সচিনের অর্থনৈতিক জীবনে সাফল্যের মূল মন্ত্র কী? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২৪ এপ্রিল। জীবনের ৫০টি বসন্ত পার করে ফেললেন মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকার। ৫১ বছরে পা দিলেন তিনি। বয়স যদিও তাঁর কাছে নিছক সংখ্যামাত্র। তবু!
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘জীবনে কখনও আমি আমার রান আর বয়স গুনিনি।’’ এখন বোধহয় সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়ছে সেই শব্দগুলি।
ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় এক দশক। এখনও তাঁকে মাঠে দেখা যায়, নানা অনুষ্ঠানে, আইপিএলের টিম মু্ম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টরের ভূমিকায়। তাঁকে দেখতে পেলে গ্যালারি থেকে শোনা যায়, ‘সচিন, সচি-ই-ই-ই-ইন’ ধ্বনি।
সচিনের খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ক্রিকেটকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন অনেক তরুণ-তরুণীই। ক্রিকেটের ‘অ-আ-ক-খ’ শেখার জন্য সচিনের জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তা-ই নয়, জীবনে সফল হওয়া ও আর্থিক উন্নতি করার নানা পথেরও হদিসও পাওয়া যায় তাঁর ক্রিকেট জীবন দেখে। জীবনের নানা ওঠাপড়ার মাঝেও সচিন কিন্তু আছেন সচিনেই। যেখান থেকে সাধারণ, অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত এই আমরাও অনেকে শিক্ষা নিতে পারি।
সচিনের আর্থিক জীবনে সাফল্যের সিঁড়ির ধাপগুলিতে এক বার নজর দেওয়া যাক।
অল্প বয়সে ব্যাট হাতে ক্রিকেটের মাঠে সচিন। ছবি: সংগৃহীত।
১. অল্প বয়সে পেশায় প্রবেশ
মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম ব্যাট ধরেছিলেন সচিন। ১৯৮৯ সালে ১৬ বছর বয়সে প্রথম বার ভারতের জার্সি পরে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তাঁর। অল্পবয়সি সেই সচিনই এক দিন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার হয়ে উঠবেন, সে কথা কেই বা জানত! সচিন তাঁর ক্রিকেট জীবনে নানা ওঠাপড়া দেখেছেন, পথটি মোটেই সহজ ছিল না। সে কথা তাঁর দাদা অজিতের নানা কথা থেকে বোঝা যায়। অনেক অল্প বয়সেই খেলা শুরু করেছিলেন বলে, তিনি হয়তো যথেষ্ট সময় পেয়েছেন তাঁর শক্তি, দুর্বলতাগুলি বোঝার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেকে আরও পরিণতও করেছেন। আর তাঁর খেলার জীবনের বাকিটা তো ইতিহাস, আমাদের সকলেরই জানা। ধরা যাক কেউ যদি ২৫ বছর বয়স থেকেই রোজগারের থেকে অন্তত ৫ হাজার টাকা করে এসআইপি মোডে ( বার্ষিক প্রায় ১২ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যায়) টাকা জমাতে শুরু করেন তা হলে কিন্তু ৫০ বছরে গিয়ে তিনি প্রায় ৯৩ লক্ষ টাকা জমিয়ে ফেলতে পারবেন। পেশা নির্বাচন করতে যত দেরি করবেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জমানো টাকার অঙ্কও কিন্তু কমে যাবে।
অবসর ঘোষণার সেই দিনটা। ছবি: সংগৃহীত।
২. জীবনে কখন অবসর নেবেন
২৪ বছর ভারতের হয়ে খেলেছেন সচিন। ২০১১ সালে ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর দু’বছর পরেই ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর অবসর ঘোষণা করেন সচিন। যদিও দেশবাসী চাইত সচিন আজীবন দেশের হয়ে খেলে যান, কিন্তু নিজের বয়স আর ফিটনেস বিচার করে সচিন ঠিক সময় অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সচিনের মতো আপনাকেও কিন্তু নিজের অবসরের কথা ভাবতে হবে সময় থাকতেই। অবসর জীবনে আর্থিক ভাবে সচ্ছল থাকতে আগে থেকেই বেশ কিছু বিনিয়োগ আর পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। নিজের অবসরের পর পরিবারের দায়িত্ব কী ভাবে নেবেন, নিজে কী ভাবে সুখী থাকবেন, নিজের শখগুলি কী ভাবে পূরণ করবেন— সবটার জন্য আগে থেকেই যেন আপনার আর্থিক পরিকল্পনা থাকে।
ওডিআইতে ১০০তম ১০০ করেছিলেন যে দিন। ছবি: সংগৃহীত।
৩. অন্যের কথায় কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই
অনেক প্রশংসা, অনেক খ্যাতির পাশাপাশি ক্রীড়াজীবনে কিন্তু সচিনকে অনেক সমালোচনারও মুখোমুখি হয়ে হয়েছে। সব দিন সমান হয় না। এমন অনেক দিন আছে, যখন শূন্য রানে আউট হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ২০০৩-এ বিশ্বকাপে হারের পর গোটা দলের পাশাপাশি সচিনকেও দেশবাসীর কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল। মনখারাপ হলেও সচিন কিন্তু নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে সামনে আরও কী ভাবে নিজের সেরাটা দিতে পারেন, সেই চেষ্টাই করে গিয়েছেন। সফলও হয়েছেন। আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও কিন্তু লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। জীবনের মতো স্টক মার্কেটেও ওঠানামা লেগেই থাকবে, সে ক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে। যেটুকু আয় করছেন সেখান থেকেই অল্প অল্প করে বাঁচাতে হবে। আয় সব দিন সমান হবে না, আয় বুঝে সঞ্চয় করতে জানতে হবে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর সচিনকে নিয়ে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। ছবি: সংগৃহীত।
৪. জীবনে অনুশাসন
সচিনের পেশা জীবনে যতই উত্থান-পতন আসুক না কেন, তিনি সব সময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখতেন এবং জীবনে শৃঙ্খলা রাখতে পছন্দ করতেন। কাজের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন সব সময়। বাবার মৃত্যুর খবরটার কথা ভাবুন। বিশ্বকাপ খেলছিলেন। ফিরে এলেন দেশে। এক ম্যাচ বাদেই ফিরে গেলেন। সেঞ্চুরি করলেন। পেশার প্রতি কত ভালবাসা, নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা থাকলে এ জিনিস হয়! অনুশাসন, দায়বদ্ধতা কতটা থাকলে এমনটা সম্ভব!
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টরের ভূমিকায় আইপিএলে খেলার মাঠে সচিন। ছবি: সংগৃহীত।
৫. অবসরের পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনা জারি রাখুন
জীবনে একটা সময় আসবে যখন অবসর নিতেই হবে। সচিন কিন্তু অবসরের পরেও থেমে থাকেননি। নিজেকে কী ভাবে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা যায়, সে পথই খুঁজেছেন। অবসরের পর তিনি এখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টর। তা ছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও দেখা যায় সচিনকে। সেই সব জায়গা থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও উপার্জন করছেন তিনি। আপনাকেও অবসরের পর আর কী ভাবে টাকা উপার্জন করা যায়, সে দিকটা ভাবতে হবে। রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান তৈরি থাকলেও আরও আর্থিক বিকল্প থাকলে ক্ষতি কি!