পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) বা পিসিওডি (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজ়িজ়) যে শব্দবন্ধই ব্যবহার করা হোক না কেন মোদ্দা সমস্যা একটাই। এটি মূলত হরমোনের সমস্যা। এই সিন্ড্রোমে মেয়েদের ডিম্বাশয় বেশি পরিমাণে অ্যান্ড্রোজেন তৈরি করে। এমনিতে এই হরমোন মেয়েদের শরীরে খুব কম থাকে, কারণ এটি মূলত ছেলেদের হরমোন। এ বার ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার জন্য যে হরমোনের প্রয়োজন সেটি যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি না হলে, ডিম্বাণু তৈরি করতে পারে না শরীর। ফলে ডিম্বাশয়ের বাইরে ছোট ছোট সিস্ট দিয়ে একটা আস্তরণ তৈরি হয়। এর ফলে মেয়েদের শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ওজন বেড়ে যাওয়া, মনমেজাজ খারাপ থাকা, শরীরে ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করে না, গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি।
সাধারণত কমবয়সি মেয়েদের শরীরেই এই সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু সন্তান হয়ে গিয়েছে মধ্য তিরিশের কোনও মহিলার পিসিওএস হল এমন ঘটনাও প্রচুর। কারণ এটি মূলত লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়। কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়ার ফলে শরীরের হরমোনাল ব্যালান্স নষ্ট হয়। এক্সারসাইজ় এবং সুষম ডায়েট এই রোগ থেকে রেহাই দিতে পারে।
পিসিওএস থেকে রেহাই পেতে কার্ডিয়ো সবচেয়ে উপযোগী। রোজ সকালে ২০মিনিট জোরে হাঁটা, জগিং করা যেতে পারে। সাইক্লিং করতে পারেন। সাঁতারও খুব ভাল এক্সারসাইজ়। এর সঙ্গে ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম যোগ করে নিন শারীরচর্চার তালিকায়।
যোগাসনও এই অসুখ সারাতে কার্যকর। যোগ বিশেষজ্ঞ তাপস মণ্ডল বেশ কিছু আসনের কথা বললেন, যা করলে সুফল পাওয়া যাবে। ‘‘কিছু আসন আছে যা অ্যাবডমিনাল সমস্যায় কাজে আসে। তার আগে নিজেদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে রাশ টানতে হবে। খাওয়াদাওয়ার ব্যালান্স করা জরুরি। ঘুমের সাইকেল যেন ঠিক থাকে। যোগাসনের সঙ্গে করতে হবে কার্ডিয়ো।’’
সূর্যনমস্কার
সূর্যনমস্কারের ১২টি ফরম্যাট রয়েছে, এটি ভীষণ উপকারী। ১২টি পশ্চার যদি ৪-৫ বার করে রোজ করা যায়, তা হলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। অ্যাবডমিনাল সমস্যার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগাসন রয়েছে সেগুলোও করতে হবে।
অন্যান্য জরুরি আসন
ভুজঙ্গাসন, বক্রাসন, পবনমুক্তাসন, জানুশিরাসন এবং নৌকাসন, নভ্যাসন (এই দু’টি আসন একে অপরের বিপরীত) — এগুলো রোজ নিয়মিত অভ্যেস করলে সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে বলে জানালেন যোগ বিশেষজ্ঞ তাপস মণ্ডল। প্রতিটি আসনই এক মিনিট থেকে তিন মিনিট হোল্ড করে রাখতে হবে। প্রথমেই হয়তো বেশি সময় করা সম্ভব নয়। তিরিশ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে। এক একটি ব্যায়াম তিন-চার বার করা জরুরি।
পিসিওডি বা পিসিওএস-এর মতো সমস্যা থেকে রেহাই পেতে খাওয়াদাওয়া ঠিক মতো করতে হবে। বাইরের খাবার এবং ভাজাভুজি বাদ দিতে না পারলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই।