ষাটের দশকের আফগানিস্তানের সঙ্গে এখনকার দেশটি কখনওই মেলানো যায় না। বিশেষ করে মেয়েদের চিত্র। মাত্র কয়েক দশক আগেও তাঁরা ছিলেন যথেষ্ট স্বাধীন।
তখন তাঁদের পড়াশোনা করার অধিকার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে অগাধ আনাগোনা ছিল।
এই দৃশ্যটি কোনও হলিউড ছবির নয়। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসরুমের। সে সময়ে মেয়েদের পড়াশোনা কোনও বাধা ছিল না। পাশাপাশি বোরখা পরা নিয়ে কোনও রকম বাধ্যতাও ছিল না। ছয়ের দশকে মেয়েরা পশ্চিমী পোশাকে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ ছিলেন। সে সময়ে আফগানিস্তানে গোটা দুনিয়ার পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। তাই পশ্চিমী সংস্কৃতির আদান-প্রদান চলত স্বাভাবিক নিয়মেই।
ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে কোনও রকম নিষেধ ছিল না। ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে তাঁরা সব বিষয়ে পড়াশোনাও করতেন।
অনেক মেয়েই ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। এই ছবিটি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬২ সালে তোলা। অধ্যাপিকা তাঁর ছাত্রীদের শরীরে প্লাস্টার কী করে করে, তার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
ছেলেদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে মেয়েদেরও কম্পিউটারের ক্লাস। প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে ছিলেন না মেয়েরা।
আফগানি মেয়েরা সে সময়ে পড়াশোনা এবং কাজের জগতে যতটা দক্ষ ছিলেন, ততটাই সাজ নিয়ে শৌখিন ছিলেন। আফগানি শৌখিনীদের নামডাক তখন ছিল বিশ্বজোড়া। নানা ধরনের পোশাকে সেই সময়ে ভরে থাকত মেয়েদের আলমারি।
স্কার্ট, ডাংগ্রি প্যান্ট, বেলবটম ট্রাউজারের মতো ছয় এবং সাতের দশকের পোশাক তখন আফগানিস্তানে হামেশাই দেখা যেত। পোশাকের সঙ্গে মেয়েদের চুলের ধরনেও সেই সময়ের ফ্যাশনেব্ল ছোঁয়া ছিল।
আফগানি মেয়েদের সাজ ধীরে ধীরে সুখ্যাতি অর্জন করে। আফগানি কোটের কদর ছড়িয়ে পড়ে গোটা দুনিয়ায়। ফ্যাশন পত্রিকা ভোগও পৌঁছে যায় সে দেশে ফোটোশ্যুট করার জন্য।
সেই ফোটোশ্যুট হয় আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকাতেই। সেখানে মডেলদের নানা রকম পোশাকে দাঁড় করিয়ে শ্যুট করা হয়। মডেলিংও পেশা হিসাবে বেছে নিতেন সে সময়ের আফগানি মেয়েরা। তাঁরা অবশ্য কাজের জগতে বেশ সাবলীল ছিলেন। অনেক ধরনের পেশার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তাঁরা।
তালিবানি যুগে সংগীত নিষিদ্ধ হয়ে গেলেও সে সময়ে ছিল না। প্রচুর রেকর্ডও মিলত বড় বড় দোকানে। এবং মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যে দোকান বাজারে যেতেন।
মেয়েদের চলাফেরা অবশ্য শুধু দোকান-বাজার পর্যন্তই সীমিত ছিল না। সিনেমা হল, পার্ক, যে কোনও জনসমাগমে তাঁরা যেতে পারতেন।
কাবুলে বেশ কিছু পারফর্মারও ছিলেন মেয়েরাই। সংগীত জগতে তাঁদের নামডাকও ছিল।
আফগান এয়ারলাইনসের বিমানসেবিকারা। তালিবানি ফতোয়া অনুযায়ী মেয়েদের ঘরের বাইরে কোনও রকম পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা চলবে না। আগে অবশ্যই এমন কোনও নিয়ম ছিল না।
১৯৬৯ সালে ডিজাইনার সাফিয়া তার্জির স্টু়ডিয়োয়। ডিজাইনার হিসাবে সাফিয়ার নামডাক মন্দ ছিল না। ভোগ পত্রিকা শুধ আফগানিস্তানে ফোটোশ্যুটি করতেই যায়নি, সে সংখ্যায় সাফিয়াকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদনও বার হয়।
রাস্তাঘাটে হিজাব ছাড়াও মেয়েদের দেখা পাওয়া অনেক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে আফগানিস্তানের রাস্তায়।
তালিবানি ফতোয়া অনুযায়ী মেয়েদের রাস্তায় বেরোলে তাঁদের পায়ের আওয়াজও অপরিচিত ব্যক্তির কান পর্যন্ত পৌঁছনো যাবে না। তাই হিল জুতো পরাও মানা।
১৯৯৬ সালের পর থেকেই মেয়েদের পড়াশোনা করাটাই একটি লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের মতো ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে শিক্ষাগ্রহণ করা এখন দূরের কথা।
তালিবানি শাসন ফের শুরু হওয়ায় আফগানি মেয়েদের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যেহেতু তালিবানি ফতোয়া অনুযায়ী মেয়েদের কোনও রকম বাড়ির বাইরের কাজ করা মানা, তাই এখন যে মেয়ের কর্মরত, তাঁদের কাজ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
তালিবান কাবুল দখল করার পর আফগানিরা দেশছাড়ার শেষচেষ্টা শুরু করে দিয়েছিলেন। মেয়েরা সেই দলে পিছিয়েই রয়েছেই। তাঁদের পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এখন গোটা দুনিয়া।