প্রেম দিবসে আলোচনায় অনুত্তমা
প্রেম দিবস নিয়ে ব্যস্ত চারপাশ। শুধু আজ, ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, গত কয়েক দিনে দোকানপাট ছেয়ে গিয়েছে লাল-গোলাপি উপহারের মোড়ক, ফুল, কার্ডে। রেস্তরাঁয় ভিড় জমেছে। বাতাসে এখন ভালবাসার গন্ধ মঁ মঁ করছে যেন। কিন্তু এ সবের মধ্যে জায়গা আছে কি সমপ্রেমীদেরও? কোথাও দেখা যায় দুই যুবক কিংবা দু’জন তরুণীর হাতে হাত রাখার দৃশ্যে সাজানো কার্ড, পোস্টার?
‘রাখার ইচ্ছা থাকলেও, রাখা যায় নাকি? লোকে কী বলবে!’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনই উত্তর মিলবে। আর এই ‘লোকের’ ভয়ে প্রেম আড়াল করার কিছু সমস্যা নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এটিই ছিল প্রথম পর্ব। এ পর্বের বিষয় ‘সমপ্রেম’।
সমপ্রেম নিয়ে ছুৎমার্গ রয়েছে এখনও সমাজের নানা স্তরে। তেমনই কিছু অভিজ্ঞতার কথা উঠে এল সোমবারের আলোচনায়। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যাবে প্রশ্ন, ভাবনা, মতামত। এ বার নানা জনের কাছ থেকে ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। মাঝবয়সি বধূ জানালেন স্কুলবেলার বান্ধবীর কথা। বছর দুয়েক ছিল সম্পর্ক। এখন সে সম্পর্কের কথা দু’জনে আড়ালেই রেখে চলেন। ছোটবেলার স্মৃতিচারণেও উঠে আসে না সে প্রসঙ্গ। নিজেকে সুখী বলেছেন বিবাহিত জীবনে। কিন্তু পুরনো প্রেমের স্মৃতি আড়ালে রাখার অভ্যাস তাঁকে ভাবায়। সমপ্রেম না হলে সে সম্পর্ক কি আদৌ আড়ালে রাখতেন স্কুলবেলার দুই বান্ধবী? সে ভাবনার ইচ্ছাকে স্বাগত জানান মনোবিদ।
সমপ্রেম নিয়ে ছুৎমার্গ রয়েছে এখনও সমাজের নানা স্তরে
আবার সকলে সুখীও নন। যেমন সমকামী বলে ঘর ও বাইরে অধিকাংশের চোখেই যেন প্রান্তিক এক যুবক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনও এক সংবাদমাধ্যমের সেই কর্মী সে সব কথা লিখে পাঠিয়েছিলেন অনুত্তমার কাছে। জানিয়েছেন, মাঝেমাঝে মৃত্যুচিন্তাও ঘিরে ধরে তাঁকে। অনুত্তমা পথ দেখালেন। মনে করালেন, এখনও জীবনের অনেকটা বাকি। হয়তো নিজের পছন্দের সঙ্গীর সঙ্গেও দেখা হবে কখনও। হাল ছাড়লে সমস্যার সমাধান হবে কী করে!
নিজের সমপ্রেমী সত্তাকে লুকিয়ে রাখা যে খারাপ থাকার কারণ হয়ে ওঠে, তা কারও অজানা নয়। যেমন আশাবরী নামের এক তরুণী চিঠি লিখে জানালেন, ‘আমি বহু কাছের মানুষকে বলতে শুনেছি, সমপ্রেম এক ধরনের মানসিক বিকৃতি।’ কিন্তু তা তো বিকৃতি নয়। বিষমপ্রেমের মতোই স্বাভাবিক, প্রেম দিবসে কথায় কথায় মনে করালেন অনুত্তমা। তিনি বললেন, ‘‘আমরা দেখে এসেছি পুরুষ এবং নারী সন্তান উৎপাদন করবেন। তাঁরা বিবাহ করবেন। এবং এটাই যেন এক মাত্র পথ। এক মাত্র সম্পর্কের মূল চরিত্র। তা যে গোটাটা নয়, তার বাইরেও যে সম্পর্কের আরও নির্মাণ হতে পারে, এই ভাবনার মধ্যে আদতে যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই, এতে যে কোনও মানসিক অসুখ নেই, পরিবারকে, সমাজকে আরও সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’