ফাইল চিত্র
যে কোনও সংক্রামক অসুখের সঙ্গী হয়ে আসে ক্লান্তি। রোগ সেরে যাওয়ার পরেও তা পিছু ছাড়ে না৷ দুর্বলতায় জর্জরিত মানুষ সহজে ফিরতে পারেন না স্বাভাবিক জীবনে। বিশেষ করে আগের ‘ফিটনেস রুটিনে’৷ করোনা আক্রান্ত হলে সেই দুর্বলতা থাকছে আরও বেশি দিন। কারণ, এই ভাইরাসের আক্রমণে ফুসফুস কমজোর হয়৷ অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হয়ে শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে ক্লান্তি৷ রোগের প্রকোপ মাঝারি কিংবা মৃদু পর্যায়ের হলেও ক্লান্তি কাটতে সময় লাগে অনেক। সে ক্ষেত্রে করোনার কত দিন পরে আবার ফেরা যাবে শরীরচর্চার নিয়মে, তা নিয়ে ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
দিনের হিসেব করে লাভ নেই। উপায় একটাই, ক্লান্তি না কাটা পর্যন্ত ব্যায়াম নয়। তা কাটতে কয়েক সপ্তাহ লাগুক কিংবা মাস, অপেক্ষা করতেই হবে। কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও ক্লান্তি কাটানোর জন্য বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি৷ নিয়ম করে ঘুম প্রয়োজন এই সময়ে। একমাত্র টানা ঘুমই পারে ভিতরের সব ক্ষতি ধীরে ধীরে মেরামত করতে। এই সময়ে যা করা যায় তা হল হাল্কা হাঁটাহাঁটি। তা করার সময়ে নিজেই বুঝতে পারা যাবে একটু করে সুস্থ হচ্ছে কি না শরীর। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় যেমন জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে যতটা সুস্থ মনে হবে শরীর, সেই মতো বাড়াতে হবে হাঁটার সময়। এ ভাবেই ধকল নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ছে কি না, বোঝা যাবে নিজে। শরীর যথেষ্ট সুস্থ হলে, তবেই ফিরতে হবে ব্যায়াম করার অভ্যাসে।
রোগের মাত্রা এবং কোমর্বিডিটির উপরেও নির্ভর করে ব্যায়ামের রুটিন৷ ২০-৫০ বছর বয়সের উপসর্গহীন রোগীরা যেমন নেগেটিভ হাওয়ার আগেও হাল্কা ব্যায়াম করতে পারেন৷ একটু জোরে হাঁটা বা স্পট জগিং করা যায় এই সময়ে৷ অভ্যাস থাকলে প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক, পুশ-আপের মতো জোর বাড়ানোর ব্যায়ামও করা যায়। সঙ্গে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে ডিপ ব্রিদিং করা ভাল৷ ব্যায়ামের সময়েও যদি জোরে শ্বাস টানা ও ছাড়া যায়, তবে শরীরে বেশি অক্সিজেন ঢোকে। শরীর ও পেশি তাতে তরতাজা হয়৷ তবে হাঁফ ধরলেই ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে হবে৷ সবচেয়ে ভাল হয় যদি আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেন৷
রোগ যাঁদের জটিল আকার নিয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে তাঁদের কোনও ব্যায়াম করা উচিত নয় বলে মত চিকিৎসক মৌলীমাধব ঘটকের। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হাল্কা প্রাণায়াম করা যেতে পারে এ সব ক্ষেত্রে৷ তবে নিজের ইচ্ছামতো কিছু না করাই ভাল।
একটা দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তা হল, ব্যায়ামের অভ্যাসে ফেরার ইচ্ছা। কারণ, এত বড় অসুখ শরীরে অনেক ক্ষতি করে। তার থেকে সেরে উঠতে ওষুধ-পথ্য-বিশ্রামের যেমন বড় ভূমিকা রয়েছে, তেমন রয়েছে শরীরচর্চারও। তবে তা করতে হবে শরীর এবং সময় বুঝে।