বিদ্যা বালন। ছবি: অনির্বাণ সাহা।
এই বাংলার সঙ্গে তাঁর এত নিবিড় যোগ যে অনেকেই নাকি তাঁকে বাঙালি বলে ভুল করেন! কলকাতায় ঝটিতি সফরে এসে এমনটাই জানালেন বিদ্যা বালন। এ বারে তিনি এসেছিলেন শহরের এক বড় মণ্ডপের দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে।
দুর্গাপুজোর আবহে এ বার কলকাতা সফরের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন বেনারসি শাড়ি। বরাবরই শাড়ি পরতে ভালবাসেন বিদ্যা। তাঁর সমাজমাধ্যমের পেজে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন শাড়ি নিয়ে পোস্টও দেন তিনি। শাড়ি পরেও ফ্যাশনেবল কী করে থাকতে হয় তা অভিনেত্রী ভালই জানেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, “শাড়ি পরে আমি দৌড়তেও পারি আর পাঁচটা সিকোয়েন্সও শুট করে ফেলতে পারি। আমার জন্য সবচেয়ে ভার্সেটাইল পোশাক হল শাড়ি।” শুধু কথায় নয়, কাজেও তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। দেশে বিদেশের যে কোনও অনুষ্ঠানেই তাঁকে দেখা যায় শাড়িতে। এ বার কলকাতা সফরের জন্যও তিনি বেছে নিয়েছিলেন তাঁর প্রিয় মেরুন রঙের বেনারসি শাড়ি। তার সঙ্গতে ছিল একেবারে বাঙালি সাবেক সাজ। মাঝখানে সিঁথি করে চুলটা পিছনে টেনে একটা খোঁপা করেছিলেন। হালকা মেকআপ আর ঠোঁটে শাড়ির সঙ্গে মানানসই রঙের লিপস্টিক। কপালে একটা ছোট্ট লাল টিপ। সাজের জৌলুস বাড়িয়ে দিচ্ছিল তাঁর সোনার গয়না। আর কানে ছিল তাঁর বরাবরের প্রিয় ঝুমকো দুল।
শুধু কি সাজেই বাঙালিয়ানার স্পর্শ? বিদ্যা বাংলা বলতে পারেন, বাংলায় গানও গাইতে পারেন, প্রচুর বাংলা ছবিও দেখেন, দু’একটা কবিতাও জানেন। বললেন, ‘‘অনেকে তো আমাকে বাঙালি বলে ভুল করেন! আমি মন থেকে বাঙালি। বাংলার সংস্কৃতি, সিনেমা, গান, ভাষা সবেরই প্রচুর প্রভাব রয়েছে আমার উপরে।’’
কলকাতায় এলে কালীঘাটও তিনি অবশ্যই যাবেন। অভিনেত্রীর কথায়, “প্রথম বার কালীঘাটে এসেছিলাম, আমার প্রথম ছবি ‘ভাল থেকো’র সময়ে। এর পর যখনই কলকাতায় এসেছি, কালীঘাটে অবশ্যই গিয়েছি। কলকাতার সঙ্গে, কলকাতার মানুষের সঙ্গে, বাংলা ছবির সঙ্গে, কালী মায়ের সঙ্গে এক অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।’’ কলকাতা খানিকটা বদলালেও শহরটার গন্ধ একই আছে বলে মনে করেন তিনি। ‘‘দ্য সেন্স অব কলকাতা রিমেনস আনচেঞ্জড। আর এটাই এই শহরটার সবচেয়ে বড় আকর্ষণের জায়গা। অনেক ফ্লাইওভার হয়েছে, অনেক জায়গায় মেট্রো হয়েছে, আধুনিকীকরণ হয়েছে, কিন্তু শহরটার আত্মা আগের মতো একই রয়ে গিয়েছে।’’
কলকাতার খাবার না খেলে কি আর এই শহরের আত্মার নাগাল পাওয়া যায়? তাই কলকাতার স্বাদ নিতেও ভুললেন না অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘বাঙালি মিষ্টি খুব ভালবাসি। অনেক বছর ধরে দুধের প্রডাক্ট খাচ্ছি না বলে বাঙালি মিষ্টির বেশির ভাগই বাদ চলে যাচ্ছে। নলেন গুড়ের সন্দেশ খুব মিস করি। আমার জামাইবাবু এ বার সঙ্গে এসেছে, সে খেতে খুব ভালবাসে। তাই কালীঘাট থেকে ফেরার সময়ে বলওয়ন্ত সিং ধাবায় গেলাম। ওখানকার স্পেশ্যাল চা আর নিমকি খেলাম। এর পর শর্মা ধাবায় গিয়ে সকলে লুচি-ঘুগনি খেল আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম,’’ বলেই হাসলেন।
এ বার তাঁর প্রিয় শহরকে বিদায় জানানোর পালা। তবে তাঁর আলো-করা হাসি আর সুখমুহূর্তের কিছু ছবি রেখে গেলেন কলকাতাবাসীদের জন্য।