ওয়াইফ সোয়াপিং বিষয়টা সাধারণ ভাবে আমরা যা জানি তার মানেটা হয়, সম্মতি সহকারে একে অন্যের সঙ্গী বদল। ২০১৩ সালে নৌসেনাদের বউ বদলের একটি অভিযোগ সামনে আসে। তখন বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে অভিযোগটির তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়ায় বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে আইনের দ্বারস্থ হতে হয়েছে সেখানে কিন্তু একটি অন্য সমীকরণ দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যেটা স্পষ্ট, এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার রসায়ন অনেক বেশি কাজ করেছে। পারস্পরিক সম্মতির জায়গা অনেক কম ছিল। একটি নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার রসানয়কে কাজে লাগিয়ে নানা যৌন নির্যাতনের ঘটনা আমাদের কাছে কিছু অপরিচিত নয়। যেটা খুব স্পষ্ট, সেটা হল এ ক্ষেত্রে সম্পর্কের আবহাওয়ার মধ্যে এবং দাম্পত্যের ঘেরাটোপের মধ্যে নৌ বিভাগের কর্মচারীদের পাওয়ার ইকুয়েশন রয়েছে। সেটা কোথায় কে কার সঙ্গী হবেন, সেটা নির্ধারণ করতে যেমন তত্পর হচ্ছে তেমনই এ ক্ষেত্রে যেন কর্মক্ষেত্রে কিছু পেয়ে বা পাইয়ে দেওয়ার চিত্রনাট্যে আবারও কোনও একটি নারীর যৌনতাকে ব্যবহার করার একটা চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক ছবি আমরা দেখতে পেলাম। এখানে অন্যের স্ত্রীকে শয্যাসঙ্গী বানানোর মধ্যে দিয়ে শুধুমাত্র তার প্রতি যৌন আকর্ষণই ধরা পড়ে না, কর্মক্ষেত্রে কে কতটা ক্ষমতা রাখেন তার একটি অভিব্যক্তিত্বও যেন প্রকাশ পায়।
সাধারণত দীর্ঘ দাম্পত্যের পথ হাঁটতে গিয়ে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা অপরিচিত নয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে যেটি উল্লেখযোগ্য তা হল, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সহমত এবং সম্মতি। তার সামাজিক, মানসিক পরিণতি এবং জটিলতা অবশ্যই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সেখানে যৌন নির্যাতনের ছবি বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে জীবনের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে যেন সম্মতির তোয়াক্কা না করে একজন নারীকে ভোগ করার একটা অবাধ জমি আমরা দেখতে পেলাম। এটিকে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার এক্তিয়ারেও ফেলা যেতে পারে। পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে একটি নারীর মানসিক এবং যৌন হেনস্থার নজির হিসেবেও এই ঘটনার আলাদা আইনি তাত্পর্য অস্বীকার করা যায় না।
বৈবাহিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের বাইরে কারও প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবেন না, এমনটা হলফ করে বলা যায় না ঠিকই কিন্তু যদি শুধু ক্লান্তি বা বোরডম কাটানোর জন্য কেউ বারংবার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে থাকেন সেক্ষেত্রে সেই যৌনতা থেকেও নতুন ক্লান্তির পরিস্থিতি আসবে না এমনটা কিন্তু বলা য়ায় না। তার প্রভাব কমিটেড সম্পর্কগুলোর ওপরেও পড়ে এবং বহু ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য শ্রদ্ধা, ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও আমরা কিছু ভাঙনের ফাটল দেখতে পাই। শুধুমাত্র যৌনতৃপ্তির তাগিদে যে সম্পর্কগুলো তৈরি হচ্ছে সেটির প্রতি টান চিরকালের, কারণ তাতে তাত্ক্ষণিক আনন্দ থাকলেও দাযিত্বের বোঝা নেই। মুশকিল হয়, যখন এই তাত্ক্ষণিক যৌন আদানপ্রদানের আনন্দগুলোর কারণে যে সম্পর্কগুলোর এপর ভিত্তি করে আমাদের ভাল থাকা নির্ভর করে সে গুলোর ভিত নড়ে যায়। বিষয়টি শুধুমাত্র নৈতিক চশমা দিয়ে দেখার হয়তো নয়, আমাদের মধ্যে তৈরি হওয়া নানাবিধ কামনা, তাগিদ এবং তার পারিবারিক এবং সামাজিক পরিণতির চেহারা সম্পর্কে অবগত হয়ে কিছু পরিণত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তা না হলে মানসিক দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ এবং কখনও কখনও নিজেরই নেওয়া সিদ্ধান্তের দরুণ অবসাদের উদাহরণ মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমাদের অনেকেরই চোখে পড়ে।
আরও পড়ুন: ওয়াইফ সোয়াপিং কী? কী-ই বা এর শর্ত