একেবারে না সারলেও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে নিয়ন্ত্রণে থাকে এ রোগ
Skin diseases

Rosacea: সচেতন হলে রোজ়েশিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়

কেন হয় রোজ়েশিয়া? এই সমস্যার সমাধানই বা কী?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:০৬
Share:

অনেকের গালেই লাল র্যাশ ও ব্রণর মতো সমস্যা দেখা দেয়। হাজার চিকিৎসা, ত্বক পরিচর্যা করেও রেহাই মেলে না। রোদে বেরোলে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। ত্বকের এই সমস্যার নাম রোজ়েশিয়া। কিন্তু কেন হয় রোজ়েশিয়া? এই সমস্যার সমাধানই বা কী?

Advertisement

রোজ়েশিয়া কেন হয়?

Advertisement

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর বললেন, ‘‘রোগটি আসলে জিনঘটিত। মা-বাবার কারও এই রোগ থাকলে সন্তানের মধ্যেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক সময়ে মা-বাবার মধ্যে রোগটি প্রকট না হলেও সন্তানের মধ্যে তা প্রকট হতে পারে। এই রোগ একেবারে সারে না। রোজ়েশিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হয়।’’ অ্যাকনে যেমন টিনএজারদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, তেমন এই রোগটা আবার মধ্যবয়স পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। মোটামুটি ১৭-১৮ থেকে ৩৫-৪০ বছর বয়স পর্যন্ত রোজ়েশিয়া হতে পারে। আর অ্যাকনে হলে তাতে ব্যথা হতে পারে, কিন্তু রোজ়েশিয়ায় ব্যথা হয় না।

রোগের লক্ষণ

ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, লাল ব্রণ, তার মধ্যে পুঁজ হওয়া... এ সবই মূলত রোজ়েশিয়ার লক্ষণ। তবে এই রোগের অনেক ধরন রয়েছে। সেই অনুযায়ী রোগের লক্ষণও বদলাতে থাকে।

• ইটিআর রোজ়েশিয়া: এরিথেম্যাটোটেল্যাঙ্গিয়েকট্যাটিক রোজ়েশিয়া বা সংক্ষেপে ইটিআর রোজ়েশিয়া মূলত ত্বকে হয়। এর ফলে ত্বক লাল হয়ে যায়। ত্বক খুব শুষ্ক ও রুক্ষও হয়ে যায়। আর ত্বকে শিরাও খুব স্পষ্ট বোঝা যায়।

• প্যাপুলোপাস্টুলার রোজ়েশিয়া: একে অ্যাকনে রোজ়েশিয়াও বলে। এই রোগে অ্যাকনের মধ্যে পুঁজ জমে, লাল হয়ে ফুলে যায়। মধ্য বয়সের মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের রোজ়েশিয়া হতে বেশি দেখা যায়।

• রাইনোফাইমা: এটা নাকে দেখা যায়। নাকের ত্বক পুরু হতে থাকে। আর নাক ক্রমশ ফুলে বড় হয়ে যায়। নাকটা এত বড় হয়ে যায় বলেই একে রাইনোফাইমা বলা হয়। এটা সাধারণত পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। রোমকূপও বড় হতে থাকে। বছর দুয়েক মতো চিকিৎসা করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। রোগ নিয়ন্ত্রণে এলে প্লাস্টিক সার্জারি করে নাকের গড়ন আবার ঠিক করে দেওয়া হয়।

