শিশুর মনে আত্মবিশ্বাস জাগাতে হবে, কী ভাবে তা সম্ভব? ছবি: ফ্রিপিক।
তেমন বলিয়ে-কইয়ে না হলে আজকালকার দিনে পথ চলা খুবই কঠিন। অনেক বাবা-মায়েরাই বলে থাকেন, তাঁদের সন্তান খুবই লাজুক প্রকৃতির। বড়দের সঙ্গে তো বটেই, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গেও মিশতে পারে না। অনেক লোকজন দেখলে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত, সলজ্জ ভাব চরিত্রেরই একটি বৈশিষ্ট্য। প্রথম থেকে একে নেতিবাচক হিসেবে দেখা ঠিক নয়। কিন্তু যদি দেখা যায়, শিশু কারও সঙ্গেই মিশতে পারছে না, নিজের ভাবনাও বোঝাতে পারছে না, মনগড়া কল্পনার জগতে রয়েছে, তখন চিন্তার কারণ আছে বইকি!
অনিন্দিতা জানাচ্ছেন, শিশুর জড়তা কাটাতে অনেক অভিভাবকই জোর করে তাদের বহুজনের মাঝে নিয়ে গিয়ে মেলামেশা করানোর চেষ্টা করেন। অন্যের সঙ্গে তুলনাও টানেন। এতে শিশুর মনে আতঙ্ক বাসা বাঁধে। সমস্যা তো কমেই না, উল্টে শিশু আরও বেশি নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই শাসন না করে, বরং শিশুর মনে আত্মবিশ্বাস তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে।
শিশুর জড়তা কাটানোর কিছু উপায়
সন্তান যদি সব সময় নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখে, খেলতে যেতে না চায়, স্কুলে যেতে না চায়, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেও না চায়, তা হলে বিষয়টি চিন্তার। শিশুর সঙ্গে কথা বলে বুঝুন, সে হীনম্মন্যতার শিকার কি না। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলাই এ ক্ষেত্রে প্রথম করণীয়।
অনিন্দিতার পরামর্শ, সন্তানকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। নিয়ম করে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন, সিনেমা দেখান বা রেস্তরাঁয় নিয়ে যান। তা হলে ওর ভালও লাগবে, আবার অনেকের মাঝে থাকতে স্বচ্ছন্দও হবে।
বেশির ভাগ লাজুক শিশুই বাইরের লোকের সামনে লজ্জা পায়। অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় নীচে বা দূরে তাকিয়ে কথা বলে। অথচ বাড়িতে সাবলীল থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান বা ক্যুইজ়ের আয়োজন করুন। পরিবারের সকলকে ডাকুন ও তাতে যোগ দিতে বলুন। সকলে মিলে শামিল হলে দেখবেন শিশুর জড়তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। আত্মবিশ্বাস ফিরবে।
আপনার সন্তান কোন ধরনের সঙ্গ পছন্দ করে সেটা বুঝুন। ওকে তেমন পরিবেশে রাখার চেষ্টা করুন।
বহির্বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সন্তানকে অবহিত করার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই। কোন বিষয়টি সন্তানের পছন্দ তা নিয়ে মুখোমুখি বসে আলোচনা করুন। নিয়মিত চর্চা করুন।দেখবেন ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগ্রহ বাড়ছে।
সমবয়সি কারও সঙ্গে তুলনা টানা বা অকারণে কটু কথা বললে শিশু আরও হীনম্মন্যতায় ভুগবে। তাই সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন। তার কথাও শুনতে হবে। তা হলেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পাবেন।