৫০-এর মন্দিরা যেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘বনলতা সেন’। ছবি: সংগৃহীত।
শুক্রবার, ৩১ মার্চ, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু এ বছরের আইপিএল মরসুম। অনুষ্ঠানের মঞ্চ মাতালেন অরিজিৎ সিংহ, তামান্না ভাটিয়া, রশ্মিকা মন্দানার মতো তারকারা। তবে তার মাঝে আলাদা করে চোখ টানল মন্দিরা বেদীর উপস্থিতি। পরনে ওয়াইন রঙের কাঁধখোলা আঁটসাঁট গাউন। কানে ছোট দুল। বাঁ হাতের কব্জিতে আকাশি ঘড়ি। ৫০-এর মন্দিরা যেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘বনলতা সেন’। তাঁর গ্ল্যামারের চাকচিক্যে আরও ঝলমলে হয়ে উঠেছিল আইপিএলের উদ্বোধনী মঞ্চ।
২০২১ সালের ৩০ জুন মন্দিরার স্বামী রাজ কৌশল প্রয়াত হন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েনে খেলার মাঠ থেকে কিছু দিন বিরতি নিয়েছিলেন মন্দিরা। মাইক হাতে ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা, খুনসুটিতে মন্দিরাকে দেখা যাচ্ছিল না। শুক্রবার, আইপিএলের মঞ্চে মন্দিরাকে দেখে তাই উচ্ছ্বসিত ভক্তরা।
গ্ল্যামারের চাকচিক্যে আরও ঝলমলে হয়ে উঠেছিল আইপিএলের উদ্বোধনী মঞ্চ। ছবি: সংগৃহীত।
বাইশ গজের খেলার সঞ্চালনায় মহিলাকণ্ঠের প্রসঙ্গ উঠলেই প্রথমে উঠে আসে মন্দিরার নাম। অনেকের মতেই, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার তিনি। যে কয়েকটি নারীকণ্ঠের ধারাভাষ্য কানের এবং মনের স্বস্তি দেয়, মন্দিরার কণ্ঠ তার মধ্যে অন্যতম।
অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি, ভারতীয় ক্রিকেটের দাপুটে ধারাভাষ্যকার হিসাবেও তাঁকে চেনে গোটা বিশ্ব। এই পথ চলা প্রথম শুরু হয় ২০০৩ সালে। বিশ্বকাপে প্রথম কাঁধখোলা ব্লাউজ এবং ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়ি পরে সঞ্চালনার দায়িত্ব সামলেছিলেন মন্দিরা। তখন থেকেই বাইশ গজের জগতে মন্দিরার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
আইপিএল, সাধারণ টুর্নামেন্ট, বিশ্বকাপের মঞ্চে বহু বার মন্দিরার উপস্থিতি আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছে। সাজপোশাক তো বটেই, মন্দিরার জৌলুসেও মজেছেন অনেকে। তা যে অস্বাভাবিক নয়, তার প্রমাণ মন্দিরা নিজেই।
এ বছরের আইপিএলেও তার ব্যতিক্রম হল না। স্বমহিমায় ফিরলেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন মন্দিরা। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সব আলো এবং উদ্যাপন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন মন্দিরা। মাঝেমাঝে সমাজমাধ্যমের পোস্টে প্রয়াত স্বামীর প্রতি ভালবাসা উজাড় করে দিতেন। রাজের মৃত্যুশোকে যে তিনি নিমজ্জিত, তাঁর পোস্টগুলি সে কথাই মনে করাত।
বয়সের তোয়াক্কা কোনও দিন করেননি তিনি। ৫০ পেরিয়েও লাল বিকিনি পরে পুরুষসঙ্গীর সঙ্গে জলকেলিতে মেতেছেন, সৈকতের বালি মেখে আবেদনে ভরা ছবি দিয়েছেন। অনেকের মনেই ঈর্ষা জাগিয়েছেন। নিজের জীবন হোক কিংবা অন্য কোনও ক্ষেত্রে— মন্দিরা সারা জীবনই ব্যাট চালিয়ে খেলেন। দত্তক কন্যার পরিচয় দেওয়া নিয়ে লড়াই করা কিংবা ভেজা শরীরে পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, কটাক্ষ এবং বিতর্ককে ছক্কা মারার গতিতে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাই ব্যক্তিগত দুঃখ এবং শোকের পাহাড় পেরিয়ে মন্দিরার ঝলমলে, উজ্জ্বল প্রত্যাবর্তন যেন প্রত্যাশিত। মন্দিরা ফের এক বার মনে করালেন, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।