একসঙ্গে একের বেশি মানুষকে ভালবাসা যায় কি? ছবি: প্রতীকী
প্রেমিকার সঙ্গে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছেন। হঠাৎ সেখানে আসা স্বল্পপরিচিত তরুণীর সঙ্গে দৃষ্টিবিনিময় হল। সেই এক মুহূর্তে এমন কিছু হল যাতে মনে হল তিনি কত যুগের চেনা। সেই থেকে গড়ে উঠল যোগাযোগ। সেই যোগাযোগকে কিছু দিন পর আর বন্ধুত্বে আটকে রাখা গেল না। কিন্তু আপনি তো ইতিমধ্যেই একটি সম্পর্কে আছেন! ও দিকে সম্পর্কের বাইরে সেই দ্বিতীয় মানুষটিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এমন ঘটনা সমাজে খুব একটা বিরল নয়। তবু এমন কোনও ঘটনা ঘটলে সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের মনে নৈতিকতা সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন এসেই যায়। এই ধরনের সম্পর্ক বা টান কি সত্যিই ভালবাসা? না কি নিছকই জৈবিক প্রবৃত্তি?
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন এই ধরনের ভালবাসা নিয়ে। কিংবা একে আদৌ ভালবাসা বলা যায় কি না, তা নিয়ে। একসঙ্গে একের বেশি মানুষকে ভালবাসা যায় কি?
শহরের একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সায়ন মজুমদার বলেন, “একে ভালবাসা না বলার কী আছে? যে কোনও সম্পর্কই আসলে দু’টি মানুষের পারস্পরিক বিনিময়। এক ধরনের ব্যক্তিগত রাজনীতি। একাধিক সম্পর্ক আমাদের আশপাশে অনেকেরই হয়।” তাঁর আরও বক্তব্য আছে। “আমরা তো একসঙ্গেই বাবা এবং মাকে ভালবাসতে পারি। একাধিক ভাই-বোন থাকলে, তাঁদের প্রতিও ভালবাসা সমান। তবে প্রেমের সম্পর্কে এক জনের অধিক মানুষের সঙ্গে জড়ানো যাবে না কেন,” প্রশ্ন তাঁর।
সায়নের সঙ্গে অবশ্য একমত নন শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা বসুধা ঘটক। তাঁর কথায়, “প্রণয়ের সম্পর্কে এক ধরনের সমর্পণ লাগে। বাবা-মা, ভাই-বোন এই সম্পর্কগুলি তো আমরা নিয়েই জন্মাই। কিন্তু প্রেম এমন একটা জিনিস, যেখানে আর এক জন মানুষের মধ্যে নিজেকে পূর্ণতর ভাবে খুঁজে পায় মানুষ। সেখানে তো অধিকারবোধ থাকবেই।” প্রেমে সকলেই ‘ঘরে-বাইরে’-র ‘নিখিলেশ’ হতে পারে না বলে মত তাঁর। এমনকি, যদি নিখিলেশ হয়ও, তবু সেটা প্রেমেরই একটি রূপ, মত বসুধার।
সম্পর্ক যে হেতু ব্যক্তিগত একটি বিষয়, তাই কে কী করবেন, তা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ছবি: প্রতীকী
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেতা প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন। তাঁর বক্তব্য, প্রণয়কে একটিতে বেঁধে রাখার যে চল, তাতে কোথাও না কোথাও সামাজিক কিছু জটিলতা এড়াতে চাওয়ার চেষ্টা রয়েছে। অভিনেতা এ-ও বলেন, “এমনিতেই কেউ স্বীকার করুন বা না করুন অনেকেরই অসূয়া প্রবল। বিশেষ করে প্রেমে। তা ছাড়া প্রণয়ের পরবর্তী ধাপ হিসাবে অনেকেই বিয়েকে দেখেন। আর বিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক নানা হিসেবনিকেশ। ফলে একই সময় এক জনের বেশি মানুষের প্রেমে পড়লে সমস্যা।”
কিন্তু তাই বলে কি এমন ঘটনা ঘটে না? এই ক্ষেত্রে কিন্তু তিন জনই একমত। তিন জনই বললেন, ঘটে। অহরহ ঘটে। যতটুকু প্রকাশ্যে আসে তার থেকে বহুগুণ বেশি ঘটে। কিন্তু সম্পর্ক যে হেতু ব্যক্তিগত একটি বিষয়, তাই কে কী করবেন, তা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কেবল খেয়াল রাখতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত যেন অন্য কারও দুর্গতির কারণ না হয়।