সোরিয়াসিস থাকলে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত নির্বিশেষে বছরভরই ত্বকের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয়। ছবি- শাটারস্টক।
বোধ হয় করোনার ভয়ে বর্ষা এ বারে একটু দেরি করে এসেছে। বর্ষণমুখর দিনেও কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেরতেই হয়। বৃষ্টির জল লেগে ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। আবার যাঁদের সোরিয়াসিস নামক ক্রনিক ত্বকের অসুখ আছে, তাঁদের বিশেষ যত্ন না নিলে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সোরিয়াসিস থাকলে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত নির্বিশেষে বছরভরই ত্বকের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয়। ত্বকের এই ক্রনিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অগস্ট মাসকে আন্তর্জাতিক সোরিয়াসিস মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যাঁদের সোরিয়াসিস আছে, কিছু নিয়ম মেনে চললে এই রোগকে অনেকাংশেই আয়ত্তে রাখা যায়, বললেন বলছিলেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর। এই অটোইমিউন ত্বকের অসুখটি ডেকে আনে টি-লিম্ফোসাইট। এটি আবার কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আদতে ব্যাপারটা যথেষ্ট গোলমেলে। তাই যাঁদের ইতিমধ্যে সোরিয়াসিস অসুখটি হয়েছে, তাঁদের অবশ্যই নিয়ম মেনে চলা উচিত বলে মনে করেন সন্দীপনবাবু। ত্বক শুকিয়ে গেলে সোরিয়াসিসের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে ত্বক যেন শুকিয়ে না যায়, বললেন সন্দীপন ধর। এ বারে এক নজরে জেনে নেওয়া যাক, কী কী নিয়ম মেনে চললে সোরিয়াসিসকে আটকে দেওয়া যাবে।
• বছরভর ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করতে হবে। ঠান্ডা জলে স্নান করলেও সোরিয়াসিস বেড়ে যেতে পারে।
• খুব গরম জল বা খুব ঠান্ডা জল ত্বককে শুকিয়ে দিয়ে সোরিয়াসিসের অ্যাটাক বাড়িয়ে দিতে পারে।
• সরাসরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ মেশিনের হাওয়ার সামনে থাকলে ত্বকের জলীয় অংশ শুকিয়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন শুষ্ক আবহাওয়া এড়িয়ে চলার।
• শুষ্ক বাতাসের মধ্যে থাকতে হলে প্রচুর পরিমাণে জলপান করতেই হবে। এ ছাড়া ত্বক যাতে শুকিয়ে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• স্নানের পর তিন মিনিটের মধ্যেই সমস্ত শরীরে নারকেল তেল দিয়ে ভাল করে ম্যাসাজ করতে হবে। স্নান করার পর রোমকূপের মধ্যে জমে থাকা জলের উপর তেলের আবরণ ত্বকের মধ্যে জল আটকে রাখবে। ফলে ত্বক সহজে শুকিয়ে যাবে না।
• পারফিউম ব্যবহার করা নিষেধ। এ ছাড়া কোনও সুগন্ধী তেল, সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা চলবে না। যে কোনও সুগন্ধীতে থাকা রাসায়ানিক সোরিয়াসিস বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই সোরিয়াসিস থাকলে যে কোনও কৃত্রিম সুগন্ধী নিষিদ্ধ।
• এ ছাড়া যে সব প্রসাধনী অতি সংবেদনশীল (সেন্সিটিভ) ত্বকে নিষিদ্ধ, সেগুলি ব্যবহার করা চলবে না। কেন না সোরিয়াসিস থাকলে ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাই প্রসাধন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু বুঝে চলতে হবে।
• সপ্তাহে দু’তিন দিনের বেশি সাবান ব্যবহার না করাই ভাল। যতটা সম্ভব কম ডিটারজেন্ট যুক্ত সাবান ব্যবহার করলে ভাল হয়। মৃদু ক্ষারযুক্ত ব ক্ষারহীন বডি ওয়াশ বা ফেস ওয়াশ ব্যবহার করলে ভাল হয়।
• ঈষদুষ্ণ জলে এপসাপ সল্ট মিশিয়ে স্নান করলে ত্বকের ভিজে ভাব বজায় থাকে, চট করে শুকিয়ে যায় না।
• অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারলে ভাল হয়। অলিভ অয়েল ব্যবহার সম্ভব না হলে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে।
• অতিরিক্ত রোদ্দুর ও আলট্রাভায়োলেট রশ্মি সোরিয়াসিস বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে বেরনো ঠিক নয়। দুপুরে বেরোলে ছাতা ব্যবহার করতেই হবে। আর সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা জরুরি। সোরিয়াসিস যুক্ত ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (ইউভি–এ ও ইউভি–বি) পড়লে এক দিকে সমস্যা বাড়ে, অন্য দিকে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
• ধুমপান ও মদ্যপানে সোরিয়াসিসের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই যাঁদের সোরিয়াসিস আছে, তাঁরা সিগারেট ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
• কম জলপান করলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই প্রতি দিন পর্যাপ্ত জলপান জরুরি (২.৫ লিটার বা তার বেশি)।
• সোরিয়াসিসে ত্বক শুকিয়ে গেলে খুব চুলকোয়। সেই সময় অবশ্যই অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে হবে। নখ দিয়ে চুলকে ত্বকে আঁচড় লাগলে সেখানে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়ে। তাই চুলকোতে শুরু করলেই সেই অংশে নারকেল তেল বা চিকিৎসকের দেওয়া ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ম্যাসাজ করলে উপকার হবে।
• খুব চুলকোতে শুরু করলে চোখ বন্ধ করে ডিপ ব্রিদ করতে হবে, সঙ্গে তেল দিয়ে বা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ম্যাসাজ করলে সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
• মানসিক উদ্বেগ ও ডিপ্রেশন সোরিয়াসিস বাড়িয়ে দেয়। সোরিয়াসিস থাকলে নিয়ম করে ডিপ ব্রিদিং ও প্রাণায়াম করা জরুরি।
• আন্তর্জাতিক সোরিয়াসিস মাসে ত্বকের এই ক্রনিক সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখার শপথ নিন। সোরিয়াসিস সম্পর্কে সচেতন থাকুন, নিয়ম করে চেক আপ করান, সুষম খাবার খেয়ে ও নিয়ম করে এক্সারসাইজ করে ওজন ঠিক রাখুন, ভাল থাকুন।