সন্ধে হলেই মোবাইল-টিভি কেন বন্ধ? প্রতীকী ছবি।
মোবাইলের প্রতি আসক্তি ছিল। তা বাড়ছিলও। কিন্তু গত দু’বছরে করোনা পরিস্থিতিতে এই নেশা আরও ভয়ঙ্কর মাত্রা ছাড়িয়েছে। শিশুরা মোবাইলের প্রতি এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যে তার কুপ্রভাব পড়ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর। সম্প্রতি দেশজোড়া একটি পরিসংখ্যানেও ধরা পড়েছে সেই উদ্বেগের ছবি।
এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামের উদ্যোগ সত্যিই অভিনব। এই গ্রামে প্রতি দিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সকল গ্রামবাসীকে মোবাইল-টিভি থেকে দূরে থাকার নিয়ম জারি হয়েছে। সাংলি জেলার ভাদগাঁও গ্রামে প্রতি সন্ধে ৭টায় একটি সাইরেন বাজে। এই সাইরেনই বাসিন্দাদের তাদের টিভি এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দেয়৷ সাড়ে ৮টার সময় ফের সাইরেন বাজে। তখন থেকে গ্রামবাসীরা আবার টিভি বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন।
কোভিড চলাকালীন অনলাইন ক্লাসের জন্য শিশুরা মোবাইলের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। প্রতীকী ছবি।
এই বছর ১৪ অগস্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের সমাবেশে স্থির করা হয় টিভি-মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমাতে একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তখনই স্থির হয় পরের দিন থেকে প্রতি দিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রামবাসীদের বন্ধ রাখতে হবে মোবাইল-টিভির ব্যবহার। ভাদগাঁও গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোক বাস করেন। গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষরাই হয় কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত আর না হয় চিনি তৈরির কারখানায় কাজ করে।
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজয় মোহিতে বলেন, ‘‘কোভিড চলাকালীন অনলাইন ক্লাসের জন্য শিশুরা মোবাইলের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এখন স্কুল-কলেজ খুলেছে। তবে সেখান থেকে ফিরেই হয় তাঁরা মোবাইল নিয়ে বসে না হয় টিভি দেখে। বাড়ির বড়রাও ফোন নিয়েই সারা দিন ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের মধ্যে কথা বলার অবসর পান না তাঁরা।’’
তবে গ্রামবাসীদের এই বিষয় রাজি করানো সহজ ছিল না। প্রথম গ্রামের মহিলাদের নিয়ে সভা করা হয়। তাঁরা নিজেরাই স্বীকার করেন যে তাঁদের সিরিয়াল দেখার আসক্তি আছে। তবে গোটা সমাজের কথা ভেবে তাঁরা পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তে রাজি হন। আরও একটি সভায় স্থির করা হয় মন্দিরের চূড়ায় একটি সাইরেন বসানো হবে। প্রথম প্রথম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোবাইল-টিভি বন্ধ রাখার আর্জি জানাতে হত। তবে এখন গোটা গ্রাম নিজে থেকেই এই নিয়ম মেনে চলে।