ফডম্যাপে নিয়ন্ত্রণে থাকবে পেটের সমস্যা।—ফাইল চিত্র
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস কোনও জটিল অসুখ নয়। কিন্তু এ এমন এক সমস্যা, যা সহজে ছেড়ে যেতে চায় না। কোথায়, কখন পেট গুড় গুড় করে উঠবে, আর টয়লেটে ছুটতে হবে, তা কেউ জানে না। আবার কখন হঠাৎ সব ঠিক হয়ে যাবে, তারও ঠিক নেই।
ওষুধে এই রোগ বশে থাকলেও, পুরোপুরি সারে না।
ইন্টারভেনশনাল গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট সব্যসাচি পট্টনায়ক বলছেন, ‘‘এ রোগ বিপজ্জনক না হলেও, খুব বিরক্তিকর। তবে সাবধানে চললে এর হাত থেকে বাঁচা যায়। বা প্রকোপ কম থাকে।’’
বশে রাখবেন কী ভাবে
প্রসেস্ড খাবার, কফি, কোলা, মদ, হাই–প্রোটিন, দুধের খাবার থেকে দূরে থাকুন। মেয়েরা দিনে সব মিলিয়ে ২৫ গ্রাম আর ছেলেরা সব মিলিয়ে ৩৮ গ্রাম হোল গ্রেইন ব্রেড ও সিরিয়াল, বিন্স, ফল, সবজি খান। জল খান পর্যাপ্ত। প্রধান উপসর্গ পেটের গণ্ডগোল হলে হোল হুইট ব্রেড, ওট্স, বার্লি, ব্রাউন রাইস, ফল, সবজি কম খান। গ্যাস হয় এমন সবজি খাবেন না। চকলেট, মদ, কার্বোনেটেড ড্রিংক, কফি, ভাজা ও ফ্যাটি ফুড বাদ দিতে পারলে ভাল। দুধ ও গমজাত খাবারে সমস্যা হলে বাদ যাবে তাও। খুব ঠাণ্ডা ও খুব গরম খাবার একসঙ্গে খাবেন না। যোগাসন বা মেডিটেশনের সাহায্যে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। কিছু ওষুধে সমস্যা বাড়ে অনেকের। তেমন হলে চিকিৎসককে জানান। পিরিয়ডের সময় সমস্যা বাড়লে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খান। তাড়াহুড়ো করে খেলে, চিউয়িং গাম চিবোলে বা ঠিকঠাক ব্যায়াম না করলেও সমস্যা বাড়ে। ‘‘লো–ফডম্যাপ ডায়েট খান। পরিসংখ্যান বলছে, এতে ৭০ শতাংশ রোগী ভালো থাকেন’’, বলছেন পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল।
ফডম্যাপ কী
যেসব খাবারে ওলিগোস্যাকারাইড, ডাইস্যাকারাইড ও পলিওল নামের কার্বোহাইড্রেট কম আছে, সেটাই হল লো–ফডম্যাপ খাবার। কাজেই, গম, রাই, পেঁয়াজ, রসুন, দুধ, ইয়োগার্ট, সফ্ট চিজ, বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে ডুমুর, আম, লিচু, কালোজাম, মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মধু, অ্যাগাভে নেক্টর, লো–ক্যালোরি সুইটনার কম খাওয়াই ভালো। কারও একটিতে সমস্যা হয়, কারও একাধিকে। তবে কম করে খেলে সচরাচর বিপদ হয় না। এই ডায়েটের তিনটি ধাপ।
প্রথম ধাপ। ৩–৮ সপ্তাহ সব হাই–ফডম্যাপ খাবার বাদ যায়। তাতে প্রথম সপ্তাহেই সুফল পান আনেকে। কারও ২–৩ সপ্তাহ বা আরও বেশি সময় লাগে। কারও কাজ হয় না।
দ্বিতীয় ধাপ। কষ্ট কমার পর একটা করে নতুন খাবার তিন দিন অন্তর অল্প করে যোগ করতে হয়। এবং লক্ষ করতে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনও কষ্ট হচ্ছে কিনা। না হলে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হয়। তিন দিন সমস্যা না হলে একই নিয়মে নতুন আরেকটি খাবার অল্প করে যোগ করা হয়। এ ভাবে এগোলে কোন খাবার আপনি খেতে পারবেন তা যেমন বোঝা যায়, কী পরিমাণে খেলে সমস্যা হবে না, তাও ধরা পড়ে।
তৃতীয় ধাপ। কোন খাবার খেলে সমস্যা হয় না, তা বুঝে যাওয়ার পর, কখন কোনটা খাবেন, কী বাজার করবেন, হোটেলে খেতে গেলে কী করবেন— সব বুঝে চলতে হবে।
এই ডায়েটে বাজারের ফর্দ
প্রোটিন হিসেবে খান চিকেন, ডিম, মাছ। পাতে থাকতে পারে চিংড়ি, টোফু, বিফ, ল্যাম্ব, পর্ক। হোল গ্রেইন , ব্রাউন রাইস, মিলেট, ওট্স, কিনোয়া। বিভিন্ন ফল, যেমন কলা, ব্লুবেরি, কিউয়ি, লেবু, কমলা, পেঁপে, আনারস, স্ট্রবেরি। সবজির মধ্যে পালং, গাজর, বেল পেপার, বেগুন, টমেটো, বিন স্প্রাউট। বাদাম বা বীজের মধ্যে অ্যামন্ড, চিনে বাদাম, আখরোট, কুমড়ো বীজ। অলিভ অয়েল, নারকোল তেল। মশলার মধ্যে লঙ্কা, আদা, সর্ষে, গোলমরিচ, বেসিল, হোয়াইট রাইস ভিনিগার। প্যাকেটের খাবার কেনার আগে তাতে যা উপাদান আছে, তার ফডম্যাপের হিসেবও করতে হবে। তবে সব হাই–ফডম্যাপ খাবারেই যে আপনার অসুবিধে হবে এমন কিন্তু নয়।
আরও পড়ুন: চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন, অথচ ওজনও বাড়বে না
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল কমাতে, ভরসা টিএলসি ডায়েট