• অকিউলার রোজ়েশিয়া: ‘‘চোখেও হতে পারে এই রোগ। ত্বকে হলে রোগটি খুব ক্ষতি করে না। কিন্তু চোখে হলে তা গুরুতর। প্রথমে চোখ লাল হয়ে আসে। চোখে কিছু পড়েছে মনে হতে পারে। কর্নিয়া আলসারও হতে পারে। তা থেকে পরবর্তী কালে চোখে অন্ধত্ব চলে আসতে পারে। তাই এই রোগের সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তাই ত্বকে রোজ়েশিয়ার সমস্যা নিয়ে কোনও রোগী এলে তাঁকে আই চেকআপ করাতে বলা হয়। অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, রোগীর হয়তো নিজের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু আই চেকআপের পরে কর্নিয়ায় ছোট ছোট গ্র্যানিউল বা দানার মতো ধরা পড়েছে। আর মনে রাখতে হবে, ত্বকে রোজ়েশিয়া না হলেও শুধু অকিউলার রোজ়েশিয়া হতে পারে।’’ তাই সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঠিক রোগনির্ণয় করা জরুরি।

রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যা-যা করণীয়

• গরম চা, কফি বা পানীয় খাওয়া চলবে না। কারণ গরম খাবারে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে গেলে তা থেকে রোজ়েশিয়া বাড়তে থাকে।

• রোদে যাওয়া চলবে না। সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সরাসরি রোদ লাগলে এই রোগ বেড়ে যায়।

• অ্যালকোহলও বর্জন করতে হবে। এটিও ট্রিগার করে রোজ়েশিয়া।

• সুইমিং পুলের ক্লোরিনেটেড জলে নামার আগেও ত্বকের জন্য উপযুক্ত মেডিকেটেড ক্রিম, লোশন লাগাতে হবে। ক্লোরিনে ত্বকের সমস্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলকানিও হতে পারে।

কী ওষুধ ব্যবহার করা যায়?

ক্লিনডামাইসিন লাগানো যেতে পারে। ডা. সন্দীপন ধর বলছেন, ‘‘রিফ্যামপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যায়। এই ধরনের ওষুধে রোজ়েশিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই ওষুধ খাওয়া শুরু করার ৫-৬ মাস পরে রোজ়েশিয়া কমে গেলেও তার তিন-চার মাস পরে আবার রোগটির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তখন আবার ওষুধের ডোজ় দেওয়া হয়। এ ভাবে চিকিৎসাধীন থাকলে ক্রমে ক্রমে তা কমে আসে। আর গর্ভাবস্থাতেও এই ওষুধ খাওয়া যায়। কারণ এই ওষুধ পাকস্থলী থেকে সোজা ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এটা শরীর গ্রহণ করে না।’’

এই রোগ কি সারে?

রোজ়েশিয়ার চিকিৎসা দীর্ঘদিন করে যেতে হয়। ৮-১০ বছর চিকিৎসা করার পরে এই রোগের সিভিয়রিটি অনেকাংশে কমে যায়। একটা বয়সের পরে রোগের লক্ষণও আর সে ভাবে প্রকট থাকে না। বেশি বয়সে এই ধরনের রোগ হতে খুব একটা দেখা যায় না। তবে রোজ়েশিয়া হলে খুব দ্রুত তা কখনও সারে না।

মেকআপ করা ঠিক?

মডেল বা অভিনেত্রীদের নিয়মিত মেকআপ করতে হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মেকআপ সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে বলে জানালেন ডা. সন্দীপন ধর। যেহেতু কড়া আলোয় শুটিং চলে, তাই তা রোজ়েশিয়া ত্বকের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর। কড়া আলো, রোদ, গরমে ত্বকের এই সমস্যা বাড়ে। তখন মেকআপ করা থাকলে তা একটা বর্ম তৈরি করে ত্বকের উপরে। তবে কী ধরনের মেকআপ ব্যবহার করছেন, সেটা অবশ্যই বিবেচ্য। এমন কোনও রাসায়নিক-যুক্ত মেকআপ প্রডাক্ট ব্যবহার করবেন না, যা এই রোগটি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ত্বকের এই সমস্যা অবহেলা করবেন না। বিশেষত ত্বকে এই সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন ও একটি রুটিন আই চেকআপ করাও জরুরি। রোজ়েশিয়া একেবারে না সারলেও তা যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা হলে কিন্তু অনেকটা সুরাহা মিলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement