selfie

Selfie Addiction: ক্লাসেই দেদার নিজস্বী-ভিডিয়ো, মোবাইলে আসক্তি কমছে না পড়ুয়াদের

করোনা-পরবর্তী সময়ে স্কুলে স্কুলে অফলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও পড়ুয়াদের এমন মোবাইল-আসক্তি নিয়ে রীতিমতো জেরবার শিক্ষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২২ ০৮:৩৪
Share:

দু’বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মোবাইলে আসক্তি বেড়েছে পড়ুয়াদের। ফাইল ছবি

ক্লাসের মধ্যেই কখনও চলছে নিজস্বী বা ভিডিয়ো তোলা। কখনও আবার স্কুলের মধ্যেই দেদার অনলাইন গেম বা লুকিয়ে ওয়েবসাইট দেখা চলছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে স্কুলে স্কুলে অফলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও পড়ুয়াদের এমন মোবাইল-আসক্তি নিয়ে রীতিমতো জেরবার শিক্ষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ করা থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং— কোনও কিছুই পড়ুয়াদের স্কুলে মোবাইল আনা থেকে বিরত করতে পারছে না।

Advertisement

গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে মোবাইলে আসক্তি বেড়েছে পড়ুয়াদের। অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে বিনোদন, সবই মোবাইলের সাহায্যেই পূরণ করেছে পড়ুয়ারা। ফলে এখন অফলাইনে ক্লাস চালু হলেও পড়ুয়াদের সেই মোবাইলপ্রীতি কমানো যাচ্ছে না সহজে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, একাদশ ও দ্বাদশের পড়ুয়াদেরই স্কুলে মোবাইল আনার বেশি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কো-এড স্কুলেও এই প্রবণতা বেশি। এমনকি, স্কুলের মাঠে বা ফাঁকা ক্লাসে মোবাইলে নিজেদের ভিডিয়ো তুলে তা ইন্টারনেটে আপলোড করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে এই সব স্কুলের পড়ুয়াদের একাংশের মধ্যে।

সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলে ক্লাসে পড়ানোর ভিডিয়ো তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে দুই ছাত্র। তারা জানায়, ক্লাসের পড়া ভিডিয়ো করে রাখছিল যাতে বাড়িতে পড়া বুঝতে সমস্যা হলে তা ওই ভিডিয়ো দেখে বুঝে নিতে পারে! ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘সেই ভিডিয়ো তখনই মুছতে বলা হয়। কারণ ক্লাসের পড়া বাড়িতে বুঝতে এত দিন তো ভিডিয়োর প্রয়োজন হয়নি!’’

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, ‘‘এক পড়ুয়ার ফোন বাজেয়াপ্ত করে বন্ধ করতে গেলে দেখা যায়, তাতে কিছু অশ্লীল ছবি ও ভিডিয়ো রয়েছে। ওই সব ওয়েবসাইট স্কুল চলাকালীনই সার্চ করা হয়েছিল। ওই ছাত্রের বাবাকে ডেকে সে কথা জানানো হলে তিনি জানান যে, ফোন ছেলের হাতে না দিয়েও উপায় নেই। কারণ স্কুল থেকে সরাসরি গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যায় সে। সেখানে পড়ার সময়ে বিভিন্ন বিষয় বুঝতে মোবাইলের সাহায্য নিতে হয়।’’

কৃষ্ণাংশুর মতে, পড়া বোঝাতে অনেক সময়েই মোবাইলকে কাজে লাগানো যেতে পারে। হৃৎপিণ্ড থেকে কী ভাবে রক্ত সারা দেহে সঞ্চালিত হয়, তা ভাল করে বোঝাতে ইন্টারনেটে শিক্ষামূলক সাইটে গিয়ে ত্রিমাত্রিক ভিডিয়ো দেখালে তা আরও ভাল ভাবে বোঝানো যায়। কিন্তু পড়ুয়ারা যে শুধু পড়া বুঝতেই মোবাইল ব্যবহার করবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়— সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

তবে শুধু পড়ুয়ারাই নয়, স্কুলে অপ্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে শিক্ষকদের একাংশের বিরুদ্ধেও। বাঙুরের নারায়ণদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করে স্কুলে পড়ুয়াদের মোবাইল আনা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ক্লাসে ফোন না নিয়ে যেতে বলা হয়েছে শিক্ষকদেরও।’’ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘শিক্ষকেরাও স্কুলে ফোন বেশি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ আসছে। ক্লাসে যাওয়ার সময় হয়ে গেলেও শিক্ষক ফোনে কথা বলে যাচ্ছেন, এমন অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষকদের এ নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।’’

শিক্ষকদের একাংশের মতে, দ্বাদশের পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য সরকার থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেই ট্যাব স্কুলে আনতে বারণ করাও যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, ‘‘গত দু’বছর পড়ুয়ারা মোবাইল-নির্ভর পড়াশোনা করেছে। তাই তাড়াতাড়ি এই অভ্যাস বন্ধ করা যাবে না। স্কুলে এলে মোবাইলের বিকল্প আনন্দের খোঁজ ওদের দিতে হবে শিক্ষকদেরই।’’

সেই বিকল্প আনন্দের সন্ধান দিতেই সম্প্রতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘আশপাশের কয়েকটি স্কুল নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। দু’বছর মোবাইলেই আবদ্ধ ছিল পড়ুয়ারা, ফলে অনেকে খেলাধুলো করতেই যেন ভুলে গিয়েছে। মোবাইল ফেলে তারা যদি খেলাধুলোর জগতে ফেরে, তাই এই আয়োজন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement