রেঁধে বেড়ে পাত পেড়ে খাওয়াতে ভালবাসেন, এমন বাঙালি এখনও খুঁজলেই পাওয়া যাবে ঘরে ঘরে। অনেক সময়ে নিজে না রাঁধলেও বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে আনানো খাবার দিয়েও অতিথি আপ্যায়ন করে থাকি আমরা। খাবার যে ভাবেই আসুক, টেবিল পর্যন্ত আসার পরে তা সাজিয়ে পরিবেশন করাটা হোস্টের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। লাঞ্চ হোক কিংবা ডিনার, অথবা সান্ধ্যকালীন আড্ডায় সঙ্গত করার মতো খুচরো খাবার— কী ভাবে টেবিল সাজিয়ে স্বাগত জানাবেন অতিথিদের, তার রকমফের জেনে রাখা জরুরি।
আয়োজনে ত্রুটি নেই
টেবিল সাজানোর নিয়ম রয়েছে অনেক রকমের। ট্র্যাডিশন মেনে যদি টেবিল সাজাতে চান, তা হলে বাঙালি মতে এক রকম আর বিলিতি মতে অন্য। খাবারের ধরন অনুযায়ীও পাল্টে যাবে টেবিল সাজানোর নিয়মকানুন। চাইনিজ় টেবিল আর কন্টিনেন্টাল আলাদা হতে বাধ্য। বন্ধু-আত্মীয়দের ক্ষেত্রে সাধারণত ফরম্যালিটি প্রাধান্য পায় না। আবার ধরুন যদি অফিসের কলিগ, সিনিয়র, বস কিংবা কোনও বিশেষ অতিথিকে ডাকেন লাঞ্চ বা ডিনারে, সে ক্ষেত্রে টেবিল সাজাতে হবে নিয়ম মেনে।
ফরম্যাল ডিনার বা লাঞ্চের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে টেবিল এটিকেট। সাজানো শুরু করুন একটা পরিষ্কার সাদা টেবিলক্লথ পেতে। স্যালাড, সুপ মেনুতে থাকলে স্যালাড প্লেট এবং সুপ বোল প্রথমেই রাখতে হবে। ন্যাপকিন সমেত রাখা ডিনার প্লেটের বাঁ দিকে ফর্ক এবং ডান দিকে স্পুন ও নাইফ রাখুন। ডিজ়ার্ট স্পুন কিংবা কেক ফর্ক রাখতে হয় প্লেটের আনুভূমিক বিন্যাসে। জল কিংবা অন্যান্য পানীয়ের গ্লাস থাকবে উপরের ডান দিকের অংশে। টেবিল সেটিংয়ের খুঁটিনাটি জেনে রাখুন আগেভাগেই।
পহেলে দর্শনধারী
আয়োজন যদি হয় বন্ধুবান্ধবের জন্য, তা হলে নিয়মকানুনের বদলে মাথা ঘামান টেবিলের সৌন্দর্য নিয়ে। সাধারণ কাটলারি সেট, সল্ট অ্যান্ড পেপার সেট, সুগার বোল, ন্যাপকিন হোল্ডার, ড্রিঙ্ক কোস্টার দিয়েই ডাইনিং টেবিলের শোভা বাড়ানো যেতে পারে কয়েক গুণ। ডিনার টেবিল মোহময় হয়ে উঠতে পারে ক্যান্ডল স্ট্যান্ড কিংবা ছোট ফ্লাওয়ার ভাসের ব্যবহারে। কিছু ক্ষেত্রে ছোটখাটো শো-পিসও ভাল লাগে দেখতে। চাই শুধু ঠিকঠাক প্লেসমেন্ট। টেবিল সাজানোর ক্ষেত্রে আরও একটি জরুরি বিষয় হল বাসনপত্রের ব্যবহার। কী ধরনের সার্ভিং প্লেটে কাবাব পরিবেশন করা উচিত, কোন ধরনের রেকাবিতে দেওয়া যেতে পারে মাছের