— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
যমজ সন্তান মানেই কি ঝুঁকি? দু’টি সন্তান গর্ভে বহন করলেই কি হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি? চিকিৎসকেরা বলছেন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই, কিন্তু সাবধানতা ও মনিটরিং অবশ্যই জরুরি যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে। একটির তুলনায় দু’টি সন্তান বহনের ঝুঁকি প্রায় আড়াই-তিন শতাংশ বেশি। বেশির ভাগ সময়েই সুস্থ, স্বাভাবিক ভাবেই দুই সন্তানের জন্ম দেন মায়েরা। তবে গর্ভে দু’জন সন্তান এলে তার সম্ভাব্য সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন।
আইভিএফ ও টুইনস
সারা পৃথিবী জুড়েই এখন যমজ সন্তান হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। তার অন্যতম কারণ, মায়েদের বেশি বয়সে সন্তানধারণ এবং আইভিএফ-এর সাহায্যে সন্তানের জন্ম দেওয়া। আইভিএফ পদ্ধতিতে অনেক সময়েই একটির বেশি ভ্রূণ দেওয়া হয়। অনেক সময়ে একটি দেওয়া হলেও ভিতরে গিয়ে তা বিভাজিত হয়ে দু’টি বা তিনটিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাই সারা পৃথিবীতেই এখন আইভিএফ সেন্টারগুলির কাছে একাধিক ভ্রূণ না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা সবটাই এড়ানো সম্ভব। ট্রিপলেটের ক্ষেত্রেও এখন চিকিৎসকেরা একটি ভ্রূণ কমিয়ে টুইন রাখার পরামর্শ দেন মা-বাবাকে। তবে গর্ভাবস্থায় টুইনের সমস্যা দেখা দিলে কী করা হবে, সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেন মা-বাবাই।
যমজের সম্ভাব্য সমস্যা
যমজ সন্তান গর্ভে এলে কী কী জটিলতা তৈরি হতে পারে? ইনস্টিটিউট অব ফিটাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. কুশাগ্রধি ঘোষ সাধারণ ভাবে কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরলেন, যেমন—
অনেক সময়েই দেখা যায়, যমজের মধ্যে একটি ভ্রূণের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, অন্যটি ঠিক আছে। কখন সেটা হবে বা হবে না, তা তাদের প্লাসেন্টা ও স্যাক এক কিনা, তার উপরে নির্ভর করে। আইডেন্টিক্যাল টুইনের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হলে দু’টি ভ্রূণেই তা দেখা দেবে। কারণ এদের প্লাসেন্টা এক, ব্লাড কানেকশন রয়েছে... ফলে একজনের সমস্যা অন্যটিতেও সঞ্চারিত হবে।
আবার নন আইডেন্টিক্যাল টুইনের ক্ষেত্রে প্লাসেন্টা আলাদা। কাজেই একজনের সমস্যা অন্যটিতে সঞ্চারিত না-ও হতে পারে। সমস্যা রয়েছে এমন ভ্রূণটিকে নষ্ট করে দেওয়া হলে অন্যটি সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
সাধারণ গর্ভস্থ টুইনের যে যে সমস্যা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল সিলেক্টিভ গ্রোথ রেস্ট্রিকশন। অর্থাৎ একটির বাড়বৃদ্ধি ঠিকমতো এগোচ্ছে, অন্যটির হচ্ছে না। একটি ছোট হয়ে যাচ্ছে, অন্যটি বাড়ছে।
আর একটি সমস্যা হল, টুইন টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম। অর্থাৎ একটি ভ্রূণ থেকে অন্যটিতে ব্লাড চলে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একটি ভ্রূণ রক্ত দিতে দিতে ছোট হয়ে যায়। আর যে পাচ্ছে, সে পেতে পেতে বড় হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে দু’টি সন্তানেরই ঝুঁকি থেকে যায়।
সমস্যার সমাধান কী?
যখন একটি ভ্রূণকে নষ্ট করা ও অন্যটিকে বাড়তে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন সমস্যাযুক্ত ভ্রূণটির হার্টে ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে হার্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যটি বাড়তে বাড়তে টার্ম অবধি পৌঁছয়।
আবার দু’টি ভ্রূণের মধ্যকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য লেসার বা রেডিয়োফ্রিকোয়েন্সির সাহায্য নেওয়া হয়। সংযোগকারী রক্তজালিকাগুলিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে।
স্বাভাবিক প্রসব, নাকি সি-সেকশন?
ডা. ঘোষের কথায়, ‘‘টুইনের ক্ষেত্রে দশ শতাংশের মতো মিসক্যারেজের সম্ভাবনা থাকে। আমরা চেষ্টা করি, যাতে সুস্থ ভাবে দুটো বাচ্চাকেই আনা যায়। তা না হলে অন্তত একটা বাচ্চা যেন মাকে দেওয়া যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টার্মের কাছাকাছি এসে গেলে একটু আগেই ডেলিভারি করিয়ে দেওয়া হয়। টুইনের ক্ষেত্রে কেউ যদি নরমাল ডেলিভারি চান, নিশ্চয়ই করাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রথম বাচ্চাটির মাথা নীচের দিকে থাকতে হবে। ঝুঁকি থাকে দ্বিতীয় বাচ্চাটির ক্ষেত্রে। সেটা এড়ানোর জন্য ইদানীং চিকিৎসকেরা এবং মা-বাবারাও সি-সেকশনই বেছে নেন যমজের ক্ষেত্রে।’’
যত্ন ও সাবধানতা
গাইনিকোলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় যমজ সন্তানধারণের কিছু প্রাথমিক যত্ন ও সতর্কতার বিষয়ে মনে করিয়ে দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের থেকে যেহেতু দু’জন সন্তান পুষ্টি পাচ্ছে, তাই সেই মতো খাওয়াদাওয়া করতে হবে। না হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে, বাচ্চার গ্রোথও ভাল হবে না। দ্বিতীয়ত, টুইনের ক্ষেত্রে আমরা সব সময়েই খুব ক্লোজলি মনিটরিং করি। ২৮ সপ্তাহ পর থেকে দু’সপ্তাহ অন্তর বাচ্চার গ্রোথ স্ক্যান, চারপাশের জল আর ডপলার ফ্লো ঠিক আছে কিনা দেখি। কিছু গন্ডগোল ধরা পড়লেই ব্যবস্থা নিতে হয় সঙ্গে সঙ্গে।’’
গর্ভে দু’টি সন্তান, তার চারপাশের জলের থলি নিয়ে ২৮ সপ্তাহের পর থেকে মায়ের নড়াচড়া করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই এই সময়ে যথাসম্ভব বিশ্রামে থাকতে বলেন চিকিৎসকেরা। যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে পোস্টপার্টাম এক্সারসাইজ়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ, জানালেন ডা. চট্টোপাধ্যায়। অ্যাবডমিনাল পেশির জোর বাড়ানো দরকার, দু’টি সন্তান বহন করার জন্য।
প্রাথমিক সাবধানতা অবলম্বন করলে সুস্থ ভাবেই দু’টি সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব। তাই একটি বৃন্তে দু’টি কুঁড়ি একসঙ্গে এলে নির্ভয়ে ফুটতে দিন তাদের।