সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন মায়েরা। ছবি: সংগৃহীত
বহু মানুষের জীবনে দুশ্চিন্তা এবং দুঃসময় ডেকে এনেছে অতিমারি। আবার গত এক বছরে এই দুঃসময় আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছেও। পরিবারের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। আত্মনির্ভর হতে শিখিয়েছে। স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হতে শিখিয়েছে। তেমনই নতুন মায়েদের সুযোগ করে দিয়েছে সন্তানদের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটানোর। কারণ বেশির ভাগ মানুষই এখন বাড়ি থেকে কাজ করছেন।
দুধের শিশুকে ফেলে কাজে যেতে কোনও মায়েরই মন চায় না। তা-ও মন শক্ত করে কেরিয়ারের কথা ভেবে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হতে না হতেই কাজ শুরু করে দেন মায়েরা। কাজের চাপে সন্তানকে ছেড়ে থাকতে অপরাধবোধ তৈরি হয় তাঁদের। আবার সন্তানের দরকার-অদরকারে যদি কাজের অবহেলা হয়, সেটা নিয়েও স্বস্তি পান না তাঁরা। কিন্তু অতিমারি সে সমস্যার অনেকটা সমাধান করে দিয়েছে এই মায়েদের।
একটি বাচ্চাদের স্কুলে পড়ান পৌলমী। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ করে যখন তিনি কাজে ফিরেছিলেন, তখন তাঁর ছেলের বয়স ছিল মাত্র সাড়ে তিন মাস। গত বছর লকডাউন হওয়ায় ছেলের সঙ্গে একটা গোটা বছর থাকতে পেরেছিলেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা ছেলেকে দেখতে পাওয়া আর অফিস থেকে ফিরে কয়েক ঘণ্টার জন্য দেখতে পাওয়া তো এক নয়। এই একটা বছর বাড়তি সময় পেলাম, এতে আমার ছেলের জন্য খুব ভাল হয়েছে। আগে নতুন পরিবেশে গেলেই কান্নাকাটি করত। এখন অনেকটা সময় মা কে পেয়ে ওর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, সেটা বুঝতে পারি। আর আমার জন্য তো ভাল হয়েছেই। ছেলের সঙ্গে মনের যোগ তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’
অবশ্য বাড়ি বসে কাজ আর বাচ্চা সামলানো, দুই-ই একসঙ্গে করা একেবারেই সহজ নয়। সদ্য মা হয়েছেন প্রেরণা। ছেলের বয়স ৫০ দিন। একটি বেসরকারি স্কুলে বাচ্চাদের ইংরেজি পড়ান প্রেরণা। তিনি বললেন, ‘‘একমাত্র যাতায়াতের সময়টুকু বাদ দিয়ে কতখানি বাড়তি সময় আর পাব বলুন? আমার পেশা এমন যে ল্যাপটপের সামনে হাজির থাকতেই হবে। বাচ্চা কাঁদছে বলে তো আর ল্যাপটপের মাইক্রোফোন মিউট করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে পারব না।’’ পেশায় সাংবাদিক নিবেদিতা। তাঁর ছেলে দু’বছরের। ‘স্টোরি’ লিখতে লিখতে ডায়পার বদলানোর ঝক্কি তিনি সামলেছিলেন গত বছর। বললেন, ‘‘ সকাল ৯টায় কাজে বসি। তার আগে ছেলেকে স্নান করানো, খাওয়ানো, সারতে হয়। দুপুরে আবার কাজের ফাঁকে খাওয়াতে হয়। সন্ধেবেলা কাজ শেষ করেই ছেলেকে নিয়ে বসতে হয়। সত্যি মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠি। তবে কী বলুন তো, ছেলেকে যে সারাক্ষণ দেখতে পাই, তাতেই আমার তৃপ্তি।’’
পৌলমী-নিবেদিতার মতো অনেক মায়েরাই রয়েছেন। যাঁরা গত বছর অতিমারির হাজার সমস্যার মধ্যেও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে খুশি। আবার অনেকের কাছে করোনার আতঙ্কটাই এত বেশি যে, এই সময়টা কাটিয়ে উঠতে চান। প্রায় এক বছর বয়স অলঙ্কারের ছেলের। সরকারি স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষিকা তিনি। গত বছর লকডাউনের সময়ই ছিল তাঁর মাতৃত্বকালীন ছুটি। ঘটনাক্রমে ৬ মাসের বদলে আরও বাড়তি ৩ মাস তিনি সময় কাটাতে পেরেছিলেন ছেলের সঙ্গে। একদম ছোট শিশুর বেড়ে ওঠে দেখতে কার না ভাল লাগে। অলঙ্কারেরও ভাল লেগেছিল। কিন্তু তিনি বললেন, ‘‘এই কোভিডের জন্য আমি সব সময়ই আতঙ্কে থাকি। ছেলে কাছে থাকুক বা দূরে। সব সময় চিন্তা হয় বাড়িতে কে এলে, কে গেল। ছেলের সংক্রমণের কোনও ঝুঁকি রয়েছে কি না। ছুটি পেয়ে ছেলের সঙ্গে ছিলাম, সেটা সুবিধার। এখনও আমাদের গরমের ছুটি আগে পড়ে গেল, তাই বাড়তি সময় পাচ্ছি। কিন্তু তা-ও বলব, এমন আতঙ্কের ছুটি আমার চাই না।’’