উৎসবের অপেক্ষা। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে এ বার ভাইফোঁটা ঘিরে উৎসবের পরিবেশ। গত বছর করোনা আবহে ভাইফোঁটা পালন করতে পারেনি সোনাগাছি। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ২০০৪ সাল থেকে যৌনপল্লিতে ঘটা করে ভাইফোঁটা পালন হলেও ২০১৮ সাল থেকেই উৎসবে ভাটা পড়ে। তার জন্য করোনা কারণ ছিল না। সেই সমস্যা মেটাতেই এ বার শুক্র ও শনিবার দু’দিন ধরে চলবে যৌনকর্মীদের ভাইফোঁটা।
কেন গত কয়েক বছর ভাইফোঁটার উৎসবে ভাটা পড়েছিল তার কারণ জানিয়ে দুর্বারের সম্পাদিকা কাজল বসু বলেন, ‘‘যৌনকর্মীদের অনেকেই নিজেদের বাড়িতে ভাইদের ফোঁটা দিতে যান। আবার যাঁরা স্বেচ্ছসেবক রয়েছেন তাঁদেরও পারিবারিক ব্যস্ততা থাকে। তাই গত কয়েক বছর সে ভাবে উৎসব করা যায়নি। এ বার থেকে ঠিক হয়েছে পর পর দু’দিন ধরে উৎসব হবে। যাঁর যে দিন সুবিধা তিনি সে দিন থাকবেন।’’ দুর্বারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মূল অনুষ্ঠানটা হবে শনিবারেই। সে দিন সকালে সোনাগাছিতে ফোঁটা নিতে আসবেন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও সে দিন আসার কথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমারের। কাজল বলেন, ‘‘সারা বছর যাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকেন তাঁদের সকলকেই আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যাঁর যে দিন সুবিধা হবে আসবেন। যৌনকর্মীদের সন্তানদেরও ভাইফোঁটা হবে। তাদের জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি উপহার থাকবে। আর সবার জন্য পাঁচ রকমের মিষ্টি, একটা নোনতা খাবার আর কফি।’’
সোনাগাছিতে যৌনকর্মী দিদি-বোনেদের থেকে ফোঁটা নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন অভিনেতা ভাস্বর। রমজানে রোজা রাখা ভাস্বর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি শনিবার যাচ্ছি সোনাগাছিতে ফোঁটা নিতে। দুর্গাপুজোতেও গিয়েছিলাম। তখনই কথা দিয়ে এসেছিলাম। ১৫ জন দিদি আমাকে ফোঁটা দেবেন।’’ কী উপহার দেবেন দিদিদের? ভাস্বরের জবাব, ‘‘আমার এক কাশ্মীরি বন্ধু মেহেরাজুদ্দিন ক’দিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন। তখন সোনাগাছির কাজলদি আর বিশাখাদির জন্য দুটো কাশ্মীরি সিল্ক রেখে গিয়েছেন। ওই দুই দিদিকে কাশ্মীর থেকে পাঠানো শাড়ি দেব। আর বাকি সকলের জন্যও নানা কাজের জিনিস উপহার দেব বলে কিনে রেখেছি।’’ ভাস্বর জানিয়েছেন তাঁর এক বোন পিয়ালীও শনিবার সোনাগাছি যাবেন। সেখানেই বাকিদের সঙ্গে ভাস্বরকে ফোঁটা দেবেন পিয়ালী।
ভাইফোঁটাকে উৎসবের রূপ দিতে নাকি এখন থেকেই তৈরি দুর্বারের সদস্যরা। সংস্থার মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে দুর্বারের যে দফতর রয়েছে সেখানেই ভাইফোঁটা দেওয়া হবে। খাওয়া দাওয়া সবই হবে সেখানে। এমনিতে শনিবার দুপুর ১২টায় সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ভাস্বরের জন্য সকাল সকাল আয়োজন করতে হবে। ওঁর কাজের তাড়া থাকবে বলে এখন থেকেই সকালে ফোঁটা দেওয়ার আয়োজন রাখা হচ্ছে।’’
(তথ্য সহায়তা: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়)