— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
একটা চারা গাছকে যতই অন্ধকারে রাখা হোক না কেন, ফাঁকফোকর দিয়ে একটু সূর্যের আলো পেলে সে ওই দিকেই মুখ করে বাড়তে শুরু করে। ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তাই। যতই তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হোক না কেন, জিন মিউটেট করে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা উপরূপে প্রকাশ পায়। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। সম্প্রতি চোখ রাঙাচ্ছে করোনা ভাইরাসের নতুন উপরূপ জেএন ১। চিন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, আমেরিকার পরে ভারতে প্রবেশ করেছে জেএন ১। কোভিডের এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট প্রসঙ্গে দক্ষিণ পূর্ব দেশগুলোকে সতর্ক থাকার আর্জি জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ভারতে কেরালা, রাজস্থান, গুজরাত, কনার্টকে জেএন ১-এ সংক্রামিত হয়েছেন অনেকে। যদিও ভারতের জনসংখ্যার অনুপাতে আক্রান্তের সংখ্যা নগণ্য, কিন্তু দু’বছর আগে কোভিড-১৯-এর পরিণতির কথা ভেবে সকলেই কমবেশি উদ্বিগ্ন। তবে ভয় পাওয়ার মধ্যে সমাধানের পথ নেই বরং পূর্ব অভিজ্ঞতা আগাম সচেতন হওয়ার, সজাগ হওয়ার শিক্ষা দেয়।
নতুন উপরূপের উপসর্গ
সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা-ব্যথা, হাত-পা-গা-ব্যথা জেএন ১-এর উপসর্গ। ‘‘শীতকালে ঠান্ডা লেগে কমন কোল্ড বা ইনফ্লুয়েঞ্জারও এই এক উপসর্গ। তাই প্রথমেই ধরা পড়া মুশকিল রোগটা সাধারণ সর্দিকাশি না করোনা ভাইরাসের নতুন উপরূপ। এমন উপসর্গ দেখা দিলে প্রথম ৪৮ ঘণ্টা বা দু’দিন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং বাড়ি থেকে না বেরিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, পর্যাপ্ত জল খান, প্রয়োজনে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। কমন কোল্ড হলে দিন দুয়েকের মধ্যে কমতে শুরু করবে। কিন্তু যদি দেখা যায় তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে জ্বর ক্রমশ বাড়ছে, গা-হাত-পায়ে খুব ব্যথা হচ্ছে, গলার ব্যথা কমছে না, তখন বুঝতে হবে সাধারণ সর্দিকাশি নয়। আর দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি মনে করলে কোভিড টেস্ট করতে দিতে পারেন। তখন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে,’’ বললেনডা. অরুণাংশু তালুকদার।
—প্রতীকী চিত্র।
প্রতিকারের চেয়েপ্রতিরোধ ভাল
জেএন ১ কতটা ভয়ানক নাকি নেহাতই নিরীহ, তা এখনও পুরোপুরি জানা নেই বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের। তাই প্রিভেনশন ইজ় বেটার দ্যান কিয়োর বা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভাল এই নীতি নিতে হবে। শীতকাল উৎসবের মরসুম। গোটা দেশ জুড়ে চলছে নানা মেলা, অনুষ্ঠান। আমাদের রাজ্যও এই আনন্দ উৎসবে পিছিয়ে নেই। এই সময় বেড়াতে যান বহু মানুষ। পর্যটন স্থলগুলো পর্যটকের ভিড়ে গমগম করছে। যত বেশি জনসমাবেশ তত বেশি সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা! জেএন ১-এর স্বরূপ এখনও অস্পষ্ট। তাই দুঃশ্চিন্তাও বাড়ছে। ‘‘চিন্তা ফেলে আবার সেই পুরনো নিয়মে ফিরে যেতে হবে। কোভিড ১৯-এর সময় যে সচেতনতা মেনে চলা হত তা শুরু করতে হবে। এই সময় যে কোনও সমাবেশ, মেলা বা অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মাস্ক পরতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। সম্ভব হলে বাইরে থেকে এসে পরা জামা-কাপড় ঘরের বাইরে রাখুন। বাইরের পোশাক পরে বা হাত না ধুয়ে বাচ্চাদের ও বয়স্কদের কাছে যাবেন না। নিয়মিত সাবান দিয়ে স্নান করুন। পর্যাপ্ত জল পান করুন। জ্বর, গলাব্যথা বা সর্দিকাশি হলে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হন,’’ পরামর্শ দিলেন ডা. তালুকদার। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের বা যাঁদের অন্যান্য রোগ আছে এবং যাঁরা নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাঁদের সজাগ থাকতে হবে।
এই ছোট-ছোট সচেতন পদক্ষেপ শুধু কোভিড নয় যে কোনও সংক্রামক রোগের জন্যও কার্যকর। এই মরসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জাও বেশি হয়। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ইত্যাদি সচেতনতা ইনফ্লুয়েঞ্জার থেকেও দূরে রাখবে।