কলা যেমন পুষ্টিকর, তেমনই সুস্বাদু। ব্রেকফাস্টে একটা করে কলা প্রায় অনেকের ডায়েটের নিত্যসঙ্গী। আবার কাঁচকলার কোফতা থেকে পাকা কলার মিষ্টি বড়া, রসনাতৃপ্তিতেও কম যায় না এই ফল! তবে কলার রকমফেরে কাঁচা থেকে পাকার মধ্যেও বদলে যায় তার গুণাগুণ। শরীরের প্রয়োজন বুঝে কিছু ক্ষেত্রে কলা যেমন অত্যন্ত উপকারী, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে কলা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ডায়েটে কলার প্রয়োজনীয়তা কতটা জেনে নিন...
কাঁচকলা থেকে পাকা কলা
কাঁচা অবস্থায় কলা সবুজ থাকে। পাকার সঙ্গে সঙ্গে হলুদ থেকে খয়েরির দিকে যায় সেটির রং, সেই সঙ্গে পুষ্টিগুণও বদলাতে থাকে। রং দেখেই বোঝা যায় উপস্থিত উপাদানগুলির পরিমাণ।
সবুজ কলায় রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি এবং শর্করার পরিমাণ কম থাকে। অ্যামিনো অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ফসফরাসের মতো উপাদানও থাকে যথেষ্ট পরিমাণে।
কলা পাকার সঙ্গে সঙ্গে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ শর্করায় পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই হলুদ কলায় শর্করা বেশি। তবে এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পরিমাণ বেশি থাকে।
খয়েরি ছোপযুক্ত কলায় শর্করার পরিমাণ আরও বেশি। খয়েরি ছোপ যত বেশি, ততই বেশি শর্করার অণু রয়েছে তাতে।
সম্পূর্ণ খয়েরি কলা মানে সেটি অতিরিক্ত পাকা কলা। এতে শর্করা এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, দু’টিই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মজুত।
নানা রকমের কলা
সিঙ্গাপুরি, মর্তমান, কাঁঠালি— কলার নানা রকম। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, সব রকমের কলাই পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে এক। সবক’টাই খাওয়া যায়। কোয়েল পাল চৌধুরীও বললেন, “সব কলাই প্রায় সমান। তবে কাঁঠালি কলার পুষ্টিগুণ কিছুটা হলেও বেশি, হজম করাও সহজ।”
নানা রোগে কলা
সুবর্ণা বললেন, “ডায়াবেটিক রোগীদের এখন আমরা কোনও ফল খেতেই বারণ করি না, শুধু পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কলার ক্ষেত্রেও তাই। যদি কোনও রোগীর ডায়েটে ১০০-১৫০ গ্রাম ফল থাকে, তা হলে তার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০-৭৫ গ্রাম কলা খাওয়া যাবে। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাঁদের পাকা কলা খাওয়া উচিত। এতে ফাইবার থাকায় পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আবার পেট খারাপের সমস্যায় ভুগলে কাঁচকলা খেলে উপকার পাবেন। কলা পটাশিয়াম, মিনারেল, ভিটামিন সি-তে পরিপূর্ণ। ফলে এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ফল। তবে পটশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকার কারণেই, যাঁদের রেনাল ফেলিয়োর রয়েছে বা কোনও অসুখের কারণে পটাশিয়াম খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, তাঁদের কলা না খাওয়াই ভাল। ভিটামিন, মিনারেলের পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও পাওয়া যায় কলায়।”
কোয়েল পাল চৌধুরীর কথায়, “ডায়াবেটিক রোগীদের কলা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দিনে ৫০ গ্রাম কলা তাঁরা খেতেই পারেন। যাঁদের ওজন অতিরিক্ত কম, তাঁদেরও কলা খেতে বলা হয়। কলায় ক্যালরির পরিমাণ অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেকটা বেশি। যাঁদের ওবেসিটি বা হার্টের কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ডায়েটে বেশি কার্বোহাইড্রেট রাখা যাবে না। তাঁরাও বিকল্প হিসেবে কলা খেতে পারেন। এ ছাড়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পাকা কলা খেতে হবে আর পেট খারাপ হলে কাঁচকলা। ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় কলা খেলে ভাল হজম হয়। কলার উচ্চ পটাশিয়াম মাত্রার কারণে শরীরের পটাশিয়ামের অভাব থাকলে বা হাইপোক্যালেমিয়ায় ভুগলে নিয়মিত কলা খেতে হবে।’’
কখন, কীভাবে খাবেন
ভারী খাবার বা মিলের সঙ্গে কলা না খাওয়াই ভাল। খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে কলা খাবেন। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই সময়ের ব্যবধানে খেলে ফাইবার সহজেই শরীর গ্রহণ করতে পারবে।
অনেকে সরাসরি কলা খেতে পছন্দ করেন না। আবার স্বাদ বদলেরও ইচ্ছে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কলার স্মুদি বানিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কোয়েল। অন্য ফলের স্মুদির সঙ্গেও কলা মিশিয়ে নেওয়া যায়। কলা ও ওটসের স্মুদিও খেতে পারেন। পেট ঠান্ডা রাখতে কলা ও সাবু মেখে খেতে পারেন। যাঁদের অসুস্থতার কারণে তরল বা সেমি-সলিড ডায়েট চলছে, তাদের জন্যও আদর্শ এই দু’টি উপায়। একে সুস্বাদু আর পেটও ভরবে।