ছবি: শুভদীপ সামন্ত (কবীর বেদী) ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
‘ডোন্ট লেট দ্য ওল্ড ম্যান ইন’... এই গানই কবীর বেদীর জীবনের মন্ত্র। কবীর মনে করেন, তাঁর শরীরের বয়স যা-ই হোক না কেন, মনের বয়স এখনও পঁচিশের গণ্ডিতে। আর মস্তিষ্কের বয়স রেখেছেন পঞ্চাশে। কারণ কবীরের মতে, মনে যুবক হলেও তাঁর মস্তিষ্ক পরিণত। আর নিজেকে সার্বিক ভাবে সুস্থ রাখার ব্যাপারেও বেশ সচেতন। বয়সের কাঁটা এগোতে থাকলেও মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকার কিছু পরামর্শ দিলেন তিনি।
পাওয়ার ওয়াকিং
‘‘আমি একেবারেই জিম পার্সন নই। হাঁটতে ভালবাসি। সকাল-বিকেল যখনই সময় পাই, হাঁটি। আর বিশ্বাস করি পাওয়ার ওয়াকিংয়ে। হাঁটার সময়ে হাতে হালকা ওজন নিয়ে হাঁটুন। জলের বোতল বা ব্যাগ রাখতে পারেন হাতে। অনেকেই মিনিট পনেরো-কুড়ি হেঁটে বসে পড়েন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আসল কাজ শুরু হয় ওই কুড়ি মিনিটের পর থেকেই। প্রথম কুড়ি মিনিট তো ওয়ার্ম-আপ পিরিয়ড। তাই হাঁটার সময়ে মনে রাখবেন, কুড়ি মিনিটের পর থেকেই কিন্তু হাঁটার ফল পাবেন,’’ হাসতে-হাসতে বললেন কবীর।
বয়স হয়ে গিয়েছে বলে ‘আর পারছি না’ বলে বসে পড়লে চলবে না। শরীর সচল রাখতে কিছু না কিছু করতেই হবে। কবীরের কথায়, ‘‘যোগব্যায়াম, হাঁটা, সাঁতার... কোনও না কোনও ব্যায়াম বেছে নিতে হবে। বয়স বাড়লে ফিট থাকা আরও জরুরি। এই প্রসঙ্গে একটা ছোট গল্প মনে পড়ে গেল। একবার গল্ফ কোর্সে ক্লিন্ট ইস্টউড, এক কান্ট্রি সিঙ্গারের সঙ্গে হাঁটছেন। সেই গায়ক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্লিন্ট, তুমি ৮৫ এখন। এই বয়সে সিনেমা পরিচালনা করছ, গল্ফ খেলছ। কী করে সম্ভব?’ ক্লিন্টের ছোট্ট জবাব, ‘ডোন্ট লেট দ্য ওল্ড ম্যান ইন।’ পরে এই লাইনটা থেকেই তৈরি হয় বিখ্যাত গান। আমিও সেটাই বলব, বয়সের লাগাম নিজের হাতে রাখতে হবে।’’ রোজ নিজের কাজ নিজেকেই সেরে ফেলতে হবে। তাতেও কিছুটা মুভমেন্ট হবে। আর বয়সজনিত কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলার নয়
শরীরের সঙ্গে মনের যত্ন নেওয়ার কথাও মনে করিয়ে দিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। অতিমারি পরবর্তী জীবনে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, কেউ প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। কিন্তু সব রকমের নেতিবাচক মনোভাব ও হতাশা বর্জন করে জীবনের দিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে বলে মনে করেন কবীর। ‘‘আমাদের দেশে ডিপ্রেশনের জন্য ছুটি পাওয়া যায় না। আবার এ-ও সত্যি যে, অবসাদ গ্রাস করলে দু’-একদিনের ছুটি নিয়ে তা সারানো সম্ভব নয়। তার জন্য দীর্ঘ দিনের চিকিৎসা দরকার। নিজেকে সময় দেওয়া জরুরি। দীর্ঘ দিন যদি কারও মেজাজ ভাল না থাকে, সব ব্যাপারেই যদি রাগ হয়, সেটা সাময়িক ভেবে অবহেলা করবেন না। সেটাই কিন্তু ডিপ্রেশনের সূচনা। তবে আমি তো চিকিৎসক নই। রোগের লক্ষণ বুঝে সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। দরকার হলে ওষুধ খেতে হবে।’’ তবে তাঁর পরামর্শ, মানসিক সুস্থতার জন্য শারীরচর্চা করা। নিয়মিত ব্যায়াম করলে বন্ধু হরমোনের নিঃসরণ মন ভাল রাখতে সাহায্য করে বলে মনে করেন তিনি।
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
ডায়েট
রোজ সকালে দুটো ডিম খান অভিনেতা। সন্ধে সাতটার পরে কার্বস গ্রহণ করা বন্ধ করতে বা কমানোর পরামর্শ দিলেন কবীর। তবে সব খাবার বন্ধ করে অতিরিক্ত ডায়েট রুটিন মেনে চলায় বিশ্বাসী নন তিনি। বরং সুষম আহার জরুরি বলে মনে করেন। তাই খাবারে কার্বস, প্রোটিন, ফ্যাট প্রয়োজন মতো বজায় রেখে বরং নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এতে শরীর প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিনের জোগান থেকে বঞ্চিত হবে না। আবার হজমশক্তি বাড়বে।
শরীর সুস্থ রাখতে ঘরে তৈরি একটি পথ্য নিয়মিত খান ফিটনেস সচেতন কবীর। হলুদ, গোলমরিচ, দারুচিনি, অলিভ অয়েল ও মধু দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করেন। তার ঘনত্ব হয় জ্যাম বা জেলির মতো। বললেন, ‘‘এই মিশ্রণ রুটি বা পাউরুটিতে লাগিয়ে খেতে পারেন। আবার এমনিও খেতে পারেন। ভাল স্বাদও হয়। চাইলে রসুন, আদাও মিশিয়ে নিতে পারেন। সকালে বা রাতে যে কোনও সময়েই এটা খাওয়া যায়।’’
এর সঙ্গে মনের খোরাক মানুষ যদি পান, তা হলেই তিনি পুরোপুরি সুস্থ থাকবেন। তাই দুঃখ-কষ্ট চেপে না রেখে প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন কবীর। বয়সজনিত স্ট্রেস, টেনশন দূরে সরিয়ে বরং প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করাই আসল, তাই বোধহয় আজও বয়স কব্জা করতে পারেনি তাঁকে।