ভাত খাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই একটু-একটু করে খাদ্যভাণ্ডারের সঙ্গে সন্তানকে পরিচয় করানোর পালা। তবে সেই খাবার নির্বাচনেও চিন্তাভাবনা জরুরি। কারণ সাত-আট মাসে ওরা সব খাবার খেতে পারে না। তখন সব দাঁত ওঠে না। তার সঙ্গে বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে। আবার এই বয়সেই শিশুদের শরীর ও মস্তিষ্কের গ্রোথ হয়। ফলে সুষম আহার খুব জরুরি। তাই সব দিক বিবেচনা করে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে হবে। একে-একে দেখে নেব, কী কী খাবার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে...
কী খাবে ওরা?
পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘বাড়িতে তৈরি খাবারই খাবে। তার মধ্যেই একটু ওর মতো খাবার বেছে নিতে হবে। যেমন ডালের মধ্যে অড়হর, ছোলা, মটর ওদের পক্ষে হজম করা সহজ নয়। তাই মুগ আর মুসুর ডাল দিন। প্রথম প্রথম ডালের জল দিতে পারেন। চাল ও ডাল দিয়ে খিচুড়ি রেঁধে দেওয়া যায়। সুজিও দেন অনেকে। এখন শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও বেশ বাড়ছে। তাই ওটস রেঁধে দিতে পারেন। এতে ওরা ফাইবার পাবে।’’ আবার লাউ, পেঁপে, ঝিঙে, গাজর জাতীয় আনাজ সিদ্ধ করে চটকে সেই ক্বাথ খাওয়ানো যেতে পারে।
ওদের রোজকার খাবারে প্রোটিনও রাখতে হবে। প্রথম প্রথম নরম মাছ বা জিওল মাছ দিয়ে শুরু করা যায়। শিঙি, মাগুরের মতো জিওল মাছ দিয়ে শুরু করা হয়, কারণ এতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শিশুদের জন্য ভাল। আর এই মাছগুলো নরম হয়। ফলে ওরা চট করে খেয়ে ফেলতে পারে। ‘‘তবে সন্তানকে প্রোটিন খাওয়ানোর ব্যাপারে মায়েরা একটু বেশি দিয়ে ফেলেন। অনেক সময়ে দেখা যায়, ওরা খেতে শেখার পরে দু’বছরের বাচ্চাকে হয়তো দুটো মাছ ভাজা দিয়ে দিলেন সকালে। সেটা করবেন না। একটা মাছের টুকরোই ওদের জন্য যথেষ্ট,’’ বললেন সুবর্ণা। ডিম খাওয়ানোর সময়েও প্রথম এক সপ্তাহ এক চামচ ডিম দিন। তার পরে দু’চামচ, তার পরে তিন-চার চামচ। এ ভাবে ক্রমশ পরিমাণ বাড়ান। এতে হজম করতেও সুবিধে হবে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘মাছ, মাংস ও ডিম ভাগে-ভাগে দেওয়া শুরু করা হয়। কোনও বাচ্চাকে আগে চিকেন তো কোনও বাচ্চাকে আগে ডিম। কারণ একসঙ্গে সব খাবার শুরু করে দিলে কোনওটায় যদি অ্যালার্জি হয়, তা হলে সেটা বুঝতে পারব না। তাই এক এক করে শুরু করা ভাল। এর সঙ্গে মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে খেতে পারে। সাত-সাড়ে সাত মাস থেকে ফলের রস দেওয়া হয়। আর ব্রেস্টফিড করানোটাও চলবে। বাইরের দুধ না দিয়ে সন্তানের দু’বছর হওয়া অবধি ব্রেস্টমিল্ক দিন। তবে খেয়াল রাখবেন, তা যেন সন্তানের অভ্যেস না হয়ে যায়। দিনে দু’তিন বার ব্রেস্টফিড করান।’’ কিন্তু সন্তানকে ঘুম পাড়াতে ব্রেস্টফিড করাবেন না। পরে সেই অভ্যেস ছাড়াতে অসুবিধে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে
শিশুদের মধ্যে এখন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ছে। তাই ফর্মুলার চেয়ে ঘরোয়া খাবার ও মায়ের বুকের দুধেই ভরসা রাখছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। দিনে এক বার সন্ধেবেলা ফর্মুলা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দিনে তিন-চার বার ফর্মুলা ফুড না খাইয়ে ঘরোয়া খাবারে অভ্যেস করানোই ভাল।
‘‘কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে অনেক মায়েরা মধু খাওয়ান। এ ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, সন্তানকে পাস্তুরাইজ়ড মধু খাওয়াতে হবে। ন্যাচারাল মধু থেকে অনেক সময়ে বটুলিজ়মের মতো রোগবালাই হতে দেখা যায় ওদের। তাই আনপ্রসেসড র মধু দেওয়া যাবে না। আর সন্তানকে সব ধরনের আনাজপাতি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। অনেক সময়ে বাচ্চারা কোনও আনাজের স্বাদ পছন্দ না করলে ফেলে দেয়। তখনই আবার সেই খাবার না দিয়ে এক মাস পরে আবার দিন। এ ভাবে ওকে সব খাবারে অভ্যেস করাতে হবে,’’ বললেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিস।
আর ফলের রসের বদলে ফল চটকে খাওয়ানোর পরামর্শ দিলেন সুবর্ণা, ‘‘ফলের রসে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ওরা আর চিবিয়ে খেতে চায় না। তাই আপেল সিদ্ধ চটকে বা কলাও খেতে পারে ওরা। এতে ফাইবারও পাবে। পরে ফল চিবিয়ে খাবে।’’
ভাতের সঙ্গে মায়ের দুধও দিয়ে যেতে হবে বলে জানালেন পুষ্টিবিদরা। কারণ দুধ থেকেই সে ক্যালশিয়াম ও প্রয়োজনীয় ভিটামিনের জোগান পাবে। তবে খাবার কী ভাবে খাওয়াচ্ছেন, তার উপরেও নির্ভর করে অনেকটা। কখনওই ভাত পেস্ট করে বোতলে পুরে খাওয়াবেন না। সুসিদ্ধ করে হাতে চটকে খাওয়ালে ওরা ফাইবারও পাবে, খেতেও শিখবে।