COPD

কেবল ধূমপান নয়, দূষণ থেকেও হয় সিওপিডি, সুস্থ থাকতে কী কী করবেন?

ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লেগে, বুকে কফ বসে শুরু হয় প্রবল কষ্ট।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:২০
Share:

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’-এর মূল কারণ ধোঁয়া।

এমনিই পরিবেশে দূষিত ধোঁয়া কম নেই, তার উপর যুক্ত হয় বিড়ি–সিগারেট। এই সব ধোঁয়াতে এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক আছে যারা ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে প্রদাহ তৈরি করতে করতে যায়। যত বেশি দিন, যত বেশি ধোঁয়ার মুখোমুখি হওয়া যায়, তত বেশি প্রদাহ হয়। যার ফল ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা সিওপিডি নামের শ্বাসকষ্টের অসুখ।

Advertisement

তবে কার কতটা প্রদাহ হবে, কত দিনে হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যায় না। দিনে ১০–১২টা সিগারেট খেলে ৫–৭ বছরের মধ্যে সিওপিডি হতে পারে৷ ঘন ঘন টান দিয়ে বিড়ি জ্বালিয়ে রাখতে হয় বলে বিড়ি থেকে খারাপ রাসায়নিক বেশি ঢোকে শরীরে৷

প্রথম দিকে ঘুম থেকে ওঠামাত্র কাশি হতে থাকে, কাশতে কাশতে কিছুটা কফ উঠলে কষ্ট কমে। তার পর যত দিন যায় দুটো–চারটে করে ফুসফুসের কোষ অকেজো হতে শুরু করে। ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে বাতাস চলাচলে ব্যঘাত হয়ে দেখা দেয় সিওপিডি। যে সব কোষ অকেজো হয়ে যায় তারা আর ঠিক হয় না৷ ফলে রোগ যতখানি এগিয়ে গেছে তাকে আর পিছিয়ে আনা যায় না। তবে বিড়ি–সিগারেট ছেড়ে দিলে ও ভাল করে চিকিৎসা করলে রোগ আর বাড়তে পারে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: শীতে কোমর, ঘাড় ও হাঁটুতে ঘন ঘন ব্যথা? জব্দ করুন এই কয়েকটি উপায়ে

সিওপিডি–র শুরুতে লাগাতার কাশি ও অল্পস্বল্প শ্বাসকষ্ট থাকে। বেশি খাটাখাটনি করলে বাড়ে। পরের দিকে কাজকর্ম না করলেও দমের ঘাটতি হতে থাকে। ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লেগে, বুকে কফ বসে শুরু হয় প্রবল কষ্ট। প্রথম দিকে সে কষ্ট ওষুধে কমে৷ পরে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হয়।

চিকিৎসা

পালমোনারি ফাংশন টেস্ট বা পিএফটি করে রোগটা সিওপিডি কি না তা বোঝা যায়। রোগ কোন পর্যায়ে আছে তাও জানা যায় এই পরীক্ষা থেকে। মৃদু ও মাঝারি অসুখে সালবুটামল, লং অ্যাকটিং কর্টিকোস্টেরয়েড ও লং অ্যাকটিং অ্যান্টিকলিনার্জিক ইনহেলার ব্যবহার করতে হতে পারে৷ স্টেরয়েড যেহেতু পাফের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করানো হয়, তাই এর কোনও খারাপ প্রতিক্রিয়া হয় না।

বাড়াবাড়ি হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়৷ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে স্টেরয়েডও খেতে হতে পারে৷ অনেক সময় নেবুলাইজেশন লাগে। অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে ইনহেলার ড্রাগ বেশি মাত্রায় সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করাতে হয়। এতে কাজ না হলে হাসপাতালে ভর্তি করে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়।

আরও পড়ুন: শরীরের মেদ ও ভুঁড়ি কিছুতেই বাগে আনতে পারছেন না? এ সব খাবারেই রয়েছে সমাধান

মানতে হয় নিয়ম

ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে নিয়মিত হাঁটাহাটি ও হালকা ব্যায়াম করুন। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করুন ব্রিদিং এক্সারসাইজ। রোগ এগিয়ে গেলে পাঁচ বছর অন্তর নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নিন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিন অক্টোবর–নভেম্বর মাসে। রোগ চেপে ধরলে ওজন কমতে থাকে। কাজেই প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার খান৷ সঙ্গে খান ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার— যেমন, টাটকা রঙিন শাকসব্জি ও ফল, শুকনো ফল, বাদাম। ধোঁয়া, ধুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে মাস্ক পরে নিন। বিড়ি–সিগারেট ছেড়ে দিন। কোনও ভাবে প্যাসিভ স্মোকিংও চলবে না। রাস্তাঘাটে কেউ ধূমপান করলে হয় তাকে এড়িয়ে চলুন নয়তো নাকে চাপা দিন। মশার ধূপ থেকে এই অসুখ হয় কি না তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে অসুখ থাকলে এই ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement