প্রতীকী ছবি।
বছরে এক বার বা দু’বার পরিবারের সঙ্গে হাওয়া বদল। এমনই ছিল ভারতীয়দের ভ্রমণ-চিত্র। তার জন্য সারা বছর ধরে নানা ভাবে চলত প্রস্তুতি। লম্বা ছুটিতে কখনও পাহাড়, তো কখনও সমুদ্র কিংবা জঙ্গলে ঘুরে আসার পরিকল্পনা নিয়ে কেটে যেত দিনের পর দিন। কিন্তু গত দেড় বছরে সে সব প্রায় উধাও। ঘরের বাইরে পা ফেলা মানেই হাজার বিধি-নিষেধের ঘেরাটোপ। সঙ্গে সংক্রমণের আতঙ্ক। এখন অধিকাংশেই অন্য ভাবে বেড়ানোর কথা বলছেন। ফাঁক বুঝে শ্বাস নিয়ে আসাই এ দেশের ভ্রমণপ্রেমীদের নতুন ভাবনা।
দেশজুড়ে একে ‘প্রতিহিংসামূলক ভ্রমণ’ বলা হচ্ছে। অনেকে বৈপ্লবিক বা বিদ্রোহী ভ্রমণও বলছেন। কিন্তু কী নিয়ে বিদ্রোহ ঘটছে? করোনা যেমন বাড়িতে বন্দি করে রাখছে বছরের একটি বড় সময় ধরে, তেমন করোনার বিরুদ্ধে বিপ্লব করে বেরিয়েও পড়ছেন অনেকে। ঠিক যে সময়ে সংক্রমণের হার নীচের দিকে নামছে আর লকডাউনের কড়াকড়ি কমছে, তখনই পা বাড়াচ্ছেন তাঁরা। তার ফলে একই সময়ে অনেকে মিলে বেরিয়ে পড়ছেন ব্যাগ গুছিয়ে। অনেক দিন গৃহবন্দি থেকে সুযোগ বুঝে হঠাৎ এত মানুষ একসঙ্গে পথে নামার এই প্রবণতা যেন অতিমারির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মতো একটি বিষয়। মজা করে এমনই বলছেন কেউ কেউ।
প্রতীকী ছবি।
অতিমারি যে সব নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে মাথার উপর, তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পথে নামার আনন্দ প্রায় বৈপ্লবিক বলে মনে হচ্ছে। তৃতীয় তরঙ্গ আসার আগে যাঁরা পাহাড়-জঙ্গল দেখে এলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই তেমন বলছেন। বছর ৫০-এর স্কুলশিক্ষক পার্থ দাস যেমন ক’দিন আগে একাই ঘুরে এলেন সিকিম থেকে। বলছেন, ‘‘ছোটবেলায় স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতাম। আর এখন করোনার চোখে ধুলো দিয়ে পাহাড় দেখলাম। আনন্দ একই রকম।’’ সেই কথা শুনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা রায় বলেন, ‘‘কলেজে পড়ার সময়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। মনে হত, আমাদের সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে। তা হলেই বদলাতে পারব চারপাশটা। আজকাল মনে হয় সাহস করে বেরিয়ে পড়লে কিছুটা বদল যদি আসে। তাই মাঝামাঝে বেরিয়ে পড়ছি।’’ এ বছরেই বার দুয়েক ট্রেকিং করে এসেছেন মোনালিসা। ইচ্ছা আছে পুজোর সময়ে পরিস্থিতি খুব খারাপ না থাকলে আবারও পাহাড়ে যাবেন।