মরসুমি ক্যাফে ‘উইন্টার লেন’।
এ বছরের শহরে শীতের একটা প্রাপ্তি যদি হয় স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি কম তাপমাত্রা, তা হলে আর একটা প্রাপ্তি ‘উইন্টার লেন’। দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকার এক চিলতে ‘পপ আপ’ ক্যাফে। বাড়ির সামনে খোলা আকাশের নীচে ফাঁকা উঠোনে ১৪ জনের বসার মতো নতুন আড্ডা দেওয়ার জায়গা।
কী এই ‘পপ আপ’ ক্যাফে? বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ই শুধু এই ক্যাফে চলবে। ‘উইন্টার ক্যাফে’র ক্ষেত্রে যেমন শুধু শীতকাল। ১৮ ডিসেম্বর এই ক্যাফের জন্ম, বন্ধ হয়ে যাবে ১৮ মার্চ। কী করে এমন ধরনের একটা ক্যাফে খোলার কথা মাথায় এল? অন্যতম উদ্যোক্তা পারমিতা কারাতি বললেন, “বিদেশে, বিশেষ করে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় এই ধরনের ক্যাফের চল আছে। খোঁজ নিয়ে দেখি, পূর্ব ভারতে এমন ক্যাফে একেবারেই নেই। তখনই ঠিক করি এ রকম নতুন একটা ক্যাফে তৈরি করব।’’
পারমিতা এবং তাঁর বন্ধু মিলে তৈরি করেছেন এই মরসুমি ক্যাফে। বাকি ক্যাফের থেকে আর কোথায় আলাদা এই ক্যাফে? পারমিতার কথায়, ‘‘এখানে যা পাওয়া যায়, সব বাড়িতে বানানো। বাড়ির মা, মাসিরা ক্যাফের জন্য রাঁধেন। আমি নিজেও রাঁধি।’’
বালিগঞ্জের অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে শীতের সন্ধেবেলা কোনও পেটুক বাঙালি যদি হাজির হন এই ক্যাফে-কাম রেস্তঁরায়, কী খাবেন তাঁরা? গর্বিত হাসি হেসে পারমিতা জানালেন কড়াইসুঁটির কচুরি। ‘‘এক দম বাড়ির তৈরি কচুরি। আর মুখমিষ্টি করতে চাইলে ক্যারামেল কাস্টার্ড,’’ তাঁর পরামর্শ। তবে ঘরোয়া বাঙালি পদের সঙ্গে সঙ্গত দেওয়ার জন্য পর্ক রিবস, মিট বলসের সঙ্গে মোৎজারেল্লা, শেফার্ডস পাইয়ের মতো ধোঁয়া ওঠা গরমাগরম ডিশও তাঁরা সাজিয়ে দিতে পারেন টেবিলে। আর খরচ? ‘‘দু’জনে এলে চা-কফির সঙ্গে পেটভরা খাবার খেতে ৫০০-৬০০ টাকাই যথেষ্ট’’, বলছেন ‘উইন্টার ক্যাফ’-এর এই উদ্যোক্তা।
বাঙালি খাবারের পাশে আছে কন্টিনেন্টাল পদও।
কোভিডের কারণে শহরবাসী যখন রেস্তঁরায় যেতে ভয় পাচ্ছেন, তখন খোলা আকাশের নীচে এই ১৪টা বসার জায়গা বেশির ভাগ সন্ধেতেই ভর্তি। ‘‘দার্শনিকরা বলেন, মানুষের মনে পৌঁছতে গেলে, পাকস্থলী হয়ে যেতে হয়। এই কথাটা কলকাতার মানুষের জন্য বেশি করে সত্যি। কোভিডের কারণে বাড়িতে আটতে থেকে বাঙালির যখন দমবন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন ‘উইন্টার ক্যাফে’ তাঁদের খুব পছন্দ হয়েছে’’, জবাব পারমিতার।
শুধু শীতেই কেন? অন্য ঋতুতে বাঙালির মন ছুঁতে চান না তাঁরা? ‘‘স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি কম তাপমাত্রা তো শুধু শীতেই পাবেন। গরমে পাবেন না বলেই তো শীত এত পছন্দের। ‘উইন্টার ক্যাফে’ও তাই। বছরের বাকি সময়টা একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগুক না এই উঠোনটা’’, হাসি পারমিতার মুখে। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও, আবার ফিরে আসবেন তাঁরা, এই শীতের গলিতে।