প্রতীকী ছবি।
কি ছু দিন আগেও লেপের ওমে সকালের ঘুম যেন ভাঙতেই চাইত না। তার পর হঠাৎই গরম এসে টোকা দিল দরজায়! সিজ়ন চেঞ্জে শীত-গ্রীষ্মের এই টানাপড়েনে নাজেহাল অবস্থা। ফ্যানের সুইচ যেন যুদ্ধক্ষেত্র! এমন সময়ে আবহাওয়া বদলের প্রভাব শরীরে পড়বেই। মরসুম বদলে কেমন হবে ত্বকের যত্ন? কোন পোশাক হবে আরামদায়ক আর কেমনই বা হবে সুস্থ থাকার ডায়েট?
যত্নে থাকুক কোমল ত্বক
দুপুরে কড়া রোদ তো রাতের হাওয়ায় ঠান্ডা আমেজ। সকালে ক্রিম-ময়শ্চারাইজ়ার লাগালে ঘাম অনিবার্য। কিন্তু ত্বকের শুষ্কতা বা ঠোঁট ফাটার সমস্যাও রয়ে গিয়েছে কিছুটা। তা হলে উপায়? রূপবিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনসের কথায়, ‘‘মরসুমের সঙ্গে-সঙ্গে ত্বকের চাহিদা পালটে যায়, ফলে রূপচর্চার ধরন হবে আলাদা। বাইরে বেরোনোর আগে চার ধাপে ত্বকের পরিচর্যা করতে হবে। প্রথমে মুখে ক্লেনজ়ার লাগান। এর পর ব্যবহার করুন ওয়াটারবেসড মিস্ট স্প্রে বা অ্যালো ভেরা স্প্রে, যাতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। এর পরের ধাপ অ্যান্টি এজিং সেরাম। যদি সকালে বাইরে বেরোতে হয়, তা হলে এসপিএফ-যুক্ত ময়শ্চারাইজ়ারও লাগাতে হবে।’’ দিনের শেষে বাড়ি ফিরে ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা মাস্ট। যেহেতু ত্বক এখনও কিছুটা শুষ্ক থেকে যাচ্ছে, তাই ডিনারের আগে নাইট ক্রিম বা হালকা ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করুন। সকালে ত্বক কোমল থাকবে। এ সময়ে ব্রণর সমস্যাও বাড়ে। ত্বকের যত্নে বিশেষ ভাবে উপকারী অ্যালো ভেরা জেল। এটি ত্বক ঠান্ডা রাখে, আবার ত্বকের আর্দ্রতাও ধরে রাখে। ব্যবহার করতে পারেন হালকা, রাসায়নিক-মুক্ত টোনার এবং সেরামও। ঠোঁট ফাটার সমস্যা থাকলে ঠোঁটে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান।
পোশাকে আরাম
এখনও যেহেতু রোদের তেজ খুব প্রখর নয়, তাই স্লিভলেস পরতে পারেন। রোদে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার ভয় নেই, আবার আরামদায়কও হবে। তবে রাতের দিকে বাইরে থাকতে হলে সঙ্গে রাখুন হালকা স্কার্ফ বা সুতির জ্যাকেট। ঠান্ডা লাগলে পরে নিতে পারবেন, আবার স্টাইল মাটি হবে না একফোঁটাও! এ সময়ের সবচেয়ে আরামদায়ক ফ্যাব্রিক সুতি, লিনেন, সিল্ক, রেয়ন। ডেনিমের ড্রেস, স্কার্ট, প্যান্টসও পরতে পারেন।
ফ্যাশন ডিজ়াইনার অভিষেক দত্ত বলছেন, ‘‘যেহেতু গরম পড়তে শুরু করে দিয়েছে, তাই লিনেন ও সুতির পোশাকই এখন আদর্শ। হালকা সিল্ক বা কটন-সিল্ক ব্লেন্ডও পরতে পারেন। বিকেলের দিকে ড্রেসের সঙ্গে লেয়ার আপ করে পরুন পাতলা ফ্যাব্রিকের জ্যাকেট। এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন ড্রেস, জ্যাকেট বা টপের অভিনব স্লিভ ও কাট নিয়ে। ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে পরুন সামার জ্যাকেট। ছেলেরাও লিনেনের সামার জ্যাকেট পরতে পারেন। এই মরসুমে উজ্জ্বল রংই রয়েছে ট্রেন্ডে।’’
নজর দিন ডায়েটে
সিজ়ন চেঞ্জে নানারকম অসুখবিসুখ লেগেই থাকে। তাই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নজর দিন ডায়েটে। শীতকালে মাছ-মাংস, তেল-মশলাযুক্ত খাবার একটু বেশি খাওয়া হয়। আবার গরমে যেন খাওয়ার রুচিটাই চলে যায়। ফলে দুইয়ের মাঝের এ সময়ে ব্যালান্স খুব জরুরি। বাঙালির রসনায় চিরকালই সমাদৃত তেতো ও টক। শুক্তো হোক বা চাটনি, রোজকার পাতে থাকতেই পারে তারা। