অনিয়মের ওজন কমাতে নজর দিন খাবার পাতে। ছবি: শাটারস্টক।
বিয়েবাড়ি, পিকনিক, পার্টির মরসুম দোরগোড়ায়। ডায়েটে ভুলে খাওয়াদাওয়ার কিছু কিছু অনিয়মও তাই এড়ানো কঠিন। খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, ডায়েটের ছক ভাঙা ও ভুল জীবনযাপনের প্রভাবে শীতে ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ে। সাধারণত, ওজন ঝরানোর ডায়েটে যে সব খাবারের উল্লেখ থাকে, উৎসবের শীতকাল জুড়ে অক্ষরে অক্ষরে সে সব মেনে চলা বেশ কঠিন হয়েই পড়ে। সেই সব অনিয়মের হাত ধরেই বাড়ে মেদ।
একধাক্কায় জমে যাওয়া মেদ ঝরাতে অনিয়মের পাট চুকলেই অনেকে জিমের সময় বাড়িয়ে দেন, কেউ বা কঠিন ডায়েটে মুড়ে ফেলতে চান নিজেকে। কিন্তু অনেকটা অনিয়ম শরীর থেকে সরানো তখন কঠিন হয়ে পড়ে। জমে থাকা মেদ গলতে অনেকটা সময় নেয়। তাই শীত কেটে যাওয়ার পরেও বয়ে বেড়াতে হয় এই অনিয়মের বোঝা।
তবে পুষ্টিবিদদের মতে, এই ঘন ঘন অনিয়মের দিনেও নিজের শরীরকে মেদমুক্ত রাখতে উপায় আছে বইকি! পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহের মতে, ‘‘শীতের অনিয়ম ঢেকে দিতে পারে কমলালেবুর কোয়া। এমনিতেই মেদ কমাতে ফলের ভূমিকা অনেকখানি। যে কোনও ডায়েটেই ফল বা ফলের রস রাখা হয়। প্রতি দিন অন্তত ২০০ গ্রাম ফল শরীরকে সুস্থ রাখে। শীতে মরসুমি ফল কমলালেবুর ভূমিকাও অনেক, কিন্তু অনেকেই জানেন না, অনিয়মের মেদ ঝরিয়ে ফেলতে গেলেও পাতে রাখতে হবে এই ফল।’’
কিন্তু কেন?
পুষ্টিবিদদের মতে, লো ক্যালোরি ও ভিটামিন সি-এ ঠাসা এই ফলের রয়েছে ফ্যাট পোড়ানোর ক্ষমতা। একটি মাঝারি মাপের কমলালেবু থেকে মেলে ৫০ ক্যালোরি, ০.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১৬.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩.৪ গ্রাম ফাইবার, ২৩৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, প্রায় ১৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৬১ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম ও ৬৩.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
এ ছাড়া এই ফলে জলের ভাগ খুব বেশি। গোটা ফলের প্রায় ৮৭ শতাংশই জল। তাই শীতেও শরীরের অভ্যন্তরকে শুকনো হতে দেয় না এই ফল। শীতে কম জল খাওয়ার প্রবণতা সকলের মধ্যেই দেখা যায়। কমলালেবু মেটায় সেই জলের অভাব। এমনিতেই শরীর তার প্রয়োজনীয় কাজ সারার জন্য পর্যাপ্ত জল না পেলে শরীরের ভিতরেই নুনের সঙ্গে জলকে মিশিয়ে দিয়ে জমিয়ে রাখে সেই নুন-জল। সেই জমা জল দিয়েই সে বাধ্য হয় যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজ সারতে। ফলে শরীর ফুলে যায়। কমলালেবু সেই জল জমার কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জলের অভাব তৈরি হতে দেয় না বলে শরীরও অকারণে জল জমিয়ে রাখে না। তাই ফুলে যাওয়ার হাত থেকে মুক্তি মেলে।
এ ছাড়া ফাইবার বেশি থাকায় পেট ভার রাখতে সাহায্য করে এই ফল। সেই কারণে খিদের চোটে ভুল কাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতাও অনেকটা কমানো যায়। ভিটামিন সি-এর পর্যাপ্ত পরিমাণে উপস্থিতির জন্য ত্বকের স্বাস্থ্য তো রক্ষা হয়ই, সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলিকে মেরামত করে শরীরকে টোনড রাখতে সাহায্য করে।
মেদ ঝরাতে কমলালেবুর ভূমিকা নিয়ে ২০১৪ সালে ‘আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রেশন’-এর গবেষকরা কমলালেবুর মধ্যে জলে দ্রবণীয় এক ভিটামিনের সন্ধান পান। যা কিনা ওবেসিটি কমাতে বিশেষ কাজে আসে। ফ্যাট পোড়ানোর সময় এই ভিটামিন শরীরের গ্লাইসেমিক কন্ট্রোলকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে ফ্যাট ঝরতে বেশি সময়ও লাগে না। তাই মেদ ঝরানোর প্রশ্নে শীতে পাতে রাখুন এই টক-মিষ্টি ফলটি।