Pets

Pet: অটুট বন্ধন

পোষ্যের থেকে কিছু রোগ ছড়াতে পারে শিশুদের মধ্যে। তাই জরুরি কিছু সাবধানতা অবলম্বন

Advertisement

রূপকিনী সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৫৫
Share:

চার দেওয়ালের বাড়িটা ‘ঘর’ হয়ে ওঠে ওদেরই ভালবাসার স্পর্শে। ওদের খেলা, দুষ্টুমি, বন্ধুত্ব দেখতে-দেখতেই কেটে যায় সময়। এই ‘ওরা’ হল বাড়ির দু’পেয়ে আর খুদে চারপেয়ে সদস্যরা। অর্থাৎ আপনার সন্তান ও পোষ্য। একটি শিশুর বেড়ে ওঠায় পোষ্যের অনেক বড় ভূমিকা থাকতে পারে। ছোটদের মানসিক বিকাশের পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতাতেও রয়েছে পোষ্যের প্রভাব। তবে দু’জনেই যদি সুস্থ হয়, আর কিছু সাবধানতা মেনে চলা যায়, তা হলে সেই আশঙ্কাও থাকবে না।

Advertisement

জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধুত্ব

একাকিত্ব দূর করে: ছোট পরিবারে এখন বেশির ভাগ শিশুরই খেলার সঙ্গী নেই। সেই অভাব পূরণ করে পোষ্য। পোষ্যরাও প্রাণ দিয়ে ভালবাসে তাদের ছোট বন্ধুদের।

Advertisement

মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ: পোষ্যের উপস্থিতি সব সময়ই আনন্দদায়ক, তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে ছোটদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও। ছোটদের মধ্যেও আজকাল ডিপ্রেশন, অ্যাংজ়াইটি বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, অবসাদের সমস্যা কাটিয়ে তুলতে পারে পোষ্যের সাহচর্য।

দায়িত্ব নিতে শেখায়: বাড়িতে একটি পোষ্য থাকলে, বিশেষত তার দেখাশোনার ভার ওদের উপর দিলে, শিশুদের মধ্যে ছোট থেকেই দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। এই দায়িত্ববোধ থেকে অন্য মানুষের প্রতি সহমর্মিতাও খুব সহজে তৈরি হয় ওদের মধ্যে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: শুধু মানসিক নয়, শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রেও যে পোষ্যের ভূমিকা রয়েছে, তা জানেন না অনেকেই। পোষ্যের সঙ্গে বড় হওয়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য শিশুদের চেয়ে অনেক উন্নত হয়। এই তথ্য প্রমাণিত বহু গবেষণায়। পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “কারেন্ট ওপিনিয়ন ইন অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি নামক একটি জার্নালে বলা হয়েছে, জন্মের প্রথম এক-দু’বছর বয়স থেকেই যে শিশুরা কুকুর, বেড়ালের মতো পোষ্যের সঙ্গে থাকে, তাদের ভবিষ্যতে গুরুতর অ্যালার্জি বা অসুখের আশঙ্কা অন্য বাচ্চাদের তুলনায় কম।”

