বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ সকালে ঝিরিঝিরি বারিধারার সঙ্গে যদি দূর আকাশে দেখা দেয় রামধনু, তখন মন হয়তো গুনগুনিয়ে ওঠে ‘হৃদয় আমার নাচে রে, আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’। কিন্তু রামধনুর সাত রং নীল আকাশের ক্যানভাসেই সীমাবদ্ধ, ছোঁয়া যায় না সেই রং। বিচিত্র রঙের সেই বাহার যদি ছুঁয়ে দেখা যেত তা হলে কেমন হত? এই মহাবিশ্বে রয়েছে তেমনই এক আশ্চর্য বিস্ময়!
রামধনুর সাত রঙে রঙিন এক আশ্চর্য পাহাড় রয়েছে চিনের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গানসু প্রদেশের অন্তর্গত জাংহে শহরে। এই পাহাড় ‘দাংশা ল্যান্ডফর্ম জিওগ্রাফিক্যাল পার্ক’এর অন্তর্গত।
পাহাড় বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে রুক্ষ শুষ্ক ধূসর ভূখণ্ড অথবা বরফে ঢাকা শ্বেত শৃঙ্গ। কিন্তু এই পাহাড় বেগুনি, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল নানা রঙে রঙিন৷
যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই রং। পর্বতমালা আসমানী, কমলা, লাল, হলুদ, সবুজে রাঙা। প্রকৃতি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সুবিশাল ক্যানভাসে তুলির টানে সৃষ্টি করেছে এই রংমহল৷
উত্তর চিনের গানসু প্রদেশের লিনজে জেলায় ৪০০ বর্গ কিলিমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এই রামধনু পর্বত বা রেনবো মাউন্টেন। এই পর্বতটি বর্তমান নাম গানসু ঝাংহে দাংশা ন্যাশানাল পার্ক৷
কিন্তু এত রং এল কোথা থেকে? ভূবিজ্ঞানীদের মতে, বহু বহু বছর ধরে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে শুষ্ক পর্বতগাত্রে এমন রামধনুর সাত রং ফুটে উঠেছে৷ টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল শিলাস্তর৷
শিলাস্তরে ছিল প্রচুর খনিজ পদার্থ, রঙিন সিলিকা সহ নানা উপাদান। বহু বছর ধরে ঋতু পরিবর্তন, ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত, নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রূপ পরিবর্তন করতে করতে তৈরি হয়েছে বর্তমানের রেনবো মাউন্টেন।
হিমালয়ের অনেক আগেই এই পাহাড় তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, পাহাড়টি তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ বছর।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রখর সূর্যের তাপ থাকে। সেই সঙ্গে মাঝেমাঝেই বৃষ্টিপাত হয়। এই সময়েই রেনবো মাউন্টেন তার রংবাহার নিয়ে অপেক্ষা করে পর্যটকদের জন্য৷
সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের আগে এই পাহাড় আলোর খেলায় মেতে নানা রঙে সেজে ওঠে৷ ভোরবেলা এবং গোধুলির প্রাক্কালে চতুর্দিকের আলোয় ধীরে ধীরে রং বদল হয়৷
২০১০ সালে ইউনেসকো বিশ্বের অন্যতম পর্যটনস্থল রূপে এই পাহাড়কে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন প্রকৃতির এই অপার বিস্ময়কে চাক্ষুষ করতে৷ গোটা এলাকা জুড়েই ঘাস ছাড়া তেমন কোন উদ্ভিদ নেই৷
বেড়াতে গিয়ে অনেকেই স্মৃতি হিসেবে কিছু না কিছু নিয়ে ফেরেন৷ তবে রেনোবো মাউন্টেনের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ নিয়ম৷ এখান থেকে রঙিন পাথর নিয়ে যাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ৷
পার্কটিতে সাধারণ পর্যটকদের বাস প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘুরে দেখার জন্য পার্কের মধ্যেই গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে৷ গোটা পার্ক ঘুরে দেখতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক।