বৃহস্পতিবার জয়পুরে সাহিত্য উৎসবের সূচনা করেন ২০২১ সালের নোবেলজয়ী লেখক আব্দুলরজাক। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর শুধু কঠিন হলেই হবে না, প্রতিরোধের ধরন নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। এ কথা বলেছেন আগেই। এ বার এ দেশে এসেও সেই প্রতিরোধের কথাই তুললেন নোবেলজয়ী লেখক আব্দুলরজাক গুরনাহ। বললেন, ‘‘সাহিত্যের মাধ্যমে প্রতিরোধ প্রয়োজন।’’
শুরু হয়েছে ১৬তম ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’। বৃহস্পতিবার, সাহিত্য উৎসবের প্রথম দিনে উদ্বোধনী বক্তৃতা দিলেন ২০২১ সালের নোবেলজয়ী লেখক আব্দুলরজাক। জয়পুরের সেই উৎসবেই ফের প্রতিরোধের কথা মনে করিয়ে দিলেন লেখক। বললেন, ‘‘যে কোনও সাহিত্যই আসলে প্রতিরোধ। জরুরি কথা বলায় অনেক বাধা আসে। সাহিত্য সে সবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।’’
আফ্রিকার তানজানিয়ায় জন্ম আব্দুলরজাকের। অস্থির সময়ে সেখান থেকে প্রাণের তাগিদে বিলেত পাড়ি। উদ্বাস্তু হয়ে কেটেছে বহু দিন। তার পর ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো। প্রবন্ধ ও উপন্যাস লেখা। এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার আঞ্চলিক ভাষার প্রতি তাচ্ছিল্যের বিরুদ্ধে বার বার রুখে দাঁড়ানো। অধিকারের কথা বলতে হয়, জানেন। তবে শুধু নিজের অধিকার নয়। মনে করেন, সাধারণের জন্য গড়তে হবে সহনীয় পরিবেশ। সে জন্যই তো লিখতে হয়। মনে করান সাহিত্যিক।
নরওয়ে থেকে নাগাল্যান্ড, বিভিন্ন এলাকার সাহিত্যিক ও চিন্তকরা ইতিমধ্যে জড়ো হয়েছেন রাজস্থানের এ শহরে। নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার সাহিত্য উৎসবের সূচনা করেন আব্দুলরজাক। সেই মঞ্চেই বলেন, ‘‘লেখা মানেই তো প্রতিরোধ। লিখতে হলে অনেক কাজ করতে হয়। খাটতে হয়। কারণ পদে পদে প্রতিরোধ করে যেতে হয়।’’ মনে করান, এ সময়ে মন সরিয়ে নেওয়ার মতো নানা কিছু ঘটছে। কিন্তু লক্ষ্যে স্থির থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলতে হবেই। আর তাই অপ্রয়োজনীয় সব জিনিসকে মনে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষেত্রে রুখতে হবে। যে সব ঘটনা বা ভাবনা প্রয়োজনীয় কথাকে তুচ্ছ মনে করে, ন্যায়কে তাচ্ছিল্য করে, তা প্রতিরোধ করতে হবে। আব্দুলরজাক বলেন, ‘‘যে কথা বলা প্রয়োজন, তা বার বার বলতে হবে। নিয়ম করে লিখতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে প্রতিরোধ।’’
প্রসঙ্গত, জয়পুরের এই সাহিত্য উৎসবে বরাবরই নানা প্রান্তের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। এ বছরও তার বিকল্প নয়। নরওয়ে থেকে নাগাল্যান্ড, বিভিন্ন এলাকার সাহিত্যিক ও চিন্তকরা ইতিমধ্যে জড়ো হয়েছেন রাজস্থানের এ শহরে। আগামী ক’দিন রাজনীতি, সাহিত্য, অর্থনীতি থেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা— সবই থাকবে আলোচনার কেন্দ্রে। উৎসবের ১৬তম বর্ষে অনুবাদ সাহিত্যে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে বলে আয়োজকদের তরফে সূচনা অনুষ্ঠানে জানান সঞ্জয় কে রায়, নমিতা গোখলে এবং উইলিয়াম ডালরিম্পল।