খুদের জিজ্ঞাসু মনকে উৎসাহিত করুন। ছবি: সংগৃহীত।
পড়তে বসলেই প্রশ্ন শুরু হয় চার বছরের পৃথার। প্রথম প্রথম তাঁর মা, দিদিমণি সামলেছেন। কিন্তু এখন যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
পড়ার সময় নয়, সারা দিনেই এটা-ওটা দেখে যাকে সামনে পায় প্রশ্ন করে রৌদ্র। পাঁচ বছরেই বিজ্ঞ ভাব। প্রশ্নের উত্তর শোনেও মন দিয়ে। কিন্তু সন্তানের প্রশ্নে এক এক সময় কী উত্তর দেবেন, ভেবে পান না বাবা-মা।
খুদের প্রশ্ন নিয়ে অনেক সময়েই জেরবার হয়ে যান বাবা-মায়েরা। কখনও আবার বোঝেন, ঠিক উত্তরটা জানা নেই। এমন মুহূর্তে কী করবেন, অভিভাবকেরা ভেবে পান না। খুদেকে চুপ করিয়ে দিলেই কি প্রশ্ন থামবে? কী ভাবে সন্তানের কৌতূহলস্পৃহা মেটাবেন, কী ভাবেই বা ঠেকাবেন প্রশ্নবাণ, জানালেন পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ ও মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ।
পায়েল বলছেন, ‘‘শিশুদের প্রশ্নবোধক মন দু'রকম। কেউ প্রকৃত অর্থেই জানতে চায়। মন দিয়ে শোনে। আবার একদল শিশু, স্কুল হোক বা বাড়ি, পড়াতে বসলেই প্রশ্নের ঝুলি উপুড় করে বসে। উত্তর শোনার চেয়ে, প্রশ্ন করাতেই তাদের আগ্রহ বেশি। তারা কিছুটা মনোযোগ আকর্ষণের জন্যই এমন করে।’’
তবে, প্রশ্ন করার এই প্রবণতাকে কখনও বাধা দেওয়া উচিত নয় বলেই জানাচ্ছেন মোহিত রণদীপ। এতে তাদের কৌতূহলস্পৃহা নষ্ট হতে পারে। বরং যখন আর উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তখন অভিভাবকেরা তাকে বলতে পারেন, এখন নয়, আবার পরে।
কী ভাবে মিটবে খুদের কৌতূহলস্পৃহা?
পায়েলের কথায়, যথা সম্ভব সুন্দর করে গুছিয়ে বিরক্ত না হয়ে শিশুর জিজ্ঞাসা পূরণ করতে হবে। এই জিজ্ঞাসা, জানার স্পৃহা খুদের বাগ্মিতাকে উদ্বুদ্ধ করে। ধৈর্য ধরতেই হবে। তবে শিশুর প্রশ্নের উত্তর যেমন-তেমন ভাবে দিলে চলবে না। শিশুরা অনেক সময় এমন অনেক প্রশ্ন করে বসে, যার উত্তর দিতে না পেরে বাবা-মায়েরা হয় এড়িয়ে যান, নয়তো এমন কোনও কথা বলেন, যার ভিত্তি নেই। যেমন বহু খুদে বাবা-মায়ের বিয়ের ছবি দেখে প্রশ্ন করে আমি নেই কেন বা আমি কোথা থেকে এলাম। কিন্তু, তার কোনও সদুত্তর তাকে দেওয়া হয় না। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট বলছেন, ‘‘সহজ ভাবে বলতে পারেন, তুমি আমার পেটের ভিতরে ছিলে। তার পর যখন বড় হয়ে গেলে, আর তো ধরছিল না। তখন ডাক্তারবাবু পেটে কেটে তোমাকে বার করে দিলেন। কিংবা, আমি আর তোমার বাবা দু’জনেই চেয়েছিলাম বলে তোমাকে এনেছি।’’
মোহিত জানালেন, হতে পারে কোনও প্রশ্নের উত্তর বাবা-মায়ের জানা নেই।সেই সময় অভিভাবকেরা খুদেকে নিয়েই বইয়ের পাতায় খুঁজতে পারেন এর উত্তর। তা হলে শিশুও জানতে পারে প্রশ্নের উত্তর কোথা থেকে পাওয়া যায়।
পড়তে বসলেই প্রশ্ন
কোনও কোনও শিশু পড়তে বসলেই অসংখ্য প্রশ্ন শুরু করে। তাদের সামলাতে পায়েল ঘোষ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে বলছেন। পড়ার ফাঁকে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একটি সময় নির্দিষ্ট করা। খুদে প্রশ্ন করলেই তাকে বলা যেতে পারে সেটি মনে রাখতে, নয়তো কোথাও লিখে রাখতে। পড়ার মাঝে বা পড়া শেষ হলে সব প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দেওয়া হবে।
ভীষণ বিরক্ত করলে
অতিরিক্ত বিরক্ত করলে তাদের মন অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করা যেতে পারে বা বলা যেতে পারে, রাতে বাড়িতে ফিরে তাকে উত্তর দেওয়া হবে। তবে কথা দিলে, সেই কথা রাখতেও হবে। শিশুরা অনুসন্ধিৎসা বাধাপ্রাপ্ত হলে তা তার মানসিক বিকাশের পক্ষে ক্ষতিকর হবে।