পদ, ডিজ়ার্ট প্লেটই বা কেমন হবে— সে সব বিষয়ে খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সেরামিক বা কাচের স্ন্যাকস প্ল্যাটার-ট্রে, সুপ বোল সেট, ডিমসাম বা ওয়ানটন সার্ভ করার জন্য বেতের স্টিমার বাস্কেট, ডিজ়ার্ট সেট কিনে রাখতে পারেন। খাবারের ধরন অনুযায়ী পরিবেশন করুন সেই মতো। ধরুন, ডিনার টেবিলে আপনি হোল রোস্টেড চিকেন সার্ভ করছেন, তা হলে পর্যাপ্ত কাঁটা, চামচ এবং কোয়ার্টার প্লেট রাখতে হবে তার চারপাশে। যাতে প্রয়োজন মাফিক তুলে নিতে পারেন অতিথিরা। আবার যে কোনও ফ্রায়েড ডিশ সার্ভ করার ক্ষেত্রে জরুরি টিসু, যা প্লেটে তোলার আগেই অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে। টেবিলভর্তি ফিঙ্গার ফুড থাকলে পানীয়ের ব্যবস্থাও রাখতে হবে পাশাপাশি। চা-কফি হলে কেটলি সমেত বসিয়ে রাখতে পারেন টেবিলের এক পাশে, পাশের অংশে রাখুন কুকি জার এবং কাপ-প্লেট।
ভোজ কয় যাহারে
দুপুরে বাঙালি ভূরিভোজের আমন্ত্রণে সাধারণত ভাত ও তার সহযোগী পদই পরিবেশিত হয়। সে ক্ষেত্রে কাঁটা-ছুরি-চামচ ইত্যাদির বালাই নেই, কারণ কব্জি ডুবিয়ে না খেলে সাধারণত রসনা তৃপ্ত হয় না আমবাঙালির। তখন টেবিল সাজাতে হবে বাঙালি কেতায়। নিজে নিয়ে খাওয়া নয়, বরং বেড়ে দেওয়ার চল রয়েছে বাঙালি আপ্যায়নে। তাই টেবিলে বিছিয়ে রাখা রানারের উপরে খাবারের পাত্রগুলো রেখে দিন। পাশে হাতা। খাবারের প্লেট সাজানো থাকবে প্লেসম্যাটের উপরে। তবে অতিথি হাত দিয়ে মেখে খেতে অনভ্যস্ত হলে, কাঁটা-চামচের জোগান রাখা দরকারি। অতিথির সংখ্যা কম হলে একেবারে থালা এবং চার পাশে থরে থরে বাটি সাজিয়েও পরিবেশন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পাতের প্রথমেই ভাজা, ডান দিক থেকে শুক্তো, চচ্চড়ি, ডাল ইত্যাদি হয়ে অ্যান্টিক্লকওয়াইজ় সাজান মাছ-মাংসের বাটি। একেবারে বাঁ দিকে থাকবে দই, মিষ্টির প্লেট। জলের গ্লাস থাকবে যিনি খেতে বসছেন, তাঁর ডান দিকে। পাতে লেবু, লঙ্কা, নুন মাস্ট। কাউকে সাধে বা আইবুড়োভাতে নেমন্তন্ন করলে কাচের প্লেটের বদলে কাঁসা বা রুপোর প্লেট বার করে দিতে পারেন। তার উপরে কলাপাতা বিছিয়ে দিন। ডালের জন্য ডুমো হাতা, মাছের জন্য চওড়া রেকাবি ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
রান্না যেমনই হোক, বেড়ে দেওয়ার কায়দায় তা হয়ে উঠতে পারে আরও লোভনীয়। তাই এ বার বাড়ির সাজানো টেবিলই অভ্যর্থনা জানাবে আপনার অভ্যাগতদের।