প্রতীকী ছবি।
ভারী মাসকুলার চেহারার কদর দীর্ঘদিনই। হলিউড, বলিউডের হিরোদের দেখাদেখি পেশিবহুল ভি-শেপ ফিগারের চাহিদা ছিল সাধারণের মধ্যেও। কিন্তু সেই চাহিদায় এখন ভাটা। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস বলছেন, ‘‘চওড়া কাঁধ, ভারী বুক... মাসকুলার চেহারা এখন চাইছে না নতুন প্রজন্ম। ল্যাঙ্কি ফিজ়িকের চাহিদা তৈরি হয়েছে। জোর দেওয়া হচ্ছে ফ্লেক্সিবিলিটির উপরে। কাঁধ, বুক, পেট, থাই সব সুঠাম পেশিবহুল হবে, কিন্তু ভারী নয়।’’ মেয়েরাও নরমসরম চেহরার বদলে মাসল ওয়ার্কআউটের উপরে জোর দিচ্ছে। সুন্দর আর্মসের সঙ্গে একটা হালকা কাট চোখে পড়বে। অ্যাবসেও দুটো-তিনটে ভাঁজ পছন্দ করছে আধুনিক প্রজন্মের মেয়েরা।
কেন এই নতুন ট্রেন্ড?
সলমন খানের চেয়ে আয়ুষ্মান খুরানার মতো ছিপছিপে অথচ টোনড মাসল বেশি পছন্দ কমবয়সিদের। ‘‘আমাদের কেরিয়ারের শুরুর দিকে বডি বিল্ডিংয়ে চওড়া কাঁধ, উঁচু বুক পেশিবহুল চেহারার কদর ছিল। কিন্তু এই চেহারার কার্যকারিতা অনেক কম। শরীরের মধ্যে স্টিফনেস আসে। এখনকার ছেলেমেয়েরা ফ্লেক্সিবিলিটির উপরে জোর দিচ্ছে। আমার মতে, এই ধরনের শারীরচর্চা বেশি বয়সেও শরীরকে কমনীয় ও ফিট রাখবে। হালকা চেহারায় দম বেশি পাওয়া যায়,’’ বলছেন সৌমেন দাস।
সুঠাম চেহারা পেতে কী কী করণীয়
খুব পেশিবহুল চেহারা নয়, অথচ ভি-শেপও চাই— কোন কোন এক্সারসাইজ় সেটা দিতে পারবে জানালেন সৌমেন দাস। ওয়েট ট্রেনিংয়ের সঙ্গে কার্ডিয়ো জরুরি। জগিং, অ্যারোবিক্স, পিলাতিস করতে হবে। তার সঙ্গে হালকা ওয়েট নিয়ে শোল্ডার, চেস্ট, বাইসেপ-ট্রাইশেপ, অ্যাবস এবং হিপ-থাইয়ের ব্যায়াম করতে হবে।
n সিঙ্গল হ্যান্ড শোল্ডার প্রেস, ডাবল হ্যান্ড শোল্ডার প্রেস করতে হবে কাঁধের পেশির গঠনের জন্য। শুরুর দিকে পাঁচ-দশ কিলো ওজন নিয়ে ১৬ কাউন্টে তিন সেট।
n চেস্টের জন্য বেঞ্চ প্রেস এবং ডন। বেঞ্চ প্রেসে ১০-১৫-২০ কিলো (চেহারা অনুযায়ী) ওজন নিয়ে ১০ কাউন্টে তিন-চার সেট।
n হাতের জন্য বাইসেপ ও ট্রাইসেপ এক্সারসাইজ়। শুরুর দিকে আড়াই থেকে পাঁচ কিলো ওজন যথেষ্ট।
n অ্যাবসের জন্য আবার প্ল্যাঙ্কস, ক্রাঞ্চ কার্যকর।
n হিপ ও থাইয়ের মাসলের জন্য স্কোয়াট করতে হবে, হালকা ওয়েট নিয়ে। আড়াই-আড়াই করে রডের দু’দিকে পাঁচ কিলো ওজন কাঁধ নিয়ে আট কাউন্টে তিন সেট। ধীরে ধীরে ওজন বাড়িয়ে পাঁচ-পাঁচ করে দশ কিলো করা যেতে পারে।
বডিবিল্ডিং ছাড়া ভারী ওজন তোলার প্রয়োজন নেই বলছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞেরা। হালকা ওজন নিয়েই স্ট্রেংথনিং এক্সারসাইজ় করা সম্ভব। উদাহরণ সহযোগে সৌমেন দাস বললেন, ‘‘আগে আমরা শোল্ডারের ব্যায়ামের জন্য শুরুতেই ২০ কেজি ওজন তুলে নিতাম, দশ কাউন্ট পর্যন্ত করতাম। এখন সেটা পাঁচ কিলো ওজন দিয়ে তিরিশ কাউন্টে করা হচ্ছে। এতে মাসলের জোরও বেশি বাড়ছে, দেখতেও ভাল লাগছে।’’
