বেড়াতে গিয়ে ভয় তাড়া করছে কি? ছবি: সংগৃহীত
রণবীর-আলিয়া করোনামুক্ত হয়েই পারি দিলেন মলদ্বীপে। টাইগার শ্রফ-দিশা পাটানিও সেখানেই। দু’দিন অন্তরই তারকাদের ইনস্টাগ্রাম দেখলে বোঝা যায়, তাঁরা সব এখন ছুটির মেজাজে। মুম্বইয়ে লকডাউন, কাজ বন্ধ, তাই তাঁরাও ছুটি কাটাতে বিদেশ চলে যাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এই অতিমারির মধ্যে বেড়াতে যাওয়া কতটা সহজ? তাঁরা কি কোথাও যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন? হুজুগের মাথায় বেরিয়ে পড়েও কতটা আনন্দ করতে পারছেন তাঁরা?
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা রায়না পাল। প্রত্যেক বছর তাঁর পাহাড়ে ট্রেক না করতে গেলে চলে না। ট্রেকিং ছাড়াও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পড়েন তিনি। গত বছর কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি একটু ভাল হতেই তিনি স্থলপথে সফর করতে গিয়েছিলেন। ‘‘রোড ট্রিপ করার একটা প্রধান কারণ ছিল যাতে বিমান বা ট্রেনে না যেতে হয়। তার পরেও একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম। সে বারও বন্ধুরা নিজের গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম,’’ বললেন রায়না। সদ্য ট্রেক থেকে ফিরেছেন তিনি। যখন পরিকল্পনা হয়েছিল, তখন সংক্রমণ অনেক কমে গিয়েছিল। তাই বিমানের টিকিটও কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু যত সফরের দিন এগিয়ে এল, তত পরিস্থিতির অবনতি হতে লাগল। অনেক বন্ধুরাই তখন দোটানায় পড়ে গেলেন, আদৌ যাওয়া উচিত হবে কি না তা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা গিয়েছিলেন। কিন্তু রায়না জানালেন এখন আর কোনও সফরের পরিকল্পনা করছেন না তিনি। জুন মাসে পুরী যাওয়ার কথা, সেটাও বাতিল করেছেন।
যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন, তাঁদের ঘুরতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা। আনন্দ করতে পারছেন, নাকি সারাক্ষণ একটা চাপা ভয় কাজ করছে? স্ত্রীর সঙ্গে প্রত্যেক বছরই দার্জিলিং বেড়াতে যান শিবপুর আইআইইএসটি’র অধ্যাপক প্রতীক দত্ত। গত বছর না যেতে পারলেও এ মাসে সাহস করে চলে গিয়েছেন ৪-৫ দিনের জন্য। তিনি জানালেন, সেখানে গিয়ে ভালই ছুটি কাটছে তাঁর। যখন প্রত্যেকদিন সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে, কী ভেবে বেড়াতে যাওয়ার জোর পেয়েছিলেন তিনি? তাঁর কথায়, ‘‘রোজ আমায় বেরতেই হয়। কখনও ইস্টিটিউট, কখনও দোকান-বাজার, কখনও অন্য কাজে। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি তো আমার এমনিই রয়েছে। বেড়াতে গিয়ে নিজে সতর্ক থাকাটাই আসল। আমরা সব সময় মাস্ক পড়ে ঘুরতে যাচ্ছি, হাত স্যানিটাইজ করছি। আমার কোনও রকম উদ্বেগ হচ্ছে না। চুটিয়ে ছুটি উপভোগ করছি।’’
বেড়াতে গিয়ে নিজে সতর্ক থাকলেও সেখানকার মানুষ কী করছেন, সেটাও জরুরি। তাই একটা বাড়তি দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। কী করে নিজেদের নিরাপদ রাখছেন মানুষ? রায়নার কথায়, ‘‘স্যানিটাইজিং স্প্রে সঙ্গে রাখছি। প্রথমবার নিজেদের বিছানার চাদরও নিয়ে গিয়েছিলাম। পাহাড়ে গিয়ে দেখেছি ওখানকার অনেক মানুষ মাস্ক পরছেন না। তাঁদের ধারণা, এই রোগ শহরেই বেশি। তাঁদের জায়গাটা নিরাপদ। সরকার বিনা কারণে গত বছর দীর্ঘ লকডাউন করে তাঁদের ব্যাবসার ক্ষতি করে দিয়েছে।’’ প্রতীক অবশ্য অন্য কথা বললেন। তাঁর মতে, ‘‘এখন দার্জিলিংয়ে খুব ভিড় নেই। স্থানীয় লোকেরা বেশির ভাগই কোভিড-বিধি মেনে চলছেন। এখানকার পর্যটনের যে বিখ্যাত জায়গাগুলো রয়েছে, সেগুলোয় খুবই কড়াকড়ি। মাস্ক বা স্যানিটাইজার ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।’’
বেড়াতে যেতে কার না ভাল লাগে? কিন্তু অতিমারিতে বেড়াতে যাওয়ার একটি বাড়তি উদ্বেগ— ফেরা। হঠাৎ যদি সব পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে বাড়ি ফেরার উপায় কী? এই ভেবেও অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। রেলে কর্মরত সুব্রত বিশ্বাসের ছেলে জানুয়ারি মাসে দেশে এসেছিলেন আমেরিকা থেকে। ফেরার সময় এক প্রকার জোরাজুরি করেই বাবা-মাকে নিজের কাছে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম বিদেশ সফর, অথচ অতিমারির পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা এত বেশি, যে প্রথমে তাঁরা যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। এখন অবশ্য আনন্দ করেই আমেরিকা ঘুরছেন। কিন্তু মার্কিন সরকার সদ্য নাগরিকদের উপদেশ দিয়েছেন, প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গেলেও এখন ভারত-সফরে না যেতে। তাই দেশে ফেরা নিয়ে সামান্য উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তাঁদের। সুব্রতবাবু বললেন, ‘‘এখানে ঘুরতে কোনও সমস্যা হয়নি। রেস্তোরাঁ, শপিং মল— সব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কঠোরভাবে। লোক বেশি হয়ে গেলে বাকিদের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সকলেই মাস্ক পরছেন। তাই নিশ্চিন্তে বেড়ানো যাচ্ছে। কিন্তু ফেরা নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় রয়েছি। দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতা ফিরতে হবে। সেই সময় আরও বেশি করে সতর্ক হতে হবে।’’
ডাক্তারদের উপদেশ অনুযায়ী এখন এক-দু’মাস প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরনো কাম্য নয়। অথচ মানুষ ঘরবন্দি থেকে ক্লান্ত। হয়তো সেই কারণেই তারকাদের মতো বেরিয়ে পড়ছেন তাঁরাও।