সম্ভব হলে অফিসের ফাঁকা করিডরে গিয়ে মাস্ক খুলে কিছু ক্ষণ থেকে মাস্ক স্যানিটাইজ করে আবার পরে নিন। ছবি: শাটারস্টক।
বয়ঃসন্ধি থেকেই এই সমস্যার সূত্রপাত। বিশ্ব জুড়ে ৬৮ কোটিরও বেশি মানুষ ব্রণর সমস্যায় জেরবার ছিলেন ২০১৬ সালে। দেশে ব্রণর উৎপাতে নাজেহাল কম বেশি আড়াই কোটি তরুণ-তরুণী। তবে শুধু তরুণ-তরুণীরাই নয়, ব্রণর বিড়ম্বনায় জেরবার হতে পারেন পঞ্চাশের দোরগোড়ায় পৌঁছনো মানুষও।
করোনাভাইরাসের দাপটে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের জীবনযাপনই ওলট পালট হয়ে গিয়েছে। অদৃশ্য শত্রুকে ফাঁকি দিতে এখন বেশির ভাগ মানুষের জীবনের অঙ্গ নাক মুখ ঢাকা মাস্ক। এর ফলেও বাড়ছে ব্রণ তথা ত্বকের সমস্যা— বললেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট, ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর।
ব্রণর ডাক্তারি নাম অ্যাকনে ভালগারিস। আমাদের ত্বকের নীচে সেবেসাস গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত সেবাম বাইরের ঘাত প্রতিঘাত থেকে ত্বককে বাঁচানোর পাশাপাশি ত্বককে কোমল রাখতে সাহায্য করে। নানা কারণে রোমকূপের মুখ আটকে গেলে ব্রণ হয়। মূলত মুখেই বেশি ব্রণ দেখা যায়। তবে বুকে, পিঠে বা নিতম্বেও এই স্কিন র্যাশ হতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে গড়ে ওঠা নতুন অভ্যাসে অজান্তেই এই সব উপকার হচ্ছে, জানতেন!
ইদানিং নাগাড়ে মাস্ক পরে থাকার কারণে ছোট থেকে বয়স্ক অনেকেরই অ্যাকনে ভালগারিসের প্রবণতা বাড়ছে বলে জানালেন সন্দীপনবাবু। একেই তো সেবেসাস গ্রন্থির নিঃসরণ, তার সঙ্গে যদি বাইরের ময়লা জমে রোমকূপে আটকে যায়, তা হলেই ব্রণ সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। এর সঙ্গে জীবাণুর সংযোগে বেশ বাড়াবাড়ি রকমের ব্রণর ঝুঁকি থাকে।
সন্দীপনবাবু জানালেন, ব্যাকটেরিয়ার কারণে বাড়াবাড়ি রকমের ব্রণকে ত্বক বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘প্রোপাইনো ব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনে’। এ ছাড়া কালো আর সাদাটে ব্রণর মতো ফুসকুড়িকে বলে ব্ল্যাক আর হোয়াইট হেডস।
সন্দীপনবাবুর মতে, “ব্রণনিয়ে বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েরা এতটাই সংবেদনশীল যে, এই কারণে আত্মবিশ্বাস কমে গিয়ে হতাশা বোধ তৈরি হতে পারে। শহরাঞ্চলের বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের ব্রণ নিয়ে কিছুটা যত্নশীল হলেও প্রত্যন্ত গ্রামে অভিভাবকরা ব্রণর ব্যাপারে তেমন কোনও গুরুত্বই দেন না। এর ফলে বিভিন্ন লোকের পরামর্শে এটা ওটা লাগিয়ে সমস্যা বাড়িয়ে ফেলে অনেকে। মুখে কালো দাগ ও ত্বক অসমান ও কর্কশ হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে। সাধারণত অল্প-স্বল্প ব্রণ হলে আপন নিয়মেই তা সেরে যায়। কিন্তু সমস্যা বেড়ে গেলে ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
আরও পড়ুন: করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে কী কী প্রয়োজন? কী বললেন চিকিৎসকেরা?
বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েরা ছাড়াও বেশি বয়সে অর্থাৎ ৪০ পেরনো মানুষদের মধ্যেও ব্রণর প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে ত্বক বিশেষজ্ঞ পিয়ালি চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “বেশি বয়সে ব্রণর কারণ হরমোনের ওঠাপড়া। বিশেষত মেনোপজের সময় মহিলাদের শরীরে একাধিক হরমোনের মাত্রার তারতম্য হয়। একে বলে অ্যাডাল্ট অ্যাকনে।”
কোভিড ১৯-এর কারণে এখন সবাইকেই মাস্ক পরতে হচ্ছে। এর ফলে মুখে ব্রণ-সহ ত্বকের নানা সমস্যা বাড়ছে। যে কোনও বয়সেই মাস্কের সংস্পর্শে ব্রণর ঝুঁকি বাড়ে, বললেন পিয়ালী। বিশেষ করে যাঁদের নাগাড়ে মাস্ক পরে থাকতে হয়, তাঁদের সমস্যার ঝুঁকি বেশি। সার্জিকাল ফেস মাস্ক যে উপাদানে তৈরি, তা ভাইরাস আটকাতে অত্যন্ত কার্যকর হলেও ত্বকবান্ধব নয়। বিশেষ করে যাঁদের সংবেদনশীল ত্বক, তাঁদের নাগাড়ে মাস্ক পরার কারণে ব্রণ-সহ নানা র্যাশের ঝুঁকি বাড়ে। তুলনামূলক ভাবে সার্জিক্যাল মাস্ক বা কিছু না হলেও পরিষ্কার সুতির কাপড়ের মাস্ক অনেক বেশি নিরাপদ।
দেহে হরমোনের সমস্যার কারণেও হতে পারে ব্রণ। ছবি: শাটারস্টক
রঙিন মাস্ক থেকে অ্যাকনে ও ইরাপশনের ঝুঁকি বাড়ে বলে জানালেন পিয়ালী চট্টোপাধ্যায়। মূলত রঙে ব্যবহৃত রাসায়নিক এই সমস্যার জন্য দায়ী। অ্যাকনে বা এই জাতীয় স্কিন র্যাশের অন্যতম কারণ রোমকূপের মুখ আটকে যাওয়া। এর হাত থেকে রেহাই পেতে ভাল করে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তবেই মাস্ক পরতে হবে। যাঁদের অত্যন্ত বেশি ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি অয়েল ফ্রি লোশন লাগিয়ে মাস্ক পরবেন।
ব্রণ বা যে কোনও স্কিন র্যাশের সমস্যার মূলে অবশ্য রয়েছে অপরিছন্নতা। তাই মুখ পরিষ্কার রাখা জরুরি। যাঁদের অফিসে টানা ৭–৮ ঘণ্টা মাস্ক পরে থাকতে হয়, তাঁদের এই সমস্যার ঝুঁকি বেশি। কাজের ফাঁকে সম্ভব হলে অফিসের ফাঁকা করিডরে গিয়ে মাস্ক খুলে কিছু ক্ষণ থেকে মাস্ক স্যানিটাইজ করে আবার পরে নিন। কিংবা অফিসে খাবার আগে মাস্ক খুলে মুখ হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে খাবার পর মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে অন্য পরিষ্কার মাস্ক পরুন। ব্রণ হলে কখনওই তা হাত দেওয়া যাবে না, তা হলেই কালো দাগ হয়ে যাবে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, কখনওই ওভার দ্য কাউন্টার কোনও স্টেরয়েড ক্রিম কিনে মুখে লাগাবেন না। আরও একটা ব্যাপারে সচেতন হতে বললেন সন্দীপনবাবু। ত্বকের সমস্যা হলে নিজে থেকে লিভার টনিক খাবেন না। সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)