Anuttama Banerjee

Transperson: লিঙ্গ পরিচয় কেন শুধু শরীরে আবদ্ধ থাকবে? নারী দিবসের আগে আলোচনায় মনোবিদ অনুত্তমা

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল চতুর্থ পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘রূপান্তরের পথ’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ২১:০৯
Share:

এ পর্বের বিষয় ‘রূপান্তরের পথ’। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ

মাঝে আর একটি দিন। তার পরেই ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। পুরুষ হোক বা নারী, বছরের এই বিশেষ দিনের উদ্‌যাপনে এক দল মানুষ ডুব দেন প্রান্তিকতায়। তাঁরা মনে নারী, শরীরে পুরষ। কিংবা শরীরে পুরুষ, মনে নারী। এ সমাজ যাঁদের চেনে রূপান্তরকামী হিসাবে।

তবে সময় বদলেছে। সমাজের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই বিভিন্ন পেশায় সফল হয়েছেন রূপান্তরকামী মানুষেরা। কিন্তু রূপান্তরের পথ এতটা মসৃণ ছিল কি? অধিকাংশেরই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল বাড়ির ভিতর থেকে। যে সময় থেকে একটি শিশুর বোধ জন্ম নিতে শুরু করে, তখন থেকেই অনেকে বুঝতে পারেন যে, তাঁরা আসলে খানিকটা ‘আলাদা’। শরীরের সঙ্গে মনের যেন কোনও মিল নেই। তাল কাটছে কোথাও। অনেকেই বাবা-মাকে পাশে পান। আবার অনেকেই একা হয়ে পড়েন ‘লোকে কী বলবে’ তার ভয়ে। এই ‘লোকের’ ভয়ে নিজের সত্ত্বাকে আড়ালে রাখার কিছু সমস্যা নিয়েই রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটি ছিল চতুর্থ পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘রূপান্তরের পথ’।

Advertisement

রূপান্তরকামীদের এখনও রাস্তা, ঘাটে, ট্রাম, বাসে, মেট্রোতে এমনকি বাড়িতেও নানা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। তেমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা উঠে এল রবিবারের আলোচনায়। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যাবে প্রশ্ন। এই পর্বেও বিভিন্ন মানুষের তরফ থেকে ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। অয়ন জানালেন, তিনি এক জন রূপান্তরকামী নারী। পেশায় ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্ট। যেদিন থেকে তিনি জানতে পেরেছেন যে, তাঁর মন ও শরীর এক নয়, সে দিন থেকে তাঁর লড়াইটা শুরু হয়েছে। পুরুষ আর নারীর অধিকার পেরিয়ে গিয়ে স্কুলের শৌচালয় ব্যবহার করতেও বুক কাঁপত। তবে কোনও প্রতিকূলতার কাছেই তিনি মাথা নোয়াননি। সমাজের সঙ্গে নানাবিধ বোঝাপড়া সত্ত্বেও তিনি নিজের সত্ত্বাকে উদ্‌যাপন করে চলেছেন। অয়নের এই লড়াইকে কুর্ণিশ জানান মনোবিদ।

সকলের পরিস্থিতি এক রকম থাকে না। মননে পুরুষ অথচ শরীরে নারী হয়েও শারীরবৃত্তীয় বদল ঘটাতে পারেননি আত্রেয়ী। তিনি জানিয়েছেন, ছোট থেকে শাড়ি বা চুড়িদারের তুলনায় বাবা-কাকার ঢিলেঢালা পোশাক পরতেই ভাল লাগত। বয়সে বড় দিদিদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকতেন। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর ভাবনায় এক জন পুরুষ বাস করছেন। শরীরের বদল হয়নি ঠিকই। তবে সঙ্গীনী আর সন্তানকে নিয়ে এখন এক প্রকার সুখেই আছেন। তবু তাঁর মনে হয়, কোথাও যেন অপূর্ণতা রয়ে গিয়েছে। নিজের মনের কাছে সাড়া দিতে শারীরিক বদল একমাত্র পথ নয়। সত্ত্বাই এখানে প্রধান। আশ্বাস দিলেন অনুত্তমা।

শরীর ও মনের এই লড়াইয়ে অনেকেই পাশে পান না পরিবারকে। যেমন শ্রী ওরফে সোহম দত্ত জানিয়েছেন, তিনি শরীরে পুরুষ। তবে তিনি টের পেয়েছেন তাঁর মনে জুড়ে রয়েছে নারী হয়ে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। পরিবারের সদস্যরা অবশ্য এই ‘সমস্যা’র একটি সহজ সমাধান দিয়েছেন। সোহম জানালেন, ‘বাড়ি থেকে আমাকে বলা হয়েছে, তুই বরং মনটা পরিবর্তন করে নে’। এমনকি সোহমকে শুনতে হয়েছে ‘তুই তো হিজড়া হতে চাস’। রূপান্তরকামী মানেই কিন্তু ‘হিজড়া’ নয়। ফের তা মনে করিয়ে দিলেন মনোবিদ অনুত্তমা। তিনি বলেন,‘‘রূপান্তরকামীদের ক্ষেত্রে নারী শরীরে জন্মে পুরুষ হতে চাওয়া থাকতে পারে। পুরুষ শরীরে জন্মে নারী হতে চাওয়া থাকতে পারে। নারী এবং পুরুষ এই বিভাজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেকে দেখা থাকতে পারে। যাঁরা প্রতি মুহূর্তে বাঁচছেন, তাঁদের ব্যক্তি সত্ত্বার উদ্‌যাপনে লিঙ্গ কিন্তু বাধা হয়ে উঠতে পারে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement