সমাজমাধ্যমের কারণে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে? প্রতীকী ছবি।
ঘন ঘন নিজস্বী তোলেন? ফেসবুক-টুইটারে ভাগ করেন নানা দিনের স্মৃতি? এমন মানুষ কিন্তু আমাদের চারপাশে কম নেই। দিনভরই সমাজমাধ্যমের পাতায় চোখ। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে সর্ব ক্ষণ বুঁদ হয়ে আছেন। সমাজমাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি এবং দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব তো ফেলছেই, ক্ষতি করছে কাছের সম্পর্কগুলিরও।
রাত জেগে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে আড্ডা দেওয়া কিংবা ফেসবুকের নিউজ ফিডে নজর দিতে গিয়ে কখন যে ঘুমের বরাদ্দ সময় ফুরিয়ে যায়, তা বুঝেই উঠতে পারেন না অনেকে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের পাশাপাশি মনের ক্লান্তিও বাড়ে। তখন ছোটখাটো বিষয়ে উদ্বেগ শুরু হয়। মেজাজ খিটখিটে থাকে। অন্যের সঙ্গে ব্যবহারেও তা প্রকাশ পায়।
এ বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সমাজমাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি প্রতি দিনের জীবনে পারিবারিক সম্পর্কে কুপ্রভাব ফেলছে। মানসিক চাপে ভুক্তভোগীদের বড় অংশ চাপ কমানোর জন্য বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য ব্যবহার করছেন, কেউ কেউ মদ বা তামাকজাত দ্রব্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ভার্চুয়াল বন্ধুর দামি গাড়ি বা সাজানো বাড়ির ছবি মনে ঈর্ষা জাগাচ্ছে, স্নায়ুজনিত উত্তেজনাও তৈরি করছে। অন্যের সঙ্গে তুলনা টানতে টানতে কাছের সম্পর্কগুলি অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।
অনিন্দিতার কথায়, সমাজমাধ্যমের নেশাকে ‘আচরণগত আসক্তি’ বলা হয়। দেখা গিয়েছে, যাঁরা বেশি সময় সমাজমাধ্যমে কাটান, তাঁরা আশপাশের সম্পর্কগুলিকে তেমন ভাবে গুরুত্ব দিতে চান না। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির কিশোর-কিশোরীদের। অনেকেই বলেন, বন্ধুদের বাবা-মায়েদের মতো তাঁদের মা-বাবা দামি জিনিস কিনে দিচ্ছেন না, বিদেশ ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছেন না। এই নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে নিরন্তর লড়াই লেগেই আছে। আবার প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্কেও প্রভাব পড়ছে। সমাজমাধ্যমে অন্যের সঙ্গে চ্যাট, ছবিতে লাইক বা কমেন্ট দেওয়াকে ঘিরে সন্দেহ, মনোমালিন্য, ঝগড়া-অশান্তিও বাড়ছে। এমনও দেখা গিয়েছে, অনেক সম্পর্ক ভাঙনের মূলেও আছে এই সমাজমাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি। তাই এই নেশা থেকে বেরোতে গেলে ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে বাস্তবের দিকে নজর ফেরাতেই হবে। বাড়ির বয়স্কদের সময় দেওয়া, পরিবারের সঙ্গে আড্ডা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, সন্তানকে সময় দেওয়ার মাধ্যমেই এই নেশা কাটানো সম্ভব।