানসিক হতাশা তো জন্মেছেই। তার থেকে উত্তরণ ঘটা উচিত দ্রুত। হসপিটালিটি ক্ষেত্র বা হোটেল-রেস্তরাঁ-পানশালা শিল্প বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। এই শিল্পে পৃথিবী জুড়ে কাজ করেন প্রায় ৭৩০ কোটি লক্ষ মানুষ! অভাবনীয়।

Advertisement

নিয়মিত ব্যবধানে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে রেস্তরাঁয় ডিনার করতে যাওয়া ছিল সামাজিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ। যা লকডাউনে পুরো উধাও হয়ে গিয়েছিল। অভ্যস্ত হতে হয়েছিল নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ন্যূনতম সামগ্রী নিয়ে মোটামুটি সাধারণ খাবারদাবারে।

রেস্তরাঁগুলো আবিষ্কার করল হোম ডেলিভারির বিপুল সম্ভাবনা।

লকডাউনের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতেই জিনিসপত্র মিলতে শুর করল। তবে হসপিটালিটি ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হয়ে গেল শুধুমাত্র ডেলিভারিতে। এই কঠিন সময়ে আশপাশের মানুষগুলোর মধ্যে দেখা গেল নানা প্রতিভা। তাঁরা আবিষ্কার করে ফেললেন নিজের ভিতরের শেফকে। যা দেখে আরও অনেকে ইন্ধন পেলেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। অল্পবয়সীরা, যাঁরা কোনওদিন বাড়ির রান্নাঘরটারও খোঁজ রাখতেন না ,তাঁরাও ঢুঁ মারলেন রান্নার দুনিয়ায়। বিভিন্ন অ্যাপ দেখে নানা পদ তৈরি করলেন, খুঁজে বার করে ফেললেন নিজেদের ভিতরের সুপ্ত প্রতিভা। সেখান থেকে জন্ম নিল নতুন শব্দবন্ধ— ‘হোম শেফ’। রোজকার রুটিন হয়ে দাঁড়াল বাচ্চাদের জন্য মিষ্টি বা কেক তৈরি করা বা জাপানি শেফ হয়ে বানিয়ে ফেলা সুশি’জ বা শামি’জ।

ছোঁয়াচ ছাড়া হোম ডেলিভারির জন্য রেস্তরাঁগুলোতেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হতে লাগল স্বাস্থ্যকর খাবার। আমরাও শুধু রেস্তরাঁর ভিতর নয়, অফিস এবং কর্মীদের থাকার জায়গাগুলোতেও প্রতিদিন ভাইিরাস-বিরোধী অভিযান শুরু করলাম। পাশাপাশি, আইএসও স্বীকৃত কিচেন হওয়া সত্ত্বেও কাঁচামালগুলোকে পরিষ্কার করতে শুরু করে দিলাম ডাইভার্সি-র সুমা-২ জীবাণুনাশক দিয়ে। গ্লাভস, টুপি পরে তৈরি হলেন ফ্রন্ট এবং ব্যাক অফিসের কর্মীরা। হোম ডেলিভারির প্যাকেট হোক বা হোটেলে আসা গ্রাহক- তাপমাত্রা মাপা শুরু হল। গ্রাহককে আশ্বস্ত করলাম, তাঁর খাবারটা শুধু তাঁরই জন্য। অন্য কারও হাতের ছোঁয়া তাতে লাগেনি।

একটা নতুন প্রবণতা তৈরি হল। একটা নতুন ঝোঁক।

গ্রাহকরা খোঁজ করতে শুরু করলেন, কী ভাবে নিজে রান্না না করেও সহজ উপায়ে খাবার পাওয়া যায়। রেস্তরাঁগুলো আবিষ্কার করল হোম ডেলিভারির বিপুল সম্ভাবনা। গবেষণায় দেখা গেল, ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে অর্ডার দিয়ে খাবার কেনার বাজার পৌঁছে যাবে ১,৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। বিশ্বে এবং ভারতে রেস্তরাঁগুলি কিচেন এবং বসার পরিসর ন্যূনতম করে দিল। এমনকি, অনেকে তুলেই দিল কিচেন। জন্ম নিল ‘ক্লাউড কিচেন’ (অদৃশ্য কিচেন)। গবেষণা বলছে, এখন বিশ্বে ক্লাউড কিচেন মাত্র মাত্র ১৩ শতাংশ। কিন্তু ২০৩০ সালে তার মূল্য বেড়ে হতে চলেছে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার।

অতিথিরা তাঁদের প্রিয় রেস্তরাঁ বা পানশালায় ফিরবেনই।

আমরাও একটা ‘মাস্টার ক্লাউড কিচেন’ তৈরি করেছি। সারা ভারত জুড়েই ক্লাউড কিচেন বাড়়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রেস্তরাঁগুলো বুঝতে পেরেছে, এটা শ্রমিকের খরচ কমানো, ডেলিভারি বাড়ানো এবং আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোর এক বিরাট রাস্তা। সুইগি, জোমাটোর মতো ফুড ডেলিভারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নামী রেস্তরাঁগুলোও ঢুকে পড়েছে হোম ডেলিভারিতে। অনেকে তৃতীয় কোনও ক্যুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তাতে কিছুটা খরচ বেশি হল বটে, কিন্তু নিজেদের ব্র্যান্ডের স্বকীয়তা ধরে রাখতে সেই অতিরিক্ত ব্যয় বহনে কেউ দ্বিধা করেনি।

ধীরে ধীরে জীবন যত ‘নিউ নর্মাল’-এ প্রবেশ করেছে, তত গুরুত্ব হারাতে শুরু করেছে বাড়ির রান্না। কদর বাড়তে শুরু করেছে পেশাদার রান্নার। মানুষের খাবার নিয়ে যেমন জ্ঞান বেড়েছে, তেমন ই বেড়েছে ভাল খাবারের তারিফ করার ঝোঁক। খাবার তৈরি এবং পরিবেশন পর্যন্ত রেস্তরাঁগুলোও আবিষ্কার করেছে নতুন রীতিনীতি।

হসপিটালিটি ক্ষেত্রকে এখনও খানিকটা পথ এগোতে হবে। কিন্তু আশাবাদী হতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে, যে ভাবে মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং ফের উৎসব-অনুষ্ঠানে রেস্তরাঁয় বা পানশালায় যাচ্ছেন, তা আমাদের কাছে আশীর্বাদ। আগের অবস্থায় ফিরে আসার গতি শ্লথ। ঠিকই। কিন্তু অতিথিরা তাঁদের প্রিয় রেস্তরাঁ বা পানশালায় ফিরবেনই। কারণ, কে না জানে, খাবারের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে গভীর। আর আলোচনা জমে এক গ্লাস পানীয়ের সঙ্গেই।

জনি ওয়াকারের বিখ্যাত বাক্য মেনে যাত্রা জারি থাকুক। কিপ ওয়াকিং…।
(লেখক রেস্তরাঁ ব্যবসায়ী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement