দুধ না খেলেও হবে ভাল ছেলে।
মুগ ডাল, চিংড়ি, বেগুন থেকে অ্যালার্জির সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরা চাইলেই স্বচ্ছন্দে সেই সমস্ত জিনিস বাদ দিতে পারেন খাদ্যতালিকা থেকে। সেগুলি বাদ দিলেও এমন অনেক জিনিস তাঁরা খেতে পারেন, যা থেকে মিটে যায় চিংড়ি-মুগ-বেগুনের পুষ্টি। কিন্তু যদি সমস্যা হয় দুধ থেকে? যদি দুধ খেলেই নানা অস্বস্তি তৈরি হয়, তা হলে কী করবেন?
সমস্যা কোথায়?
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার অনেক সময়েই সহ্য করতে পারে না মানুষ। হয়তো দেখা গেল, দুধ খেলেই অ্যাসিডিটি বাড়ছে, পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। কখনও পেট খারাপও ক্রনিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরে দেখা যায়, দুধ বা দুধ থেকে তৈরি খাবার খাওয়া বন্ধ করলে সমস্যা আপনিই মিটে যাচ্ছে। শিশুর ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা গরুর দুধ এবং মায়ের দুধ— দু’টি থেকেই হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি দু’রকমের— ল্যাকটোজ় ইনটলার্যান্স এবং মিল্ক প্রোটিন অ্যালার্জি। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বলছেন, ‘‘গরুর দুধ তার সন্তানকে না খেতে দিয়ে, কেড়ে নিয়ে মানবসন্তানকে দেওয়াটাই ঘৃণ্য কাজ। প্রাথমিক ভাবে মায়ের দুধ চলে শিশুর জন্মের প্রথম ছ’মাস। তার পরে দাঁত উঠলে শিশুকে অল্প অল্প করে শক্ত খাবার খাওয়ানোর অভ্যেস করাতে হয়।’’ ভাত, আনাজ, ডাল, আলু... এগুলি রান্না করে খাওয়ানো যায় শিশুকে। শিশুর ল্যাকটোজ় ইনটলার্যান্স বা মিল্ক প্রোটিনে অ্যালার্জি থাকলে সমস্ত দুধ বাদ দেওয়া দরকার। ‘‘গরুর দুধ না খেলে অনেকেই ভয় পান, দুধের ক্যালশিয়াম শরীরে প্রবেশ করল না বলে। ব্রেস্ট মিল্কের চাইতে গরুর দুধে চার গুণ বেশি ক্যালশিয়াম থাকে ঠিকই। তবে সেই ক্যালশিয়াম ভাল ভাবে শোষণ করতে পারে না শরীর,’’ বলছেন ডা. ঘোষ।
সমস্যা প্রবীণদেরও
অ্যালার্জি বা ইনটলার্যান্স যে শুধু ছোটদের, তা নয়। অনেক সময়ে প্রবীণরাও এই সমস্যার মুখোমুখি হন। ডায়েটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘কেউ হয়তো দুধ খেতে পারলেন না। অথচ দই বা ছানায় তাঁর সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে তিনি স্বচ্ছন্দে খেতে পারেন সেগুলি। আর দুধের যে কোনও প্রডাক্টেই সমস্যা তৈরি হলে তার পরিবর্তে নেওয়া যেতে পারে সয় মিল্ক, টোফু, ডাল। তবে তার প্রোটিন সেকেন্ড ক্লাস।’’ দুধের পরিবর্তে
সয়, আমন্ড, নারকেলের দুধ— গরুর দুধের পরিবর্তে বেছে নেওয়া যেতে পারে এগুলি। তবে এগুলিতে অনেক সময়ে আলাদা করে চিনি মেশানো থাকে। দামও বেশি। পনিরের পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন সয় মিল্ক দিয়ে ৈতরি টোফু। প্রবীণরা ডায়েটিশিয়ান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হোয়ে প্রোটিনও খেতে পারেন। দুধের সমগোত্রীয় প্রোটিন সাধারণত অন্য খাবারে মেলে না। পরিবর্তে ডাল, মাছ খেতে পারেন। দুধে সমস্যা হলে মিষ্টি, মিল্কশেক, আইসক্রিমও সহ্য না হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমন্ড মিল্কের মিষ্টি, ভিগান আইসক্রিম খেতে হবে। দুধের পরিবর্তে স্বাদ ঘোলে মেটাতে হলেও, ডেয়ারি অ্যালার্জি বা ইনটলার্যান্সকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তবেই সুস্থ থাকবেন।