প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
খেতে বসে জল না খেলে ভাত গলা দিয়ে নামে না। বা ভাত খাওয়ার পর ঢকঢক করে এক গ্লাস জল না খেলে পেট ভরে না। এমন অভ্যাস অনেকেরই থাকে। খাওয়ার পর জল খেলে হজম ভাল হয় এই ধারণাতেও অনেকেই শিশুদের খেয়ে উঠে জল খাওয়া অভ্যাস করান। তবে চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, হজমের জন্য প্রয়োজন গ্যাস্ট্রিক জুস। অনেকে মনে করেন, জল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক জুস পাতলা হয়ে যায় ও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে এতে হজম ভাল হওয়া তো দূরের কথা, বরং হজমের গন্ডগোল হয়। কিন্তু এই ধারণা কতটা সত্যি?
চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, এমনটা হতেও পারে। তাঁরা তাই খাওয়ার এক ঘণ্টা পর জল খেতে বলেন। পুষ্টিবিদ অঞ্জু সুদ যেমন জানান, আমরা যা খাই তা হজম হতে মোটামুটি ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। খাবার খাদ্যনালীর মাধ্যমে পাকস্থলীতে পৌঁছয়। হজমের পর সেখান থেকে কোলনে পৌঁছে শরীর থেকে নির্গত হয়। আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্রের একটা স্বাভাবিক তরল-কঠিন সাম্য রয়েছে। খাওয়ার আগে জল খেলে শুধু যে ফ্লুইড পাতলা হয়ে যায় তা নয়, এর ফলে পরিপাক ক্রিয়াও দ্রুত হয়। খাবার নির্দিষ্ট সময়ের আগে বৃহদন্ত্রে পৌঁছে যায়। তাই খাওয়ার ঠিক আগে জল খাওয়া উচিত নয়।
প্রতীকী ছবি
অন্য দিকে, খেতে খেতে জল খেলে তা হজমে সমস্যা করে, তেমনই প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণেও প্রভাব ফেলে। তাই যাদের খেতে খেতে জল খাওয়ার অভ্যাস থাকে তারা অনেক সময়ই কোলন বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন বলে জানালেন অঞ্জু। তিনি বলেন, তেমনই আবার খাওয়ার ঠিক পরে জল খেলেও হজম তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। ফলে দ্রুত খিদে পেয়ে যায় ও বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে পেট ফাঁপার সমস্যাও দেখা দেয়। খাওয়ার আগে ও পরে জল খাওয়ার মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যবধান থাকা প্রয়োজন। এই সময়ের মধ্যে শরীর হজমের পরবর্তী স্তরে পৌঁছে যায়।
তবে অনেক চিকিৎসকই এমনই দাবি মানতে নারাজ। জল খেলে যে হজমের উপর কোনও রকম বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, তার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও মেলেনি। জল খেলে যে আমাদের শরীরের ডাইজেস্টিভ জুসগুলির কার্যকারিতা কমে যাবে, এমন তথ্য কোনও গবেষণায় উঠে আসেনি। বরং জল খেলে তা শরীরে খাবার তাড়াতাড়ি ভেঙে হজম করতে সাহায্য করে। এবং খাদ্যে পুষ্টিগুণও শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। তাই একাংশ চিকিৎসকরা মনে করেন, জল খাওয়ার কোনও রকম নিয়ম নেই। শরীরের প্রয়োজন মতো জল সারা দিনের যে কোনও সময়ে একটু একটু করে খেতে হবে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক ছাড়া থাকতে পারেন না? মস্তিষ্কের বারোটা বাজছে
সুস্থ থাকার জন্য নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। প্রতি দিন তিন লিটার জল সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের খাওয়া প্রয়োজন।