লকডাউনে সুস্থ থাকতে বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণ।
এমনিতেই গা ঘামিয়ে প্রতি দিনের শরীরচর্চায় আলস্য অনেকেরই। তার উপর এই মনখারাপের আবহে বেড়েছে ঘরের কাজ। তাতেই যথেষ্ট ব্যায়াম হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। তা শুয়ে-বসে থাকার চেয়ে ভাল বটে, তবে তাতে প্রয়োজনীয় সবটুকু ক্যালোরি ঝরে না।
‘‘লকডাউনে কাজ বাড়লেও সব সেরেও হাতে থেকে যাচ্ছে উদ্বৃত্ত অনেকটা সময়। শুয়ে-বসে থাকার পরিমাণও বাড়ছে। তার উপর দৌড়ঝাঁপ করে বাস-ট্রেন ধরা বা হুড়োহুড়ি করে অফিসের ভাত জোগানোর তাড়া নেই। তার উপর বাড়িতে থেকে নানা খাবার বানিয়ে খাওয়ায় প্রচলিত ডায়েটের ধারও ধারছেন না অনেকেই। এতে কিছুটা ক্ষতি তো হয়ই।
বয়স বেশি হলে, ডায়াবিটিস জাতীয় অসুখবিসুখ থাকলে, সমস্যা আরও বাড়ে। কাজেই শুয়ে-বসে থাকা চলবে না। দিনভর সচল থাকতে হবে। বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণও।’’ জানালেন, রিউম্যাটোলজিস্ট পার্থজিত দাশ।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় বিত্তবান দেশগুলি যা পারেনি ভারত তা করে দেখিয়েছে: কুণাল সরকার
বাইরে না বেরিয়ে ছাদে হাঁটা ও স্পট জগিং ছাড়াও স্ট্যাটিক সাইকেলেও হতে পারে শরীরচর্চা।
কী ধরনের ব্যায়াম?
• ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোরকদমে হাঁটছেন ছাদে বা ট্রেডমিলে, কেউ যোগাসন করেন। কিন্তু তাতে পুরো কাজ হয় না। ঠিক কী কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয়, তা জানিয়েছেন পার্থজিতবাবু।
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ‘আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন’ থেকে জানানো হয়েছে, ১৮-৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার। এর সঙ্গে নিয়মিত শরীরের নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম করতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হবে পেশীর শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।
• অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলতে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো. স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বোঝায়। তিন্তু এই লকডাউনে তা করবেন কী ভাবে! তাই ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান। সাধ্য মতো জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়। টানা ২০-৩০ মিনিট। টানা না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট হাঁটবেন। এমন গতিতে যাতে হাঁপিয়ে হলেও দু’-চারটে কথা বলা যায়, কিন্তু গান গাওয়া যায় না। তবে তার আগে হাঁটু-কোমর-গোড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন। হার্ট-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যারোবিক করুন। তবে হাঁটা বা জগিংয়ের আগে ভাল হাঁটার জুতো পরে নেবেন। না হলে পায়ে ব্যথা হবে।
শরীরের পেশীসন্ধিকে সচল রাখবে স্ট্রেচিং।
• স্ট্রেচিং কী ভাবে করতে হয় তা কমবেশি সবাই জানেন। যাঁরা নিয়মিত যোগা করেন, তাঁরা তো জানেনই। বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশীসন্ধিকে সচল রাখার হালকা ব্যায়াম। পা-কোমর-শিরদাঁড়ার স্ট্রেচিং এই সময় খুব কাজে আসবে। কোনও ব্যথা-বেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশীর বড় কোনও সমস্যা না থাকলে করতেই পারেন।
• পেশী জোরদার করার ব্যায়ামও দরকার। এটা দু’ভাবে করা যায়, ওজন নিয়ে ও শরীরের ওজনকে ব্যবহার করে। যাকে বডি ওয়েট ট্রেনিং। এর মধ্যে বিভিন্ন রকম স্কোয়াট যেমন আছে, তেমনই রয়েছে লেগ রাইজিং, প্ল্যাঙ্ক, পুশ আপ ইত্যাদি। তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা ফিটনেস কম বা হাঁটু-কোমর ব্যাথা আছে এমন মানুষের পক্ষে অভ্যাস না থাকলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ফোনে কথা না বলে করা উচিত নয়। সুস্থরা অবশ্যই করতে পারেন এর সবক’টি ব্যায়াম।
• এ ছাড়া আছে নিউরোমোটর স্কিল ট্রেনিং বা ব্যালান্স ট্রেনিং। এটাও শুরুতে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া করা ঠিক নয়।•
• ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে যাতে সুরের তালে তালে অ্যারোবিক্সের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, সব হয়ে যায়। সে রকমই একটি হল টাবাটা। বয়স কম হলে, ফিটনেস থাকলে টাবাটা করা যেতই পারে।
• জুম্বা করতে পারেন। তবে বয়স কম ও ফিটনেস বেশি থাকলে তবেই। বেশি বয়সেও ফিটনেস ভাল থাকলে, হাঁটু-কোমর ঠিক থাকলে করতে পারেন।
• যাঁরা করেন, এই সময় তা ছেড়ে দেবেন না। এতে আপনার শরীর যেমন ভাল থাকবে, মনও হালকা হবে একটু।
• এর পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় সচল থাকার চেষ্টা করুন। এক জায়গায় টানা বসে থাকার অভ্যাস হলে ব্যায়ামের ফল সেভাবে পাবেন না।
আরও পড়ুন: ভিটামিন সি কি করোনা ঠেকাতে পারে?
মেদ কমাতে ভরসা রাখুন প্ল্যাঙ্কে।
ব্যায়ামের ফল
শুধু চর্বি ঝড়ানো নয়, ব্যায়ামের ফল আছে আরও। যেমন—
• হার্ট ও ফুসফুসকে তাজা রাখে। কোভিড-১৯-এর জটিলতা ঠেকাতে যার বড় ভূমিকা আছে।
• সুগার-প্রেশার-কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রথম দু’টির সঙ্গে যে কোভিডের সম্পর্ক আছে, তা এখন সবাই জানেন।
• হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে।
• ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কোভিড-১৯ ঠেকাতে ও হলে তার সঙ্গে যুঝতে যা এখন একান্ত দরকার।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)