কেন চাকরি ছাড়লেন যুবক? ছবি: সংগৃহীত।
২৮ বছর বয়সি এরিক ইউ ৩ কোটি টাকার মেটার চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন। তিনি দাবি করেছেন, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই তিনি জীবনে এই বড় সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হত এরিককে। ছুটির দিনগুলিতেও তাঁকে কোড ডেভেলপ করতে বলা হত সংস্থার পক্ষ থেকে। এই ভাবেই চলতে চলতে তাঁর বার বার প্যানিক অ্যাটাক হয়। তখনই তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একটি সাক্ষাৎকারে এরিক বলেন, ‘’ওই দিনটা আমার মনে আছে, আমার হৃদ্স্পন্দনের হার অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, কানের কাছে যেন ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল।”
এরিক ফেসবুকের মতো সংস্থায় চাকরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ছোট থেকেই। এরিক বলেন, ‘‘এই রকম সংস্থায় চাকরি করার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। শেষমেশ গুগ্ল আর ফেসবুক দুই সংস্থাতেই চাকরি করার সুযোগ পেয়ে যাই। গুগ্লের থেকেও সেই সময় ফেসবুকের চাকরিটা আমার কাছে বেশি ভাল মনে হয়েছিল সব দিক থেকেই। তাই ফেসবুকেই (এখনকার মেটা) চাকরি করা শুরু করি।’’
সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এরিক ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন মেটায় কোডিংয়ের কাজ করাটা মোটেই সহজ ছিল না। কোডিংয়ের গুণগত মান নিয়ে কোনও রকম আপস করে না মেটা। মাঝেমধ্যেই কাজের চাপ এতটাই বেশি হত যে অফিসে বেশি সময় ধরে কাজ করেও কাজ শেষ হত না, ফলে ছুটির দিনগুলিতেও কাজ করতে হত। ২০১৯ সালে প্রথম বার প্যানিক অ্যাটাক হয় এরিকের। সে দিন বাড়ি থেকেই কাজ কারছিলেনন তিনি। এরিক লেখেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই আমার মাথা কাজ করা একেবারে বন্ধ করে দিত, আমার মনে হত শরীরের সঙ্গে আমার কোনও রকম সম্পর্ক নেই। ৩ থেকে ৫ মিনিট এ রকম হত, আবার ঠিক হয়ে যেত সবটা। প্রথম প্রথম আমি বিষয়টিকে ততটাও গুরুত্ব দিইনি। একদিন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়, আমার মনে আছে অফিসে একটা কাজ ডেডলাইনের মধ্যে শেষ করার জন্য আমি দিনরাত কাজ করছিলাম, তখনই আমার অ্যাটাক আসে। চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখতে শুরু করি, বোধবুদ্ধি কিছুই কাজ করছিল না, মনে হচ্ছিল যেন আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এ বার বোধহয় মরেই যাব। প্রায় ৩০ মিনিট পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সেখানেই থেমে থাকেনি বিষয়টি। এর পর থেকে মাঝেমধ্যেই এই সমস্যা হতে থাকে আমার। চিকিৎসকেদের সহায়তায় বুঝতে পারি মানসিক চাপ, উদ্বেগের কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে। তাই মোটা টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
এখন সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন রকম ভিডিয়ো বানান এরিক। তিনি এখন সমাজমাধ্যম প্রভাবী।
কর্মব্যস্ত জীবনে এখন অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন। তবে অনেকেই এই বিষয়ে মনোবিদের কাছে যেতে দ্বিধা করেন। এই সমস্যাকে অবহেলা করলে কিন্তু ভবিষ্যতে বড় বিপদের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সতর্ক হওয়া জরুরি।