সমকামী সঙ্গীও হতে পারেন ‘নমিনি’। প্রতীকী ছবি।
জীবন বিমা, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে সঙ্গীকে ‘নমিনি’ করতেই পারেন সমকামীরা। সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে মিলল এমনই উত্তর।
স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের সম্পত্তির উপর অধিকার থাকবে, এ এক প্রকার স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু যুগল যদি হন সমকামী, তা হলে কী হবে? আইনে তাঁদের বিয়ের স্বীকৃতি নেই এ দেশে। ফলে একে অপরের ‘বৈধ’ সঙ্গীও হতে পারেন না। তাতে সামাজিক জটিলতা যেমন আছে, তেমনই আছে আইনি নানা প্যাঁচ। শহরের এক সমকামী যুগলের উদ্যোগে এ বার সে সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলল। কাটল ধোঁয়াশাও।
রক্তের সম্পর্ক কিংবা আইন মেনে বিবাহ, এই দু’টি ছাড়া ব্যাঙ্ক কিংবা জীবন বিমার ‘নমিনি’ কেউ হতে পারেন না। এমনই হল প্রচলিত ধারণা। ফলে বহু বছর ধরে একসঙ্গে ঘর করেও একে অপরকে খাতায়-কলমে এমন কোনও অধিকার দিতে পারছিলেন না শহরের সমকামী যুগল সুচন্দ্রা দাস ও শ্রী মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নিয়ম কতটা কড়া? আদৌ কি যা জানা যায়, সেটাই নিয়ম? এ সংক্রান্ত ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছিল। তাই তথ্য জানার আইন অনুসারে আবেদন করেন তাঁরা। সম্প্রতি তারই উত্তর এসেছে।
এলআইসি থেকে মিলেছে এমনই উত্তর। ছবি: সংগৃহীত
একটি আবেদন গিয়েছিল লাইফ ‘ইনসিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এলআইসি)-তে। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোনও বিমায় নমিনির নাম কি বদলানো যায়? বদলে যাঁর নাম দেওয়া হবে তাঁর সঙ্গে কি আইনি কোনও সম্পর্ক থাকা জরুরি?
উত্তরে এলআইসির পক্ষে জানানো হয়েছে, নমিনির নাম বদলানো যায়। এবং এমন কোনও নিয়ম নেই যে খাতায়-কলমে স্বীকৃত সম্পর্ক ছাড়া কাউকে বিমার নমিনি করা যাবে না। অর্থাৎ, বিয়ে কিংবা রক্তের সম্পর্কের বাইরেও কাউকে নিজের জীবন বিমার নমিনি করা যায়।
তবে এখানেও একটি প্রশ্ন ওঠে। নমিনি আর উত্তরাধিকারী কিন্তু এক নয়। যিনি নমিনি, তিনি বিমার টাকা তুলতে পারবেন। তবে আইনত তা দিয়ে দিতে হবে উত্তরাধিকারীকে।
তবে উপায়ও রয়েছে। করা যায় ইচ্ছাপত্র। সেখানে নিজের সঙ্গীকে সেই টাকার উত্তরাধিকারী করে দেওয়া যাবে। তবেই নমিনি পাবেন বিমার টাকা।
আর একটি আবেদন জমা পড়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-য়। সেখানেও জানতে চাওয়া হয়, একই বিষয়ে। বিয়ে কিংবা রক্তের সম্পর্কের বাইরে কি কাউকে নমিনি করা যেতে পারে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর মেলেনি। তবে আরবিআই-এর তরফে জানানো হয়েছে, নমিনির সঙ্গে বিয়ে বা রক্তের সম্পর্ক থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
এই দু’টি আবেদন সম্পর্কে জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয় সুচন্দ্রার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আরবিআই-এর উত্তর স্পষ্ট নয়। তবে এ কথা বোঝা গিয়েছে যে, নিজের পছন্দের কাউকে নমিনি করতে আইনি কোনও বাধা নেই।’’ তবে স্পষ্ট উত্তর পেতে আরও এক বার আবেদন করার কথা ভাবছেন তাঁরা। এই বিষয়ে সুচন্দ্রা ও শ্রীকে সাহায্য করেছেন আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত। আবার তাঁরই সাহায্যে এগোবেন এই যুগল।
তবে আপাতত কিছুটা নিশ্চিন্ত শ্রী ও সুচন্দ্রা। এই উত্তর পাওয়ার পর তাঁদের মতো আরও বহু যুগল কিছুটা আশার আলো দেখতে পাবেন বলে মনে করেন সুচন্দ্রা। তিনি বলেন, ‘‘এ দেশে সমকামী বিবাহ যে হেতু বৈধ নয়, তাই সমকামীরা বিমা কিংবা ব্যাঙ্কে সঙ্গীকে স্বামী বা স্ত্রী হিসাবে নমিনি করতে পারবেন না। কিন্তু সাধারণত যে বলে দেওয়া হয় বিয়ে কিংবা রক্তের সম্পর্ক না থাকলে নমিনি করাই যাবে না, অন্তত সেই ভুল ধারণা কাটল। লড়াই আরও বাকি আছে। তবে এই উত্তর আমাদের মতো অনেককেই এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’’
সুচন্দ্রা এবং শ্রীর আবেদনের ভিত্তিতে যে উত্তর মিলেছে, তার থেকে এটুকু স্পষ্ট যে, কোনও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই কাউকে সম্পর্কের ভিত্তিতে নমিনি বাছতে বাধ্য করতে পারবেন না। যদি কেউ এমন করেন, তবে আরবিআই-এর দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।