২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছে। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন হয়েছে দেশ জুড়ে। ১ জুন পর্যন্ত চলবে নির্বাচন। সারা দেশে ভোট নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। কেবল রাজনীতিবিদেরাই নন, আমজনতা থেকে তারকা— সকলেই তাকিয়ে রয়েছেন ৪ জুন ভোটের ফলাফলের দিকে। সরকারে আদৌ কোনও বদল আসবে কি না, সে দিকেই নজর সকলের।
ভোট নিয়ে উন্মাদনা থাকলেও বলিপাড়ার এমন কয়েক জন তারকা আছেন, যাঁরা ইচ্ছা থাকলেও এ বছরের লোকসভা নির্বাচনে ভোটদান করতে পারবেন না। জেনে নিন, ভারতে থেকেও কোন কোন তারকা ভোট দিতে পারবেন না।
বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের তালিকায় রয়েছেন আলিয়া। ‘হাইওয়ে’, ‘রাজ়ি’, ‘গঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’— বলিউডকে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন অভিনেত্রী। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে তাঁর সাবলীল অভিনয় নজর কেড়েছে দর্শকদের। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব থাকার কারণে আলিয়া কিন্তু ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ভোটদান করতে পারবেন না। মা সোনি রাজদানের সূত্রে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন অভিনেত্রী। ব্রিটেনের নাগরিক বলেই আলিয়ার কিন্তু ভারতে ভোটদানের অধিকার নেই।
ক্যাটরিনা কইফেরও ভারতে ভোটদানের অধিকার নেই। তিনিও আলিয়ার মতো ব্রিটেনের নাগরিক। ব্রিটিশ শাসনাধীন হংকং-এ জন্ম হয়েছিল ক্যাটরিনার, পরে তিনি মডেলিং করার জন্য লন্ডনে চলে যান। তার পর অভিনয় করবেন বলে ভারতে আসেন তিনি। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর অভিনেতা ভিকি কৌশলের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন তিনি। এখন তিনি ভারতের বৌমা, তবুও তার ভোটদানের অধিকার নেই।
বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতাদের নায়িকা জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ় । আাইটেম গার্লও বটে। তাঁর নাচ দেখে বহু পুরুষের হৃদয় ব্যথা শুরু হয়। জ্যাকলিনও কিন্তু এ বছর নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। জ্যাকলিন ভারতের বাসিন্দা নয়, তিনি আদতে শ্রীলঙ্কার নিবাসী। তাঁর বাবা শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা, মা মালয়শিয়ার বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে রয়েছেন তিনি কেবলই কর্মসূত্রে। ভারতে ইতিমধ্যেই তিনি বাড়ি কিনে ফেলেছেন। ২০০ কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের মামলায় নাম জড়িয়েছে অভিনেত্রীর।
‘জানে তু ইয়া জানে না’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে ইমরান খানের। ফিল্মি পরিবারের ছেলে। আমির খানের ভাগ্নে। প্রথম ছবিতেই সাফল্য পান তিনি। দীপিকা পাড়ুকোন, কঙ্গনা রানাউত, করিনা কপূর খান— সকলের সঙ্গেই কাজ করেছেন। বিপুল অর্থ রোজগারও করেন অল্প সময়ে। তবে খুব বেশি দিন অভিনয় করেননি তিনি। বলিউডের ছবিতে এখন আর দেখা যায় না ইমরানকে। ইমরান আসলে কিন্তু আমেরিকার নাগরিক। তাঁর বাবা-মা কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকতেন। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি ভারতে চলে আসেন। তাই বাবা-মা ভারতীয় হলেও তিনি ভারতের নাগরিক নন।
‘জিসম ২’ ছবির হাত ধরে বলিউডে আত্মপ্রকাশ ঘটে করণজিৎ কৌরের। তবে ভারতীয় দর্শকের মনে আলাদা জায়গা করে নেন অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘বিগ বস্’-এ যোগ দিয়ে। বলিউডে আসার আগে নীল ছবির দুনিয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। তবে করণজিৎ নয়, সানি লিওনি নামেই তিনি পরিচিত। ভারতে তিনি সকলের মন জয় করলেও তিনি ভারতীয় নন। কানাডা ও আমেরিকার নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর। কানাডায় সানির জন্ম হয়, পরে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন করেন। এই কারণে সানিও কিন্তু এই নির্বাচনে যোগদান করতে পারবেন না।
নৃত্যশৈলীর নিরিখে ভারতে নোরার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। তাঁর নাচের ভিডিয়ো অনুরাগীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। সমাজমাধ্যমেও তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি! সম্প্রতি বলিউডে কেরিয়ারের ১০ বছর সম্পূর্ণ করলেন নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী নোরা ফতেহি। ‘রকি হ্যান্ডসাম’, ‘সত্যমেব জয়তে’ বা ‘বাটলা হাউস’-এর মতো ছবিতে তাঁর উপস্থিতি দর্শকের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি কুণাল খেমু পরিচালিত ‘মাডগাঁও এক্সপ্রেস’ ছবিতে দর্শক নোরাকে দেখেছেন। তবে জন্মসূত্রে নোরাও কানাডার নাগরিক। তাই ভারতে ভোটদানের অধিকার নেই তাঁর।
২০১১ সালে ইমতিয়াজ আলির ছবি ‘রকস্টার’-এর মাধ্যমে, রণবীর কপূরের বিপরীতে প্রথম বড় পর্দায় দেখা যায় অভিনেত্রী নার্গিস ফকরিকে। ২০১৩ সালে ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’তে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। অভিনয় করেন ‘ম্যায় তেরা হিরো’ ছবিতে। বলিপাড়ায় বেশ পরিচিত হলেও ভারতীয় নন এই অভিনেত্রী। আমেরিকার নিউ ইয়র্কে জন্মেছেন এই বলি নায়িকা। তবে তাঁর বাবা-মায়ের কেউই ভারতীয় নন। বাবা পাকিস্তানের, মা চেক প্রজাতন্ত্রের। বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ দেখেছিলেন মাত্র ছ’বছর বয়সে। বিচ্ছেদের কিছু দিন পর তাঁর বাবা মারা যান। সেই সময় থেকেই মায়ের সঙ্গে জীবন সংগ্রাম শুরু তাঁর। মডেলিং থেকেই অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেন তিনি। আমেরিকার সেরা মডেলের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কোনও তরুণীর এই তালিকায় থাকা এই প্রথম।
পুদুচেরিতে ১৯৮৪-র ১০ জানুয়ারি জন্ম কল্কি কেঁকলার। শ্রী অরবিন্দের আশ্রম শ্রী অরোভিলের আশ্রমিক ছিলেন তাঁর বাবা জোয়েল কেঁকলা এবং মা ফ্রাঁসোয়া আর্মান্দি। দু’জনেই ফ্রান্সের বাসিন্দা। কল্কির প্রপিতামহ মরিস কেঁকলার নাম জড়িয়ে আছে আইফেল টাওয়ার নির্মাণের সঙ্গে। কল্কির শৈশবের বড় অংশ কেটেছিল শ্রী অরোভিলে। তার পর তাঁদের নতুন ঠিকানা হয় তামিলনাড়ুতে উটির কাছে কল্লাত্তি গ্রাম। এখানে নতুন ব্যবসা শুরু করেন কল্কির বাবা। কেঁকলা পরিবারের এই বাসা ভেঙে গেল কয়েক বছর পরে। কল্কি যখন পনেরো বছরের কিশোরী, তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিয়ে করে জোয়েল চলে যান বেঙ্গালুরুতে। কল্কিকে নিয়ে ফ্রাসোঁয়া থেকে যান পুরনো ঠিকানাতেই। তার পর নাটক নিয়ে পড়াশোনা করতে লন্ডনে যান তিনি। লন্ডন থেকে কাজের সূত্রে আবার ভারতে ফিরে আসেন তিনি। অভিনয়ের জন্য ভারতে জাতীয় পুরষ্কারও পেয়েছেন কল্কি। তবু ফ্রান্সের নাগরিক হওয়ার কারণে ভারতে ভোটদানের অধিকার নেই অভিনেত্রীর।
ভারতের গোয়ায় জন্ম হয়েছে ইলিয়ানা ডিক্রুজ়ের। একাধিক তেলেগু ও হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। ইলিয়ানার অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর রূপেও মজে গোটা দেশ। ভারতে জন্ম হলেও ইলিয়ানা আদতে পোর্তুগালের নাগরিক। ২০১৪ সালে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি। তার পরেও কর্মসূত্রে ভারতে আসেন তিনি। ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ। এই মুহূর্তে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় সংসার পেতেছেন অভিনেত্রী। যদিও অভিনেত্রীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই। তাঁর সন্তানের পিতৃপরিচয় থেকে শুরু করে তিনি আদৌ বিবাহিত কি না, সে সব নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া হয়েছে সমাজমাধ্যমের পাতায়। তবে সন্তানের বাবাকে প্রকাশ্যে আনলেও নিজের সঙ্গীকে আদৌ বিয়ে করছেন কি না, সেই নিয়ে সমাজের নীতিপুলিশের কাছে জবাবদিহি দিতে নারাজ অভিনেত্রী। পর্তুগালের নাগরিক হওয়ার কারণে ইলিয়ানার ভারতে ভোটদানের অধিকার নেই।
তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। অনুরাগীদের কাছে তাঁর প্রাথমিক পরিচয় অভিনেত্রী হিসাবে। কিন্তু অভিনেত্রী দীপ্তি নাভাল একাধারে চিত্রকর, ফোটোগ্রাফার এবং কবি। তবে ইদানীং ওয়েব সিরিজ়েই দর্শক দীপ্তিকে বেশি দেখছেন। দীপ্তিও কিন্তু ভারতে ভোটদান করতে পারেন না। দীপ্তির জন্ম হয়েছিল ভারতে অমৃতসরে। তবে তাঁর বাবা কাজের সূত্রে তাঁকে নিয়েই আমেরিকায় চলে যান। সেখানেই পড়াশোনা করেন তিনি। সেখানকার নাগরিকত্ব পান দীপ্তি। পরে কর্মসূত্রে ভারতে এলেও তিনি এখনও আমেরিকারই নাগরিক।