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘যেহেতু গরম পড়ছে আর ঠান্ডাও রয়েছে, তাই শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি খুব দরকার। ভাতের পাতে পাতিলেবু খান। সকালে চায়ে বা বিকেলের শরবতেও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের জোগানও রাখতে হবে খাবারে। মরসুমি ফল আর আনাজপাতি খেতে হবে।’’ গরমে শরীর ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করাটাও জরুরি। ঠান্ডা জল বা পানীয়, আইসক্রিম এ সময়ে খাওয়া চলবে না। রোজকার খাবারে ঘুরিয়েফিরিয়ে তরমুজ, শসা, জামরুলের মতো ফল আর লাউ রাখতে পারেন আনাজের মধ্যে। এ ধরনের আনাজ ও ফলে জলীয় উপাদান বেশি থাকে। তা শরীর ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক। এর সঙ্গেই রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে জলও খেতে হবে। নানা রকম আনাজ দিয়ে মাছের ঝোল বা মাংসের স্টু তৈরি করেও খেতে পারেন। খাদ্যতালিকা থেকে পেঁয়াজ বাদ দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তা ভেজে না খেয়ে কাঁচা খান।
সিজ়ন চেঞ্জে সন্তানের যত্ন
শীতের শেষে এবং গরমের শুরুতে, মরসুম বদলের এ সময়েই ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি, জ্বর হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। বিশেষ করে বাচ্চাদের তো এ সময়টায় হুট করে ঠান্ডা লেগে যায়। এ ছাড়া যাঁদের অ্যাজ়মা রয়েছে বা রেসপিরেটরি ইনফেকশনের ধাত রয়েছে, তাঁদের সমস্যাও বেড়ে যায় সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে। ঠান্ডা-গরমের আচমকা তারতম্যের ফলেই এত সহজে ঠান্ডা লেগে যায়। বাড়ির খুদে সদস্যটি হয়তো খেলে এসেই ঢকঢক করে খানিকটা ঠান্ডা জল খেয়ে নিল বা জোরে ফ্যান চালিয়ে দিল। সেটা না করে বরং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তার পর ফ্যান চালাতে বলুন। হালকা সুতির পোশাক পরান, যাতে শরীরে ঘাম না বসে। ঘেমে গেলে শরীরের সঙ্গে চুলও ভাল করে মুছিয়ে দেবেন। এসিতে থাকলেও তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম করবেন না। সিজ়ন চেঞ্জের সময়ে ডায়রিয়া বা পেটের অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। তাই বাচ্চাদের খাবার দিন বুঝে, সঙ্গে পরিস্রুত জল। বাচ্চাদের ফোটানো জলও দিতে পারেন।
গাছের যত্ন নিন
এত দিন অবধি গাছে রোজ একবার বা দু’দিনে একবার জল দিলেও অসুবিধে ছিল না। তবে এখন কিন্তু গাছের মাটিও শুকোবে তাড়াতাড়ি। তাই গাছে সকাল ৮টার আগে ও বিকেলে ৫টার পরে জল দিতে পারেন। আর গাছের মাটি খুব গরম থাকলে তা আগে ঠান্ডা হতে দিন। তার পরে জল দিন। গরম মাটিতে জল দেবেন না। আর এটা কিন্তু গরমের ফুল, ফল ও আনাজের গাছ লাগানোর সময়। বেল, জুঁইয়ের মতো সুগন্ধি ফুলের গাছ লাগাতে পারেন। আবার পাতিলেবু, লঙ্কা, উচ্ছে, কুমড়ো, লাউয়ের গাছও করতে পারেন নিজের বারান্দায় বা ছাদে।
মরসুম বদলের সময়ে নিজের অভ্যেসও একটুআধটু পাল্টে শরীরকে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে। তা হলেই দেখবেন আর সমস্যা হচ্ছে না। সুস্থও থাকবেন, পরিবর্তিত মরসুমের আনন্দও উপভোগ করতে পারবেন।
মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, ঐশ্বর্য সেন, মুনমুন রায়, হিয়া মুখোপাধ্যায়, কাব্য বন্দ্যোপাধ্যায়
মেকআপ: ভরত বাল্মিকী (সুস্মিতা), চন্দ্রদীপ চক্রবর্তী (ঐশ্বর্য)
ছবি: শুভদীপ সামন্ত (সুস্মিতা), সৌরভ মুখোপাধ্যায় (ঐশ্বর্য)
পোশাক: প্যানজি সাহা,
স্যালাড ও ফুড পার্টনার: দ্য গেটঅ্যাওয়ে কাফে, গোলপার্ক
লোকেশন: ক্লাব ভর্দে ভিস্তা