লেডিজ কামরার সহযাত্রী বান্ধবীটির সঙ্গে গল্পে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল এই প্রশ্নটাই। বছর দুয়েক আগে ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’-র সূত্রে ওই মহিলার সঙ্গে ভাব জমে যায় রাজ্য সরকারের পদস্থ আমলা আর এক গৃহকর্ত্রীর। রোজ ব্যান্ডেল থেকে কলকাতার ট্রেনে উঠতেই দেখা হয় গড়িয়াহাটের এক দোকানের কর্মী, ওই মহিলার সঙ্গে।
ফাইল চিত্র।
কী করেন তো বুঝলাম, ঘুমোন কতটুকু?
লেডিজ কামরার সহযাত্রী বান্ধবীটির সঙ্গে গল্পে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল এই প্রশ্নটাই। বছর দুয়েক আগে ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’-র সূত্রে ওই মহিলার সঙ্গে ভাব জমে যায় রাজ্য সরকারের পদস্থ আমলা আর এক গৃহকর্ত্রীর। রোজ ব্যান্ডেল থেকে কলকাতার ট্রেনে উঠতেই দেখা হয় গড়িয়াহাটের এক দোকানের কর্মী, ওই মহিলার সঙ্গে। তাঁর বাড়ি বর্ধমান থেকেও অনেকটা ভিতরে। ভোর চারটেয় উঠে বর, ছেলেমেয়ের জন্য রান্না করতে হয়। কলকাতা থেকে ফিরতে রাত ন’টা। তার পরে রাতের রান্না। সবাইকে খাইয়ে বাসন ধুয়ে রাত ১২টায় ছুটি।
অনেকটা সেই জয় গোস্বামীর কবিতার রেলগাড়ির চালের বস্তাধারিণীদের কথা, ‘ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি রাত থাকতে ওঠে’! রাজ্যের ডেপুটি শ্রম কমিশনার তানিয়া দত্ত বলছিলেন, “শহর, মফস্সলে পুরুষ-মহিলাদের কাজের বহর খেয়াল করলেই বোঝা যায়, মেয়েরা ঘুমের সুযোগ অনেক কম পান।”
আজ, শুক্রবার ১৮ মার্চ বিশ্ব ঘুম দিবস। ওয়র্ল্ড স্লিপ সোসাইটির সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, বেশিরভাগ মহিলাই পুরুষদের তুলনায় রাতে কম ঘুমোন। ৮০০১ জনের মধ্যে এমন একটি সমীক্ষা চালানো হয়। দক্ষিণবঙ্গে গৃহশ্রমিকদের নিয়ে কর্মরত একটি সংগঠনের কর্মীদেরও অভিজ্ঞতা, মেয়েদের ঘুম বড়জোর তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আকাশে চাঁদ থাকতে টাইমের কলের জল ধরা থেকে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর দায় থেকেই মেয়েদের আগে বিছানা ছাড়তে হয়।
ইএনটি এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া সার্জন উত্তম আগরওয়াল বলছেন, “দুই-তৃতীয়াংশ মহিলাই পর্যাপ্ত ঘুমের সময় পান না।’’ মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য, ঋতুচক্র বা হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গেও ঘুমের বিষয়টি জড়িত বলে তিনি জানান। স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দাসের মতে, “দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুমোলে ডায়াবিটিস এবং হৃদ্রোগের আশঙ্কা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘুমের অভাবে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ১২ শতাংশ বেড়ে যায়।”
গৃহশ্রমিকদের মধ্যে কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমাজকর্মী শুভ্রা সরকার, কাকলি দেব-রা বলছেন, হাতে গোনা পুরুষ বাড়ির কাজে মেয়েদের সহযোগিতা করেন। বাড়িতে, বাইরে কাজের চাপই মেয়েদের ঘুম চুরির একটা প্রধান কারণ। একই মত শ্রম দফতরের আধিকারিক তানিয়ারও। তিনি বলছেন, “শিক্ষিত পরিবারেও কর্মরত মেয়েদের অনেকের মধ্যে বাড়ির কাজ বা সন্তানের
দায়দায়িত্বে ফাঁক থাকলে গ্লানি কাজ করে। বাড়তি কাজ করে তাঁরা ‘সুপারউওম্যান’ হতে চান। তাতেও ঘুমের দফা রফা হচ্ছে।”