coronavirus

অক্সফোর্ড ও ইম্পিরিয়ালের তৈরি করোনা-টিকার ফারাক কোথায়?

দু’টি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরাই মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের স্পাইকের প্রতিরূপ তৈরি করতে সফল হয়েছেন। কিন্তু তৈরির পদ্ধতি আলাদা আলাদা।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪০
Share:

উপযুক্ত টিকাই থামিয়ে দিতে পারে কোভিডের ভয়াভয়তা। ছবি: শাটারস্টক।

কোভিড-১৯ ভাইরাসকে ধ্বংস করতে টিকা আবিষ্কারের কাজ করছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় ভায়রোলজিস্টরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব গবেষণাই কমবেশি এগচ্ছে। তবে ব্রিটেনের দুই গবেষণা বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে মানবশরীরে প্রয়োগও। এদের মধ্যে এক দল গবেষক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে। অপর দল কাজ করছেন লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের ল্যাবরেটরিতে।

Advertisement

মহামারি সৃষ্টিকারী কোভিড-১৯ ভাইরাস যখন বিশ্ব জুড়ে হু হু করে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, তখনই নিজের দল নিয়ে প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা শুরু করেন প্রতিষেধক-বিশেষজ্ঞ সারা গিলবার্ট। প্রায় সমসাময়িক সময় থেকেই লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজেও এক দল গবেষক শুরু করেন গবেষণা। বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ প্রায় শেষের মুখে। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের দাবি, তাঁদের উদ্ভাবিত টিকা মানবশরীরে প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইম্পিরিয়াল কলেজে এই প্রয়োগশুরু হতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে।

তবে এই দুই কলেজে আবিষ্কৃত টিকার মধ্যে কিছু তফাত আছে। দু’টি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরাই মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের স্পাইকের প্রতিরূপ তৈরি করতে সফল হয়েছেন। কিন্তু তৈরির পদ্ধতি আলাদা আলাদা।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাতে-পায়ে র‌্যাশ, চুলকানি? সাবধান, করোনা নয় তো?

কোথায় আলাদা?

• ইম্পিরিয়াল কলেজের গবেষকরা কোভিড-১৯-এর রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড অর্থাৎ আরএনএ থেকে এমন এক জেনেটিক উপাদান তৈরি করেছেন যা ইঞ্জেকশনের সাহায্যে মানুষের শরীরে প্রবেশ করালে কোষের মধ্যে কোভিডের শরীরে থাকা স্পাইক প্রোটিনের অনুরূপ স্পাইক প্রোটিন সৃষ্টি করবে। এই অনুরূপ স্পাইক প্রোটিনটির বৈশিষ্ট্য কোভিডের মতো হবে না। বরং কোভিডের কাজকর্মকে এ বাধা দেবে। এটিই তাকে প্রতি পদে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।

• অন্য দিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দল আরএনএ সংগ্রহের পথে হাঁটেননি। বরং তাঁরা করোনাভাইরাসের মতো সমআকৃতির এক কৃত্রিম ভাইরাস তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। এর বাইরের অংশেও করোনার মতোই স্পাইক প্রোটিন আছে। শিম্পাঞ্জীর শরীর থেকে পাওয়া সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশির অ্যাডিনোভাইরাসকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে কোভিডের সমআকৃতির কৃত্রিম ভাইরাসে পরিণত করে গবেষণা এগিয়েছেন তাঁরা। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত টিকার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, এটির সাহায্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের শরীরেও ইমিউনিটি তৈরি করা সম্ভব।

প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টায় গবেষকরা। ছবি: রয়টার্স।

তৈরিতে পার্থক্য থাকলেও মানুষের শরীরে এই দুই দলের গবেষকদের তৈরি করা প্রতিষেধক কাজ করবে একই ভাবে। এই দুই ধরনের টিকই মানুষের শরীরে নতুন করে কোনও রকম সংক্রমণ ঘটাবে না, বরং কিছু বিশেষ অ্যান্টিবডি তৈরি করবে যা এই করোনার প্রোটিন স্পাইককে ধ্বংস করতে পারে।

অক্সফোর্ড ও ইম্পিরিয়াল দুটি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরাই এখন পর্যবেক্ষণ করতে চান কী ভাবে এই টিকা মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। অক্সফোর্ডের টিকা মানবশরীরে প্রয়োগের পর এদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়, তা হলে অল্প সংখ্যক মানুষের উপর ট্র্যায়াল করিয়ে মাস ছয়েকের মধ্যেই এর কার্যকারিতা সম্পূর্ণ জানতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: কোভিডের আতঙ্কে লকডাউনেও অবসাদ, টেনশন? মন ভাল রাখুন এ সব উপায়ে

ইম্পিরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রায়ালের ফল পাওয়া যাবে এই বছরের শেষের দিকে। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের পালমোনলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত দীর্ঘ দিন ইম্পিরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মতে, পরীক্ষামুলক ভাবে নতুন কোনও টিকা প্রয়োগ করার পর তার কার্যক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মোটামুটি মাস তিনেক সময় লাগে। মানুষের শরীরে নতুন টিকা দেওয়ার পর কোনও বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না অনবরত লক্ষ্য রাখতে হয়। লাভ-ক্ষতির তুল্যমূল্য হিসেবে যদি লাভের পাল্লা ভারি হয়, তখনই ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। স্বাভাবিক নিয়মে ৬ মাস বা তারও বেশি সময় ধরে ভ্যাকসিন নিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়।

বারে বারে চরিত্র পরিবর্তন করতে থাকা কোভিড-১৯ ভাইরাসের এই টিকা কি আমাদের দেশেও সমান কার্যকর হবে? অশোকবাবুর মতে, কোনও টিকা সারা বিশ্বে সমান কার্যকর হয় না। উনিশ-বিশ থাকেই। সামান্য রদবদল ঘটানোরও অবকাশ থাকে। তবে টিকা দ্রুত হাতে এলে তবেই বোঝা যাবে আমাদের দেশে তা কতটা কার্যকর হবে। সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে দেশের ভায়রোলজিস্টরা তখন তৎপর হবেন। যদি টিকাটির কোনও পরিবর্তন করার দরকার হয়, তবে তাঁরা তা সেরে ফেললেই এ দেশেও টিকা কার্যকরী ভূমিকা নেবে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement