প্রতীকী ছবি।
ঘাম ঝরানো এবং পেশির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উপযোগী প্লায়োমেট্রিক ব্যায়াম। তবে এটি করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। শরীর যত হালকা হবে, তত এই ব্যায়াম করতে সুবিধে। ওজনে ভারী ব্যক্তিরা প্রথমেই এই ওয়ার্কআউট করার চেষ্টা করবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ এই প্রশিক্ষণে জাম্পিং এবং হপিংয়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা ওয়ার্কআউট করছেন, শরীরে নমনীয়তা রয়েছে এবং সর্বোপরি আত্মবিশ্বাসে কমতি নেই, তাঁদের জন্যই এই শারীরচর্চা।
প্লায়োমেট্রিক কী?
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস বললেন, ‘‘পায়ের পেশি এবং গ্লুটেল মাসলের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্যই এই ব্যায়াম করা হয়।’’ এটি এক ধরনের স্ট্রেংদেনিং এক্সারসাইজ়। স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং স্পেশালিস্ট রণদীপ মৈত্র বললেন, ‘‘প্লায়োমেট্রিক শব্দটি ভাঙলে দু’টি গ্রিক শব্দ পাওয়া যায়। প্লায়ো শব্দটির অর্থ বেশি এবং মেট্রিক শব্দটির অর্থ পদক্ষেপ।’’ ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেনিস খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে প্লায়ো (খেলার জগতে এটি এই নামে পরিচিত)। এর নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যে পেশি সর্বাধিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
সাধারণ মানুষও এই ব্যায়াম করতে পারেন। তবে শরীরের ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা বুঝে। প্রথম প্রথম যাঁরা করছেন, তাঁরা অবশ্যই কোনও প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে করবেন।
কোথায় করবেন?
প্লায়োমেট্রিক ব্যায়াম করার জন্য খোলামেলা জায়গার প্রয়োজন। মাঠে করতে পারলে খুবই ভাল। কারণ শক্ত জমির তুলনায় ঘাসের উপরে পড়লে কম চোট পাবেন। বাড়িতে করলে অবশ্যই এক্সারসাইজ় ম্যাটের উপরে করবেন। ছাদে বা বারান্দায় অর্থাৎ ছড়িয়ে ছিটিয়ে করা যায়, এমন জায়গায় এই ব্যায়াম করা ভাল।
সাধারণত এই ব্যায়ামের জন্য কোনও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। তবে বক্স-প্লায়ো এখন বেশ জনপ্রিয়। সে ক্ষেত্রে ফোমের বক্স বাধা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
কারা ব্যায়ামটি করবেন না?
উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, ডায়াবিটিস ঘটিত নার্ভের সমস্যা থাকলে, এই ব্যায়াম না করাই ভাল। হাঁটু-জয়েন্টে ব্যথা, আর্থ্রাইটিস থাকলেও এটি আদর্শ নয়। গর্ভবতী মহিলারাও এই ব্যায়াম করবেন না। আগেই বলা হয়েছে, হালকা ওজন এবং নিয়মিত শারীরচর্চার মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা এই ব্যায়াম করতে পারেন। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের সঙ্গে সাধারণ ব্যক্তির তুলনা চলে না। তবে আঠেরো থেকে শুরু করে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত প্লায়োমেট্রিক করা যায়, যদি শরীরের সেই ক্ষমতা থাকে।
সহজ থেকে কঠিন
যে কোনও ব্যায়ামের গোড়ার কথাই হল, সহজ স্টেপ থেকে কঠিনের জন্য প্রস্তুত হওয়া। যাঁরা নতুন করছেন, তাঁরা নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলি দিয়ে শুরু করতে পারেন।
জাম্পিং সাইডস: পা দু’টিকে কাছে নিয়ে এক বার বাঁ দিকে লাফান, এক বার ডান দিকে। এই ভাবে দশ সেকেন্ড করুন। আবার দশ সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে পর্যায়ক্রমে দু’দিকে লাফান।
জাম্পিং ফ্রন্ট অ্যান্ড ব্যাক: পা দু’টিকে কাছাকাছি এনে আগের মতোই লাফান। তবে এ বার সামনে আর পিছনে। এটিও দশ সেকেন্ড করতে পারেন।
ওয়ান লেগ হপিং: ছোটবেলায় এক-পায়ে লাফানোর মতো খেলা অনেকেই খেলেছেন। এ ক্ষেত্রেও বিষয়টি তাই, এক-পায়ে কতটা দূরত্ব আপনি যেতে পারছেন। মনে রাখবেন, যত বার লাফ দেবেন, পেশি স্ট্রেচড হয়। দ্বিতীয় লাফের জোর তাই প্রথমটির চেয়ে বেশি হয়। ক্রমাগত পেশির এই সংকোচন এবং প্রসারণের ফলে পায়ের পেশি ও গ্লুটেল মাসলের শেপিং ভাল হয়।
প্লায়ো-পুশআপস: সাধারণত খেলোয়াড় এবং অভিনেতাদের স্ট্রেংথ-ট্রেনিংয়ে এটি থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে পুশ-আপসে অভ্যস্ত যাঁরা, তাঁরা পুশ-আপসের মাঝেই হাতটা এক-এক বার তুলে নেন। এটিই প্লায়ো-পুশআপস। তবে এটি অনুশীলন ছাড়া করবেন না।
বক্স-প্লায়ো: লাফ দিয়ে বক্সের উপরে ওঠা ও বক্স থেকে নামা... এটিও এক ধরনের প্লায়ো ব্যায়াম।
মনে রাখবেন, দৌড়নো, স্কিপিং... প্রতিটি এক এক ধরনের প্লায়ো। তবে এই ব্যায়াম করার জন্য স্ট্যামিনার প্রয়োজন। তাই রোজ না করে এক বা দু’-দিন অন্তর করা ভাল। প্রথমেই প্লায়োমেট্রিক-নির্ভর ওয়ার্কআউট না করে, আপনার রোজের ফিটনেস রুটিনে কয়েকটি প্লায়ো-মুভমেন্ট রাখুন। তা আপনার আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।