রোগ ও তার সাবধানতা

কুকুর: কিছু নিয়ম মেনে চললেই পোষা কুকুর ও ছোটরা কী ভাবে সম্পূর্ণ নিরাপদে একসঙ্গে থাকতে পারে, জানাচ্ছেন অভিরূপবাবু। নিজের সামর্থ্য বুঝে কুকুর আনুন। ছোট ফ্ল্যাট বা পরিবেশের উপযুক্ত নয়, এমন কুকুর নিয়ে এলে সেই পোষ্যটিও ভাল থাকবে না। ফলে বড় হলে তার আক্রমণাত্মক স্বভাব তৈরি হবে, যা শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর। তাই এমন পোষ্য আনুন, যাকে আপনি ভাল রাখতে পারবেন। কুকুরের থেকে মানুষের যে অসুখ হতে পারে সেগুলি হল লেপ্টোস্পাইরোসিস, রেবিস বা জলাতঙ্ক এবং কিছু কৃমি। তবে পশু চিকিৎসকের কাছ থেকে কুকুরটির টিকাকরণ করা থাকলে এবং কৃমির ওষুধ খাওয়ালে এই আশঙ্কা সম্পূর্ণ এড়ানো যাবে। বিশেষত বেশি রোমযুক্ত কুকুরদের নিয়মিত গ্রুমিং করাতে হবে। পোষ্যের রোম ও ত্বক পরিষ্কার থাকলে তার থেকে শিশুটির কোনও সংক্রমণের ভয় থাকবে না। কুকুরের নখ নিয়মিত কাটা না হলে বাচ্চাদের মারাত্মক আঁচড় লাগতে পারে। তাই নিয়মিত নখ ট্রিমিং করতে হবে। শেষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ট্রেনিং। বিশেষত রটওয়েলার, চাউ চাউ, ডোবারম্যানের মতো কিছু জাতের কুকুর বড় হয়ে অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যেতে পারে। তবে ছোট থেকেই পোষ্যকে ট্রেনিং দিলে ওরা হয়ে উঠবে আপনার সন্তানের প্রিয় বন্ধু ও বডিগার্ড।

বেড়াল: ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার নামে এক ধরনের ব্যাক্টিরিয়াল অসুখ হতে পারে বেড়ালের। বেড়ালটির শরীরে তার কোনও লক্ষণ না-ও থাকতে পারে অথবা ডায়রিয়ায় ভুগতে পারে। এই ব্যাক্টিরিয়া বেড়ালের বিষ্ঠা থেকে পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের আক্রান্ত করতে পারে। তাই বেড়ালটিকে নিয়মিত পশু চিকিৎসকের পরামর্শে সুস্থ রাখার পাশাপাশি তার প্রস্রাব-বিষ্ঠা সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এ ছাড়া রিংওয়র্ম, টেপওয়র্মের মতো কিছু রোগে বেড়াল আক্রান্ত হতে পারে, যা মানুষের মধ্যে ছড়ায়। তবে বেড়ালটি সুস্থ থাকলে এই চিন্তা নেই। কুকুরের মতো বেড়ালের নখও নিয়মিত কাটতে হবে, না হলে বাচ্চাদের আঘাত লাগতে পারে। বেড়ালের রোম থেকে সদ্যোজাত শিশুর ইনফেকশন হতে পারে, তাই বেড়ালটিকে নিয়মিত গ্রুমিং করা প্রয়োজন। যদিও বেড়াল খুবই পরিষ্কার প্রাণী, তারা নিজেরাই নিজের রোম পরিষ্কার রাখে।

খরগোশ, গিনিপিগ: ওদের মূল খাবার খড় ও দূর্বা ঘাস। এই খড়ের রোঁয়া থেকে কোনও কোনও শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জি হতে পারে খরগোশের রোম থেকেও। তাই উন্নত মানের খড় দিন এবং খরগোশটিকে নিয়মিত গ্রুমিং করান। খরগোশ-গিনিপিগদের দাঁত খুব ধারালো, তা থেকে বাচ্চাদের আঁচড় লেগে যেতে পারে। যদিও এর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় নেই। খরগোশদের ‘স্নাফলস’ নামে ব্যাক্টিরিয়াজনিত নিঃশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। এর থেকে বাচ্চাদের হুপিং কাশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রিংওয়র্ম ইনফেকশনও ছড়াতে পারে ওদের থেকে। তবে নিয়ম একই, পোষ্যটি চিকিৎসকের কথা মতো সুস্থ থাকলে, শিশুও সুস্থ থাকবে।

পাখি: পাখি থেকে অসুখ ছড়ানোর ভয় খুব কম। তবে সিট্টাকোসিস নামে একটি ব্যাক্টিরিয়াজনিত রোগ থেকে সাবধান থাকতে হবে। সংক্রমিত পাখিটির বিষ্ঠা বা নিঃসৃত তরলে এই ব্যাক্টিরিয়া থাকে। তা নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে। তা থেকে কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা হতে পারে। তবে পাখির খাঁচা, খাবারের বাটি নিয়মিত পরিষ্কার করলে ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে পাখিটি সুস্থ থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement