ঋতু ডালমিয়া এবং মিশেলা টেডসেন (ডান দিকে) ছবি : ইনস্টাগ্রাম।
তাঁরই জন্য প্রকাশ্যে সমপ্রেম জাহির করতে আর ভয় পান না ভারতীয় সমকামীরা। আইনের বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়ায় ভারতে এখন সমলিঙ্গ বিবাহও হচ্ছে। অথচ যিনি সেই লড়াইয়ের অন্যতম ‘উদ্গাতা’, সেই ঋতু ডালমিয়া নিজের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করার সুযোগ পেলেন লড়াই সফল হওয়ার ছ’বছর পরে। খাস কলকাতার মেয়ে ঋতু। যিনি আবার তারকা রাঁধুনিও বটে। সম্প্রতি তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে সমলিঙ্গ বিবাহে আবদ্ধ হয়েছেন। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেছিল সেই বিয়ের আসর।
২০১৬ সালে ভারতের সমকামিতা বিরোধী আইন ৩৭৭কে চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন যে পাঁচ জন বিশিষ্ট ভারতীয়, তাঁদেরই একজন ছিলেন ঋতু। সে সময়েই এক সাক্ষাৎকারে ঋতু জানিয়েছিলেন, তিনিও এক জন সমকামী। ঋতু বলেছিলেন, ‘‘আমি কাকে ভালবাসব, তার স্বাধীনতা যদি আমার না থাকে, তবে কিসের ব্যক্তিস্বাধীনতা!’’ সেই ভাবনা থেকেই সমকামীদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছিলেন কলকাতার কন্যা। দেশের পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব— নৃত্যশিল্পী নভতেজ সিংহ জোহর, সাংবাদিক সুনীল মেহতা, হোটেল ব্যবসায়ী আমন নাখ এবং কেশব সুরীর সঙ্গে তারকা রাঁধুনি ঋতুও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ৩৭৭-এর বিরোধিতা করে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার সুফল মেলে দু’বছর পরে। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, যে আইন সমকামীদের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে, তা অসাংবিধানিক। তবে লড়াইয়ে দ্রুত সাফল্য পেলেও প্রেমের পরিণতি পেতে সময় লাগল ঋতুর।
গত ৫ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার এক মনোরম এলাকা লিউ এস্টেটের হোটেলে চার হাত এক হল দু’জনের। ইনস্টাগ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি দিয়ে ঋতু লিখেছেন, ‘‘মিসেস অ্যান্ড মিসেস... ৫ নভেম্বর ২০২৪।’’
ঋতু শুধু তারকা রাঁধুনিই নন, তিনি একজন রেস্তেরাঁ ব্যবসায়ীও। দেশেই ছ’টি রেস্তরাঁ আছে তাঁর। ইটালির মিলানে রয়েছে আরও তিনটি রেস্তরাঁ। এ ছাড়া গোটা পৃথিবীতেই রয়েছে তাঁর ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা। এমন ব্যবসায়ীর বিয়ে জমকালো হওয়াই স্বাভাবিক। ঋতু অবশ্য বিয়ে করেছেন বেশ ছিমছাম ভাবেই, কাগজে সই আর আংটি বদল করে। পাত্রীর নাম মিশেলা টেডসেন। তিনি পেশায় বিজ়নেস ডেভেলপার। বিয়ের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দু’জনের কেউই প্রথাগত বধূবেশে সাজেননি। কালো রঙের একটি ওভারকোটের সঙ্গে বেইজ় রঙের ওয়েস্টকোট আর পাঁচরঙা পাজামা পরেছেন ঋতু। আর মিশেলা পরেছেন শার্টের কলার দেওয়া লাল-সাদা গাউন আর উজ্জ্বল লাল রঙের বুট। তাঁদের ঘিরে রয়েছেন আত্মীয়স্বজন।
প্রসঙ্গত কলকাতার মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম ঋতুর। মারোয়াড়িরা সাধারণত রক্ষণশীল হন। তবে ঋতু জানিয়েছেন, তাঁর পছন্দের কথা বাড়িতে জানাতে কোনও অসুবিধা হয়নি। পারিবারিক ব্যবসা সূ্ত্রে ২২ বছর বয়সে ইটালিতে গিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে ঋতু বলেছেন, ‘‘২৩ বছর বয়সে আমি বুঝতে পারি, আমি সমকামী। মনে আছে, বাবা-মাকে যখন বলেছিলাম, সেই সময় ওঁরা আমার তখনকার সঙ্গিনীর জন্য এক বাক্স আম পাঠিয়েছিলেন। ওই ভাবেই নিজেদের আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন ওঁরা।’’ কিন্তু, সব বাবা-মা এমন হন না। ঋতু বলছেন, ‘‘আসলে সমাজই তাঁদের হতে দেয় না। তার উপর দেশের আইনই যদি বলে, ‘সমকামিতা অপরাধ’, তবে সেই মানসিকতা বদলাবে কী করে!’’ সেই বদল আনার জন্যই লড়াই করেছিলেন ঋতু। অবশেষে তাঁর জীবনেও বদল এল।