নেটমাধ্যমে আবার চর্চায় করিনা-শাহিদ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
এক তারকা সম্পাদক টিভি চ্যানেলে বিবাহ বিচ্ছেদের পরে দম্পতির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে আলোচনাচক্র বসাতে চাইলেন। সহকর্মীরা তা শুনে হেসেই গড়াগড়ি। এক জন তো বলেই ফেললেন, ‘‘বিবাহ অ-বিচ্ছিন্নদের মধ্যেই সম্পর্ক থাকে না। সেখানে আবার বিয়ে ভাঙার পরে বন্ধুত্ব!’’ তার পরে কেটে গিয়েছে অন্তত বছর পঁচিশ। প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ কি এখনও হাসির বিষয়? পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কিংবা নিদেন পক্ষে সামাজিক ভদ্রতাও কি প্রশ্নের মুখেই এখনও?
সদ্য সইফ আলি খানের সঙ্গে দ্বিতীয় সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন করিনা কপূর। তার দু’দিনের মধ্যেই দেখা গেল, প্রাক্তন প্রেমিক শাহিদ কপূরের জন্মদিনে ইনস্টাগ্রামে ‘জব উই মেট’-এর জনপ্রিয় জুটির ছবি। আর তার নীচেই জমল করিনাকে নিয়ে সমালোচনামূলক নানা বক্তব্য। কারও বক্তব্য, শাহিদের সঙ্গে প্রেম ভেঙে, জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো উচিত হয়নি। কেউ আবার বললেন, প্রাক্তন এবং বর্তমান দু’জনেরই ক্ষতি করেছেন অভিনেত্রী। ছবিটা যদিও করিনার নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়নি। হয়েছিল তাঁর ফ্যানপেজে। নিন্দকেরা তা বুঝতে পারেননি। তবে অভিনেত্রী নিজে করলেই বা ক্ষতি কী ছিল? সেই প্রশ্নই আবার উস্কে দিল প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে চিরাচরিত বিতর্ক।
তবে কি প্রাক্তনকে মনে করাই যাবে না? এমন কিন্তু মনে করেন না সকলে। বারবার সম্পর্ক যেমন হয়। তেমন এক সম্পর্ক ভেঙে গেলে প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বও থাকে অনেকের। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী কলমা গোস্বামী যেমন জানালেন, তাঁর বর্তমান স্বামীর আর প্রাক্তন প্রেমিক খুবই বন্ধু। সপ্তাহান্তে একসঙ্গে সকলে মিলে বেড়াতেও যান তাঁরা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এতই যখন বন্ধুত্ব, তবে আগের প্রেমিককে বিয়ে করলেন না কেন কমলা? তাঁর উত্তর, প্রাক্তন প্রেমিককে শুধু বন্ধু হিসেবেই ভাল লাগে তাঁর। কারও সঙ্গে প্রেম হলেই যে তা বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে হবে, না হলে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে, এমনও তো নয়। কিন্তু তা মানেন ক’জন?
এক প্রেমেতেই বিয়ের ব্যবস্থা না হলেই বা ক্ষতি কী? তাতে ক্ষতি নেই। তবে যোগাযোগ রাখার দরকার কী? যেমন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ থাকায় সমস্যায় পড়েছিলেন ব্যবসায়ী অশোক হাজরা। দ্বিতীয় স্ত্রী খুবই অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন নিজের অবস্থান নিয়ে। ফলে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ ছিন্ন করেন তিনি। জন্মদিন কিংবা বিজয়ায় শুভেচ্ছা আদানপ্রদানও বাদ যায়।
এটুকু থাকলেই বা ক্ষতি কী?
অন্তত আপাত ভাবে সহিষ্ণুতা বজায় রাখা নিজের মানসিক অবস্থার জন্য খুবই ভাল বলে মনে করেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার চেয়েও বড় কথা যে দু’টো মানুষের মধ্যে সেই সম্পর্ক, তাঁরা ছাড়া আর কারও সেই যোগাযোগ নিয়ে মতামত না দেওয়াই ভাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই হয়, যে মানুষটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভাল ভাবে রাখা যায়নি, তাঁর সঙ্গে হয়তো বন্ধুত্ব বা অন্যান্য সৌজন্যমূলক ভূমিকাতে পরস্পর স্বচ্ছন্দ রইলেন, আমি তাতে কোনও সমস্যা দেখি না। সকলের ক্ষেত্রে এমন হয় না। কিন্তু কারও হলে, সেটাই তো ভাল। এতে সমালোচনার কী আছে?’’ অনুত্তমার পরামর্শ, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রেম কিংবা বিয়ে ভাঙার সময়ে একে-অপরের সম্পর্কে খুবই নেতিবাচক কথা বলে ফেলেন অনেকে। তার পরে আবার সেই মানুষটির সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ রাখতে দেখা গেলে প্রশ্ন তোলেন কাছের জনেরা। সম্পর্ক নিয়ে ভাল-মন্দ সব কথা নিজেদের মধ্যে রাখতে পারলে পরবর্তীকালেও সমালোনা এড়ানোর সুযোগ থাকে।
করিনা অবশ্য দেখিয়ে দিয়েছেন, সমালোচনায় কান দিতে নেই। এ সব নিন্দায় কোনও মন্তব্য করেননি অভিনেত্রী। খারাপ কথা যতই আসুক, শুভ কামনায় ক্ষতি কী?