সমাজমাধ্যমে পরিচয় হওয়া এক যুবকের নাড়িনক্ষত্র না জেনেই তাঁর সঙ্গে ‘লিভ ইন’ সম্পর্কে যাওয়া কাল হল শ্রদ্ধার জীবনে? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ভারতের সব সংবাদপত্রের শিরোনাম জুড়ে আফতাব-শ্রদ্ধার প্রেমকাহিনির চর্চা! যাঁকে ভালবাসা যায়, তাঁকে এত নির্মম ভাবে হত্যা করা যেতে পারে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না আপামর দেশবাসী। আফতাব-শ্রদ্ধার ফ্ল্যাট থেকে প্রায়শই মারপিট, বাগ্বিতণ্ডা এবং তর্কাতর্কির আওয়াজ শোনা যেত! প্রায়ই নাকি শ্রদ্ধার উপর ‘পাশবিক অত্যাচার’ও করতেন অভিযুক্ত প্রেমিক আফতাব। দিল্লির মেহরৌলি-হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন তাঁদের প্রতিবেশী। তবে কি ডেটিং অ্যাপে পরিচয় হওয়া এক যুবকের নাড়িনক্ষত্র না জেনেই তাঁর সঙ্গে ‘লিভ ইন’ সম্পর্কে যাওয়া কাল হল শ্রদ্ধার জীবনে? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
‘লিভ ইন’। আধুনিক দুনিয়ায় খুবই পরিচিত শব্দ। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাস করেন না, এমন মানুষ কম নেই। লিভ ইনে যেমন বিবাহিত জীবনের রোজনামচাও মেলে, তেমনই আবার ধরাবাঁধা ছকে বাঁধা না পড়ে মুক্তির স্বাদও উপভোগ করা যায়। এই প্রজন্মের অনেকেই তাই ব্যস্ত জীবনে বিয়ের চেয়ে লিভ ইনকে বেশি গুরুত্ব দেন।
তবে হঠকারিতায় লিভ ইনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে পরে পস্তাতে হয়। তখন ফেরার উপায় থাকলেও জীবন অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হয়। একে অপরের বিষয়ে ভাল করে না জেনে একত্রবাস শুরু করলে বিপদ কিন্তু থেকেই যায়। শ্রদ্ধার মতো পরিণতি হওয়াও অস্বাভিক কিছু নয়। তাই সঙ্গী ও আপনি দু’জনেই লিভ ইন করতে চাইলে মনে রাখুন কিছু জরুরি বিষয়। দু’জনেই মেনে চলুন এই ক’টা প্রয়োজনীয় দিক।
১) স্রেফ নতুন কিছুর স্বাদ নিতে চেয়ে জীবন নিয়ে পরীক্ষা করবেন না। বরং লিভ ইনের ইচ্ছা ও যুক্তি নিয়ে নিজেদের মধ্যে স্পষ্ট বোঝাপড়া থাকলে তবেই এই পথে পা দিন। যাঁর সঙ্গে থাকছেন, তাঁর বিষয় যাবতীয় খোজখবর নিয়ে তবেই একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেবেন। ডেটিং অ্যাপে আলাপ হয় শ্রদ্ধা-আফতাবের। আফতাবকে কি আদৌ ভাল করে চিনতে পেরেছিলেন শ্রদ্ধা? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
২) লিভ ইনে থাকতে চাইলে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দায়িত্ব ভাগ ঠিক বিয়ের মতো না-ও হতে পারে। তাই কোন দায়িত্ব কে নেবেন, আর্থিক দিকেও কার কতটা অবদান থাকবে, সে সম্পর্কে দু’জনের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা থাকুক প্রথম দিন থেকেই।
সূত্রের মতে, শ্রদ্ধা আফতাবকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, সেই চাপের কারণেই কি আফতাবের হাতে খুন হতে হল শ্রদ্ধাকে? ছবি: সংগৃহীত।
৩) কেন লিভ ইন করতে চাইছেন, এর ব্যাখ্যা এক এক জনের কাছে এক এক রকম হতই পারে। তাই দু’জনেই পরস্পরের কাছে নিজেদের ভাবনা ও মত নিয়ে স্বচ্ছ থাকুন। অনেকেই ধারণা থাকে যে, বিয়ের আগে সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়া হয় কি না, তা যাচাই করতে লিভ ইনে থাকেন। কেউ আবার বিবাহবন্ধনের জটিলতা এড়িয়ে চলার জন্যই লিভ ইনে যান। সূত্রের মতে, শ্রদ্ধা আফতাবকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। সেই চাপের কারণেই কি আফতাবের হাতে খুন হতে হল শ্রদ্ধাকে? সে প্রশ্ন আসছে অনেকের মনেই।
৪) অনেকে বাড়িতে না জানিয়ে লিভ ইন সম্পর্কে যান। অনেকে আবার বাড়ির অমতে গিয়ে লিভ ইন করেন। আপনার সম্পর্কে যদি বাড়ির লোকের মত না থাকে, তা হলে কোনও বন্ধু বা প্রিয়জন বা আত্মীয়কে আপনি কোথায় থাকছেন, কার সঙ্গে থাকছেন এবং আপনার সঙ্গীর ব্যাপারে কিছু খুঁটিনাটি অবশ্যই জানিয়ে রাখবেন। এ ক্ষেত্রে নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। শ্রদ্ধাও বাড়ির অমতে গিয়ে লিভ ইন শুরু করেন। নিজের পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না বলেই জেনেছে পুলিশ। তবে কি সে কারণেই কেউ জানতে পারলেন না যে তিনি সমস্যায় আছেন, সে প্রশ্ন উঠছেই।
৫) লিভ ইন তো বিয়ে নয়। যদি ভাবেন যে বিয়ের মতো একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা হলে সে ভাবনা আপনার মনের ভুল। দায়দায়িত্ব নিয়ে খুব সচেতন না হলে লিভ ইনে যাওয়া কঠিন হতেই পারে। বিয়ের পরেও কিছু কিছু অভ্যাস নতুন করে তৈরি হয়, কিছু অভ্যাসে রাশ টানতে হয়। লিভ ইনেও তা-ই। তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ের থেকে একটু আলাদা। সম্পর্ক নিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হলে তবেই লিভ ইনে থাকতে শুরু করা শ্রেয়।
শ্রদ্ধা কি লিভ ইনে থাকার আগে এত সব ভেবেছিলেন? সে সব প্রশ্ন উঠছেই।