কার্ডিয়োর মধ্যে লং ডিসটেন্স রানিং, জগিং এখন বেশ জনপ্রিয়। ফ্লেক্সিবিলিটি ওয়ার্কআউটের মধ্য অ্যারোবিক্স, জ়ুম্বা, পিলাতেসের চাহিদা খুব বেশি। ফিটনেস, স্ট্যামিনা বাড়াতে এই জাতীয় শারীরচর্চার বিকল্প নেই। সবক’টিই করা হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু কার্ডিয়োর সঙ্গে জ়ুম্বা বা পিলাতেস যে কোনও একটা রাখতে পারলে ভাল।
মেয়েদের শারীরচর্চা
কার্ভস অ্যান্ড কাটস— মেয়েদের শারীরচর্চায় এটাই এখন ট্রেন্ড। ফ্লেক্সিবিলিটির সঙ্গে টাইট-টোনড চেহারা পেতে আগ্রহী এই প্রজন্মের মেয়েরা। বলিউডের নায়িকাদের মধ্যেও এই চেহারা এখন জনপ্রিয়। কলার বোন দেখা যাবে, হাতের পেশিতে হালকা কাট, সিক্স প্যাক নয় তবে দুটো হালকা ভাঁজ পেটের পেশিতে দেখতে ভাল লাগে। টোনড থাই-হিপের মধ্যেও একটা হালকা কাট পছন্দ করছেন অনেকে।
টাইট, টোনড চেহারা পেতে ছেলেদের মতো মেয়েদেরও কার্ডিয়ো এবং হালকা ওয়েট ট্রেনিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ধরনের ওয়ার্কআউট শরীরকে ভিতর থেকে মজবুত করে। দৌড়নো, জগিংয়ের পাশাপাশি অ্যারোবিক্স, জ়ুম্বা, পিলাতেস করতে পারলে ভাল। ‘‘মেয়েদেরও আমরা শোল্ডার স্ট্রেংথনিং ওয়ার্কআউট, পুশআপস, অ্যাবস ওয়ার্কআউট দিয়ে থাকি। হালকা ওজনের ডাম্বল দিয়ে স্কোয়াট করতে হবে হিপ ও থাইয়ের পেশির জন্য। বাইসেপ-ট্রাইসেপের এক্সারসাইজ় করতে হবে হালকা ওজন নিয়ে,’’ বক্তব্য সৌমেন দাসের।
মেয়েদের জন্য আড়াই কেজি থেকে পাঁচ কিলোর বেশি ওজন প্রয়োজন নেই। প্লেন স্কোয়াট রড নিয়ে ১০ কাউন্টে দু’সেট ব্যায়াম প্রথম দিকে যথেষ্ট। হাতের জন্য আড়াই কিলো ওজনের ডাম্বেল নিয়ে বাইসেপ-ট্রাইসেপের এক্সারসাইজ় করতে হবে। মেয়েদের বেঞ্চ প্রেসে পাঁচ-সাত কিলো ওজন নিয়ে দশ কাউন্টে তিন সেট। পেটের মাসলের জন্য প্ল্যাঙ্ক ও ক্রাঞ্চ ভাল কাজ দেবে। চেহারা অনুযায়ী কাউন্ট নির্ভর করে।
এই ধরনের চেহারা এক-দু’দিনের বিষয় নয়। অন্তত মাস পাঁচেকের পরিশ্রম প্রয়োজন। যাঁরা নতুন শারীরচর্চা শুরু করেছেন, তাঁদের আরও একটু সময় লাগবে। মেদ ঝরিয়ে শরীরকে কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। শুধু ব্যায়ামে হবে না, বদল আনতে হবে জীবনযাপনেও। কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের ভারসাম্য প্রয়োজন খাদ্যতালিকায়। রাত জাগা, ধূমপান, বেহিসেবি অ্যালকোহল পান... এগুলো আপনাকে কাঙ্ক্ষিত চেহারা পেতে বাধা দেবে।
বিশেষ চেহারা পেতে গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। শরীরের গঠন, ওজন, রোগব্যাধি... জেনে বুঝে ট্রেনার ঠিক করে দেবে আপনার ব্যায়াম চার্ট।